এসো পা বাড়াই (২৯ তম পর্ব)

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:০৪ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:০০

"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"

LEAN IN                                                                 এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD         নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG                           অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি

আমি বিশ্বাস করি, কেন নারীরা পেছনে পড়ে আছে তার প্রকৃত মূলে রয়েছে এই পক্ষপাত প্রবণতা। নারীরা, নিজেরা নিজেদেরকে পেছনে আটকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও এটাই মূল কারণ। পুরুষদের জন্য পেশাগত সাফল্য আসে ইতিবাচক শক্তিবৃদ্ধি হয়ে, তাদের চলার পথের প্রতি পদক্ষেপে। নারীদের ক্ষেত্রে, যখন তাদের অর্জনকে স্বীকৃতি দেয়া হয়, এমনকি তখনও প্রায়ই তাদেরকে নেতিবাচকভাবে গণ্য করা হয়।

সাংবাদিক শঙ্কর বেদান্তাম (Shankar Vedantam) একবার কিছুসংখ্যক প্রথম নারী বিশ্ব নেতাদের অবমাননাকর বিবরণ এর একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “ইংল্যান্ডের মার্গারেট থ্যাচার (Margaret Thatcher) কে বলা হতো, ‘এটিলা মুরগী (Attila the Hen)’। ইসরায়েল এর প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, গোল্ডা মেইওর (Golda Meir) ছিলেন, ‘মন্ত্রিসভায় একমাত্র পুরুষ (the only man in the Cabinet)’। ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) কে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন (Richard Nixon) ডাকতেন, ‘বৃদ্ধ ডাইনী (the old witch)’ বলে এবং জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল (Angela Merkel) কে খেতাব দেয়া হয়েছে, ‘লৌহ নারী (the iron frau)’।”

এই চলমান নাটক আমি বার বার দেখেছি। যখন একজন নারী তার কাজে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করে, তখন নারী এবং পুরুষ উভয় সহকর্মীরাই মন্তব্য করবে, সে হয়তো অনেক কাজ সম্পন্ন করছে কিন্তু, “তার সহকর্মীদের পছন্দসই না”। সে সম্ভবত আরও, 'বেশি আগ্রাসী', 'দলীয়ভাবে কাজ করার মত না', 'কিছুটা রাজনৈতিক আচরণের', 'বিশ্বস্ত হতে পারে না', অথবা 'দুরূহ'। অন্তত,ঐ সবগুলোই আমার সম্পর্কে এবং আমি চিনি এমন প্রায় প্রত্যেক অগ্রজ নারী সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেন বিশ্ব জিজ্ঞাসা করছে, কেন আমরা কম পরিমাণে হাইডি (Heidi) এর মত এবং বেশী পরিমাণে হাওয়ার্ড (Howerd) এর মত হতে পারি না।

অধিকাংশ নারীরাই কখনোই হাইডি (Heidi)/হাওয়ার্ড (Howerd) এর গবেষণার কথা শুনে নাই। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই অর্জনের এই নেতিবাচক দিক সম্পর্কে কখনো বলেন না। তারপরও, সাফল্যের জন্য এই শাস্তি আমরা বুঝতে পারি। আমরা অবগত যে, নারী যখন জোরালোভাবে বা প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাজ করে তখন সে প্রত্যাশিত আচরণ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরে। একজন নারী যদি কাজ সম্পন্ন করার জন্য তীব্র চেষ্টা করে, সে যদি উঁচু স্তরের যোগ্যতাসম্পন্ন হয়, সে যদি অন্যকে খুশি করার চেয়ে কাজের ফলাফলের দিকে বেশী মনোযোগ দেয়, তাহলে সে পুরুষের মত কাজ করছে। এবং নারী যদি পুরুষের মত কাজ করে তবে, মানুষ তাকে অপছন্দ করে। এই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ফলেই, আমরা আমাদের পেশাদার লক্ষ্যগুলোর ধরণ পরিবর্তন করি। 

লেখক ক্যান ওলেটা (Ken Auletta) যখন নারীদের এই ঘটমান বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, তখন তিনি দ্যা নিউ ইয়র্কার (The New Yorker) এ এই বিষয়ের সারমর্ম করেছিলেন এভাবে, “স্ব-সন্দেহ আত্মরক্ষার একটি ধরণ হয়ে ওঠে (self-doubt becomes a form of self-defense)।” অপছন্দনীয় হওয়ার থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য, আমরা আমাদের সামর্থ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করি, এবং আমাদের অর্জনকে খাটো করে দেখি, বিশেষ করে অন্যদের উপস্থিতিতে। অন্যরা করার আগেই আমরা নিজেদেরকে খাটো করে রাখি।

(চলবে...)