গজরবিলের মানুষ
প্রকাশ | ২৮ আগস্ট ২০১৭, ০০:২৬
তোমার মাথায় উপরে গুলির শব্দ
তোমার মাথার ভেতরে বুকের শব্দ
আর বুকের ভেতরে?
তোমার বুকের ভেতর কিগো গজরবিলের মানুষ?
কেন তুমি ভেসে এলে এপারে?
আমারও যে নুন আনতে পান্তা ফুরাবার
সময়, মানুষ ঠাসা রয়েছে ঘরে।
বসো দেখি এইবার, উদোম গাটা শুকিয়ে নাও হাওয়ায়।
দু'মুঠো চাল ফুটিয়ে নিই বরং
এবেলা নাহয় খেয়ে নিলে এই দাওয়ায়।
বউটা তোমার ছুটে গেলো একদিকে,
আরেকদিকে বুড়ো বাবা মা
তুমি ছুটে গিয়ে ঝাঁপ দিলে নাফের বুকে
তোমার বুকে যুদ্ধের দামামা।
তোমার দুর্দশা বেঁচে খায় তোমারই জাত ভাই;
কাঁধে তোমারই পূর্বপুরুষের পাপ।
আগাছা হয়ে ছিলে নিজ গাঁয়ে তুমি,
ভুখা, নাঙ্গা, একাই নাফে দিতে হলো ঝাঁপ।
নিজের ভিটে, নিজের মাটি দেয় নাই
তোমারে কোনদিন কেউ,
একাই ভেসে আসো এপারে, পিছে পড়ে
থাকে সন্তান, পরিবার, বড় ভালোবাসার বউ।
তোমার সাথে ডুবে যায় হোয়াবেক, নাকফুরা,
গোয়াখালি আর লংগদু;
ভেসে যায় সিকদারপাড়া, কালিপ্রাণ, কুলাচিং,
বাহাইল্যা আর প্রাণপ্রিয় বধু।
পালিয়ে যায়, হারিয়ে যায়, দূর থেকে আরো দূরে
দেখা কি হবে এ জীবনে আর? হতেও পারে, যদি ধরে
থাকে প্রাণ, কোন একদিন নাফের এপারে বা ওপারে।
ডুবে ডুবে তুমি উগরে দাও যা কিছু বুকের ভিতর
পোড়া ভিটে, পোড়া আতঙ্ক আর পোড়া বুকের পাঁজর।
বাবার চশমা, ছেলের খেলনা, বউয়ের লাল পেড়ে শাড়ি
শান্তির পায়রাটার কাছে সব, সবকিছু উগড়ে দিয়ে
তুমি নাফ দিয়েছো পাড়ি।
তোমার মাথার উপর হেলিকপ্টার থেকে,
তার উপরের আকাশ থেকে,
তারও উপরে খোদার কাছ থেকে
নেমে আসে গুলির আশীর্বাদ।
এক হাতে তারা শান্তির পায়রা ধরে,
আরেক হাতে ধর্মের তসবি গুনেছে সারারাত।