এসো পা বাড়াই (২৭ তম পর্ব)
প্রকাশ | ১৬ আগস্ট ২০১৭, ০০:৪৮ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০১৭, ০০:৫৯
"মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত, কিন্তু কেন? ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ (Sheryl Sandberg) এর বই 'Lean In'- এ তিনি দেখিয়েছেন এ সমস্যার মূলে কি, কিভাবে নারীরা নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে, তার পূর্ণ ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারে। তার নিজের জীবন এবং পাশ্চাত্যের প্রেক্ষাপটে রচিত হলেও সারা পৃথিবীর নানা পরিসংখ্যান আর গবেষণার রেফারেন্স দিয়ে তিনি এই বইকে সমৃদ্ধ করেছেন সমস্ত মানব জাতির জন্য। আমার আন্তরিক ইচ্ছা বাংলাদেশের মানুষও এই বই পড়ে উপকৃত হোক। সেই ইচ্ছা থেকেই অনুবাদের এই প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যেই ২০টিরও অধিক ভাষায় এই বইয়ের অনুবাদ করা হয়েছে। এই বইয়ের নামে একটি আন্তর্জাতিক চক্রও গড়ে উঠেছে (http://leanin.org/) যেখানে সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ চাইলে যুক্ত হতে পারে। মূল বইয়ে রেফারেন্স গুলোর বিস্তারিত দেয়া আছে।"
LEAN IN এসো পা বাড়াই
WOMEN, WORK AND THE WILL TO LEAD নারী, কাজ এবং নেতৃত্বের ইচ্ছা
WRITER: SHERYL SANDBERG অনুবাদ: আফরিন জাহান হাসি
এমনকি এখনও, আত্মবিশ্বাসী বোধ অনুভব করা আয়ত্তে আনা থেকে আমি অনেক দূরে। ২০১১ সালের আগস্টে ফোর্বস (Forbes) তাদের বার্ষিক, বিশ্বের ১০০ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীর তালিকা (World's 100 Most Powerful Women List) প্রকাশ করেছিল। এটা বোঝার মত যথেষ্ট কাণ্ডজ্ঞান আমার আছে যে এই তালিকা কোন বৈজ্ঞানিক সূত্রের উপর ভিত্তি করে নয় এবং ঐ পত্রিকা এই ফিচারটি পছন্দ করে কারণ তারা এটি তৈরী করে অনেকগুলো পেইজের অভিমত এর উপর ভিত্তি করে, যেগুলোতে পাঠকরা প্রতি বার ক্লিক করে। তারপরও আমি বিস্মিত ছিলাম- না, আতংকিত ছিলাম- এটা জেনে যে, ফোর্বস (Forbes) আমাকে বিশ্বের প্রভাবশালী নারীদের মধ্যে পঞ্চম স্থান দিয়েছে, জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল (Angela Merkel), যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন (Hillary Clinton), ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ (Dilma Rouseff) এবং পেপসিকোর সিইও ইন্দ্রা নূঈ (Indra Nooyi) এর ঠিক পরেই। এটি আমাকে রেখেছে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা (Michelle Obama) এবং ভারতীয় রাজনীতিবিদ সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi) এর আগে। অযৌক্তিক। আমার নিজের মা আমাকে ডেকে বলেছিল, "চমৎকার, প্রিয়, আমি মনে করি তুমি খুবই ক্ষমতাধর, কিন্তু আমি নিশ্চিত না যে তুমি মিশেল ওবামার চেয়ে বেশী ক্ষমতাধর। তুমি মনে কর?"
ক্ষমতাধর অনুভব করা তো দূরের কথা, আমি বিব্রত এবং প্রদর্শিত অনুভব করছিলাম। যখন ফেসবুকের সহকর্মীরা আমাকে বারান্দায় থামাতো অভিনন্দন জানাতে, আমি সুস্পষ্টভাবে তালিকাটিকে 'হাস্যকর' ঘোষণা দিতাম। যখন বন্ধুরা লিঙ্কটা ফেসবুকে দিত, আমি তা সরিয়ে নিতে বলতাম। কিছুদিন পর আমার দীর্ঘদিনের নির্বাহী সহকারী ক্যামিয়্যাল হার্ট (Camille Hart) আমাকে তলব করে সম্মেলন কক্ষে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। এটি ছিল গুরুতর। সে আমাকে বলেছিল আমি ফোর্বস এর বিষয়টাকে খুব দুর্বলভাবে পরিচালনা করছি এবং যারা এই তালিকার অযৌক্তিকতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করছে, আমার তাদেরকে সমর্থন দেয়া বন্ধ করা দরকার। আমি অনেক বেশি মানুষকে দেখাচ্ছি, কি রকম অস্বস্তি আমি বোধ করছি এবং আমার অনিশ্চয়তা প্রকাশ করছি। এসবের পরিবর্তে আমার শুধু সহজভাবে বলা দরকার, “ধন্যবাদ”।
আমাদের সবার ক্যামিয়্যাল (Camille) এর মত সহকর্মী দরকার যে কিনা যথেষ্ট সৎ আমার কম-বেশি অমায়িক প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করতে। সে সঠিক ছিল। এই তালিকা অযৌক্তিক হোক বা না হোক, আমি এটি লিখিনি এবং আমার এতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোরও দরকার নেই। আমার সন্দেহ কোন পুরুষ তার ক্ষমতা সম্পর্কে অন্যের উপলব্ধি নিয়ে এত বিহ্বল বোধ করতো কিনা।
আমি জানি আমার সাফল্য এসেছে কঠিন পরিশ্রম থেকে, অন্যের সহায়তা থেকে এবং সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকার কারণে। যারা আমাকে সুযোগ এবং সহায়তা দিয়েছেন তাদের প্রতি এক গভীর এবং স্থায়ী কৃতজ্ঞতার অনুভূতি আমি বোধ করি। আমি আমার নিখুঁত ভাগ্যকে স্বীকার করি, পৃথিবীর অন্য অনেক জায়গায় যেখানে নারীদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করা হয়, তার চেয়ে, আমার পরিবারে ইউনাইটেড স্টেটস-এ জন্ম গ্রহণ করার জন্য। আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই- পুরুষ এবং নারী উভয়েরই- উচিত সৌভাগ্যকে স্বীকার করা এবং যারা আমাদের সাহায্য করেছে তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া। কেউ একা একা কিছু সম্পন্ন করতে পারে না।
কিন্তু আমি এও জানি প্রতিনিয়ত বেড়ে ওঠা এবং নিজেকে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করার জন্য আমাকে অবশ্যই আমার নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এখনও আমি এমন অবস্থার মুখোমুখি হই যেখানে আমি ভয় পাই যে তা আমার সামর্থ্যের বাইরে। এখনও এমন দিন যায় যখন আমি নিজেকে প্রতারক ভাবি। এবং এখনও মাঝে মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই এমন অবস্থায় যেখানে আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে, আমাকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে, যখন আমার পাশে বসা পুরুষটির ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। কিন্তু এখন আমি জানি কিভাবে গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিতে হয় এবং কিভাবে হাত উঁচু করে রাখতে হয়। আমি টেবিলে বসতে শিখেছি।
(চলবে...)