হোমায়রা আহমেদ এর ৩টি কবিতা
প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৭, ২৩:৪৮
(১) ছাদনাতলার রাত্রিবাসে
ঝাপসা আলোয় ভ্যাপসা মনে,
ডাকছি তোমায় শোনো,
পথটা যাবে সমান্তরাল,
বিরতি নেই কোন।
অন্ধরাতের বন্ধ-মনে
আকাশ কাঁদে মানো?
তোমার মাটির সোঁদা বাসে
আমার সন্ধি কেন?
দেখছি তোমায় আতশ কাচে
ডাকছি মনের বনে,
জংগুলে সব ক্যাক্টাসেরা
ফুল ফোটাতে জানে?
ঐ সবুজে চিরহরিৎ
আবেশ থাকে জেগে,
তোমার রাত্রি ভোরের নেশায়
আমার সকাল মেগে।
মাগনা মিতা, ছাদনাতলা
সাজায় নাতো আজো,
চল দেখি, রাত্রি ফুরায়,
বৃষ্টি জলেই বাঁচো।
বাঁচবে কিংবা, বাঁচতে দেবে
তেষ্টাখালির মাঠে,
রাখাল ছেলের বংশী বাজে
খোদাই করা কাঠে।
কাঠ কাটে না কাঠুরিয়া,
ল্যাম্পপোস্টের নিচে,
বিসর্জনের বংশী বাজে,
চক্ষুলাজের বীজে।
(২) তোমায়-আমায় পোশাকি প্রেম
তোমার সাথে পোষাচ্ছে না,
রোজ রাতের অবশ সময়,
সন্ধ্যে বেলার অবহেলা,
সকালবেলার তাড়াহুড়ো--
এক্কেবারে পোষাচ্ছে না।
তোমার নাকি পোষাচ্ছে না?
ডিম-পোচ আর আটার রুটি,
মাছের কাটা, ঘন ডাল আর
বসা ভাতে আলু ভর্তা--
এক্কেবারে পোষাচ্ছে না।
তাদের নাকি পোষাবে না;
দস্যি মেয়ের ডানপিটেমো,
যখন-তখন বাইরে যাওয়া
খিস্তি-খেউর কূটকচালে আগ্রহ কম;
ঢং দ্যাখোনা! পোষাচ্ছে না।
আমাদেরও পোষাচ্ছে না,
ভীষণ অলস, মিথ্যে প্রবোধ
লোভের জিভে লকলকে শোধ,
খুব জৈবিক, নষ্ট মেধা,
কোনকালেই পোষাতো না।
তাই তো আজ আর পোষাচ্ছে না;
তোমার-আমার, পোষাতো না
কোনকালেই মেশাতো না,
বকুলগন্ধ, পদ্মকাঁটা--
পোষ মানে না, পোষাবে না।
(৩) তুমি-আমির ছন্দমিলে
তুমি বুঝি শ্লোগান দেবে?
ব্যস্ত পথে ন্যস্ত হয়ে?
আমি না-হয় রিকশা খুঁজি,
বৃষ্টিধোয়া একলা মেয়ে।
আমি নাকি নষ্ট ভীষণ?
এই মাত্র জানতে পেলে?
তোমায় আমি সব বলেছি,
কনে-দেখার আলোয় মেলে।
তুমি শুধু ফেরাতে চাও,
কষ্ট-সময়, ভ্রষ্ট আশা--
আমি কেবল পথই বানাই,
ভালোবাসায় কীর্তিনাশা।
আমি বুঝি মানতে পারি,
তোমার সকল বন্দী আদর?
আমরা দু'জন পদ্য বুনি,
শব্দে-বর্ণে মিষ্টি চাদর!
তুমি-আমি, অথবা সে,
যাচ্ছি চলে, দূর আকাশে;
আমার তুমি খুব কেঁদেছ,
স্নেহ-কাড়া শেষ হুতাশে।
আমরা গড়ি আজকে দিবস,
কালকে রাত্রি, চন্দ্রহারা;
তোমরা তবে আড়াল করো,
নষ্ট স্মৃতি, সৃষ্টিছাড়া।
আড়াল পাওয়া বাউল বাতাস,
তোমায় যখন খুব ভাবাবে,
ঠিক তখুনি জানলা খুলে,
চেয়ো, আমায় দেখতে পাবে।