স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লড়াইয়ে স্মৃতিসৌধে খাদিজা
প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:২৪
সোমবার বিকালে ভাইয়ের সাথে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বেড়াতে যান সিলেটে ছাত্রলীগ নেতার ধারালো অস্ত্রের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে সাভার সিআরপিতে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস।
সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) চিকিৎসাধীন খাদিজাকে নিয়ে ঘুরে আসার পর দুটি ছবি ফেইসবুকে প্রকাশ করেন খাদিজার ভাই শরনান হক শাহীন। উপর্যুপুরি কোপে আহত হয়ে মরণাপন্ন অবস্থা থেকে ফিরে আসা খাদিজাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ও মানসিকভাবে দৃঢ় রাখতেই তাকে স্মৃতিসৌধে নিয়ে যান বলে জানিয়েছেন শাহীন।
তিনি জানান, "মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলেও এখনও নৃশংসতার স্মৃতি মনে হলে বিমর্ষ হয়ে পড়েন খাদিজা। আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে শঙ্কায় ভোগেন। আমরা পরিবারের সদস্যরা তাকে সময় দিয়ে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করি। মন খারাপ হলে এতদিন সাভার সিআরপির আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাতে নিয়ে যেতাম। কাল ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলাম।”
জাতীয় স্মৃতিসৌধে খাদিজাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার পর রাতে ‘খাদিজার সর্বশেষ অবস্থা’ শিরোনামে এক ফেসবুক পোস্টও দেন শরনান; যাতে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের এই ছাত্রী ‘স্বাভাবিক জীবনে’ ফিরে যেতে লড়াই করছে বলে জানান তিনি।
খাদিজার আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারা নিয়ে শঙ্কায় থাকা শাহীন ওই পোস্টে লেখেন, “নরপিশাচ বদরুলের উপর্যুপুরি চাপাতির কোপে আহত খাদিজা আল্লাহর অশেষ কৃপায় কোটি মানুষের দোয়ায় মৃত্যু দুয়ার থেকে ফিরে এলেও তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অনেক লড়াই করতে হচ্ছে। আদৌ সে আগের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কি না তা এখনও বলা যাচ্ছে না।”
খাদিজার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে ফেইসবুক পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “বাম পায়ে কোপ পড়ায় হাঁটার সময় বাম পা বেঁকে যাচ্ছে। বাম হাতের তালুতে এবং আঙ্গুলে অনেকগুলো কোপে প্রধান নার্ভ এবং ব্লাড ভেসেল মারাত্মকভাবে ইনজুরড হয়েছে, বাম হাতে সার্জারী করার পরও এখনও আঙ্গুল সোজা হচ্ছে না।”
সিআরপিতে খাদিজাকে প্রতিদিন ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে বলে ওই ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন শাহীন।
সিআরপিতে প্রতিদিন ফিজিওথেরাপি দেওয়ার কথা জানিয়ে শরনান লিখেছেন, “শারীরিকভাবে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হলেও মানসিকভাবে অনেক বিপর্যস্ত। নৃসংশতার কথা মনে হলেই ভয় পেয়ে যাচ্ছে, নিজের এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তাই তাকে আমরা যথাসম্ভব হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করতেছি, হাসপাতালের আশেপাশে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছি, আগের মত স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখাচ্ছি।”
খাদিজার সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনার পাশাপাশি দ্রুত বদরুলের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস কোর্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সম্পাদক বদরুল আলমের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথার খুলি ভেদ করে মস্তিষ্কও জখম হয়।
ঘটনার পর রাজধানীতে এনে প্রথম দিকে খাদিজাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তিন দফা অস্ত্রোপচার হয়। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলা হয়।
স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ২৮ নভেম্বর খাদিজাকে সাভারের সিআরপিতে স্থানান্তর করা হয়।