পুরুষ অধিকারের পক্ষে সরব যে নারী
প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:৩১
নারীদের অধিকার আদায়ে লড়ছেন এমন নারী তো অনেকেই আছেন। আছেন নারী অধিকারের পক্ষে লড়া পুরুষরাও। কিন্তু নারীবাদীরা নাকি কখনো পুরুষদের পক্ষে কথা বলেন না, তাদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ করেন না, এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার নারী অধিকার কর্মী হয়েও পুরুষের অধিকারের পক্ষে লড়াই শুরু করলেন ভারতের দীপিকা নারায়ণ ভরদ্বাজ।
কিন্তু ভারতের মতো দেশে যেখানে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, প্রতি ৫ মিনিটে ঘরের মধ্যে নারী সহিংসতার শিকার হন, প্রতি ৬৯ মিনিটে একজন কনেকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়, প্রতিবছর হাজারো মেয়েশিশুর ভ্রূণ হত্যা করা হয়, নবজাতক মেয়েশিশুকে হত্যা করা হয়; সেখানে নারী অধিকারের পক্ষে লড়াই করতে করতে হঠাৎ করেই পুরুষ অধিকারের পক্ষে আওয়াজ কেন? এই ব্যাপারে দীপিকা জানিয়েছেন, নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অভিজ্ঞতা তাকে এই অবস্থান নিতে বাধ্য করেছে। এমনকি পুরুষদের নির্যাতন নিয়ে তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছেন তিনি।
পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন দীপিকাও, পুরুষেরা কি ক্ষতিগ্রস্ত হন না? তারা কি বৈষম্যের শিকার নন? তারাও কি নির্যাতিত হন না?
১৯৮৩ সালে চালু করা ভারতের যৌতুকবিরোধী আইন আরও কঠোর করতে ৪৯৮/এ ধারা জারি হয়। অথচ দীপিকা এর বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছেন। আইনটির এই ধারা পুনর্বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি।
দীপিকা বলেন, যৌতুকবিরোধী আইনের ওই ধারা মানুষের কল্যাণের জন্য চালু করা হয়েছিল। কিন্তু জীবন বাঁচানোর ওই আইন অনেকের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।
দীপিকা জানান, ২০১২ সালে প্রথম বিষয়টি উপলব্ধি করেন তিনি। ২০১১ সালে তার এক চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে হয়। তিন মাস পর তার স্ত্রী বিচ্ছেদ চান। এ কারণে তিনি যৌতুকবিরোধী ওই আইনের আশ্রয় নেন। অভিযোগ করেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে। ননদ দীপিকার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তোলেন ওই নারী। মিটমাটের জন্য মেয়েটিকে দীপিকার পরিবার বড় অঙ্কের টাকা দেয়। কিন্তু তারপরও মামলা শেষ হয়নি।
দীপিকার মতে যৌতুকবিরোধী আইনটি এখন ভয় দেখানোর একটি কৌশলে পরিণত হয়েছে। তাই আইনের ধারা পরিবর্তনের জন্য পার্লামেন্টে যাবেন বলেও জানান দীপিকা।
বিবাহবিচ্ছেদের বিভিন্ন মামলা পর্যালোচনা করে দীপিকা দেখেন, আইনজীবীর ফাঁদে পড়ে অনেক স্ত্রীই স্বামীদের বিরুদ্ধে যৌতুকের মিথ্যে অভিযোগ তোলেন। গবেষণা করে দীপিকা দেখেন, আইনের বিশেষ ধারা অনুসারে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠা এসব ব্যক্তির মধ্যে অনেকের বয়স খুবই কম।
সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারকও আইনটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, আইনটির অপব্যবহার করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট এ কারণে যৌতুকের অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দেন।
নারীদের জাতীয় কমিশনও যৌতুকবিরোধী আইনের এই অপব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ভারতের বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা এই আইনের অপব্যবহারের কারণে নির্যাতিত পুরুষদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছে বলেও খবর পান দীপিকা। এর মধ্যে একটি হলো সেভ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি।
অনেক পুরুষ যৌতুকবিরোধী আইনের অপব্যবহারের শিকার হয়ে দিনের পর দিন কারাগারে কাটাচ্ছেন। আত্মহত্যা করার আগে নিজের যন্ত্রণার কথা বলে একজন পুরুষ ভিডিও পোস্ট করেন। আত্মহত্যা করার আগে লেখা একটি চিঠিতে একজন ব্যাংকার এই আইন বাতিলের দাবি জানান।
চার বছর ধরে এসব নির্যাতিত পুরুষদের নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন দীপিকা। দীপিকা জানান, তথ্যচিত্র দেখানোর পর তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন।