অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন স্বপ্না রানী
প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৪২ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৪৪
নারীদের জন্য সব পেশা নয় কিংবা নারীদের জন্য অমুক পেশাই ভালো এরকম সামাজিক ট্যাবুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন কুড়িগ্রামের স্বপ্না রাণী। বর্তমানে তিনি অটো চালিয়ে সংসার চালালেও স্বপ্ন দেখছেন পিক আপ ভ্যান চালানোর।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের দিগটারী গ্রামের বাসিন্দা মৃত. বকসী চন্দ্র বর্মণের মেয়ে শ্রী স্বপ্না রাণী। মা সাবিত্রী বর্মণ। ৫ ভাই আর ৩ বোনের মধ্যে স্বপ্না ষষ্ঠ। নিজের পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও অভাবের মুখে সেটা আর হয়ে উঠেনি তার। ৫ম শ্রেণিতেই থেমে গেছে লেখাপড়ার স্বপ্ন। ১৭ বছর আগে অল্প বয়সেই পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের পাখিরহাট নগরাজপুর গ্রামের রণজিৎ দাসের ছেলে স্বর্ণ কারিগর রতন দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় স্বপ্নার। প্রথমদিকে স্বাভাবিকভাবে সংসার চললেও কিছু দিনের মধ্যেই নেমে আসে যৌতুকের অত্যাচার। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় একসময় বেসরকারি একটি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করে স্বপ্নার পরিবার। এর প্রেক্ষিতে মাত্র তিন দিন বয়সী ছোট ছেলেকে রেখে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। দুই সন্তান নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন স্বপ্না।
কিন্তু সাহস হারাননি স্বপ্না। অভাবের তাড়নায় কয়েকদিন উপোস থাকার পর বড় ভাই নারায়ণ ও সুবল তাকে ও তাদের সন্তানদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর থেকে রাজমিস্ত্রি, শ্রমিক এমনকি মাঠে-ঘাটে চষে দিন মজুরের কাজও করেছেন স্বপ্না। এর মধ্যে ২০১৫ সালে স্বপ্ন প্রকল্পে দৈনিক ২শ টাকা মজুরিতে কাজ শুরু করেন।এই প্রকল্প থেকে কাজের পাশাপাশি নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে দেওয়া হতো বিভিন্ন প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে তার সঞ্চয়কৃত ২০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় একটি অটোরিকশা কেনেন তিনি। সেই থেকে পথচলা শুরু। প্রায় ২ বছর ধরে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী-রংপুর এবং শহর কিংবা গ্রামের রাস্তায় দিব্যি অটো চালিয়ে বেড়াচ্ছেন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অটোরিকশা চালিয়েই সন্তানদের ভরণপোষণ, লেখাপড়া সহ সব আবদার মেটাচ্ছেন তিনি। তার ২ সন্তানের মধ্যে মেয়ে রাধারাণী (১২) ৫ম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছেলে হৃদয় (৮) ১ম শ্রেণির ছাত্র। তারা ২ জনেই ভিতরবন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।
স্বপ্না রাণী বলেন, অটোরিকশা চালাতে গিয়ে প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হয়েছে। যাত্রী উঠতে চায়নি সহজেই। কিন্তু আস্তে আস্তে সকলের সহযোগিতায় এখন আর এই সমস্যা হয় না। শুরুতে আয় আরো ভালো হলেও বর্তমানে অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আয় কিছুটা কমে গেছে। আর এ কারণেই চিন্তায় করছি পিক আপ কেনার।
ইউএনডিপি স্বপ্ন প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক আহমাদুল কবীর আকন বলেন, "স্বপ্না তার কঠোর পরিশ্রম দিয়ে জেলা এবং জেলার বাইরেও পরিচিতি লাভ করেছে। স্বপ্না এখন এই দরিদ্র জেলার নারীদের জন্য রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে দেখিয়েছে ইচ্ছা শক্তি থাকলে নারীরাও পুরুষের মতো সমান তালে কাজ করতে পারে"।