অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছেন মিলিয়া

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০১৮, ১৫:১০

জাগরণীয়া ডেস্ক

প্রতিবন্ধকতার সব দেয়াল টপকে গাড়ির স্টিয়ারিং এর জোরে আজ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছেন মিলিয়া খানম (৩২)।

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ব্রম্মানী নগর গ্রামের মেয়ে মিলিয়া খানম। বাবা শামসুর রহমান মোল্লা। মা সুফিয়া বেগম। ৫ বোন আর ১ ভাইয়ের মধ্যে মিলিয়া তৃতীয়।

খুব ছোটবেলা থেকেই পরিবারের অভাব অনটন দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন মিলিয়া। সেই অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করেই টেনেটুনে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর গ্রামে টিউশনি জোগাড় করে শেষ হয় মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক। স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েও অভাবের তাড়নায় আর তা শেষ করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে মিলিয়া বলেন, বাবা বেকার, মা টুকটাক কৃষিকাজ দিয়ে সংসারের হালটি কোনমতে ধরে রেখেছেন। অভাব দূর করতে আর সংসারের হাল ধরতে নিজেই নেমে পড়েন কর্মজীবনে।

গ্রামের পরিচিত এক লোকের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে, কেয়ার বাংলাদেশ নারীদের স্বাবলম্বী করতে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তার কাছেই তথ্য নিয়ে অভাব দূর করার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৮ সালে ঢাকায় আসেন মিলিয়া। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, রাজধানীর পান্থপথে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ-এর একটি শাখায় মেয়েদের ড্রাইভিং শেখানো হয়। তিনি অবিলম্বে সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে তিনি ২০০৮ সালের মে মাস থেকে জুন পর্যন্ত মোটর ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন।

এরপর থেকে সংগ্রামী পথচলা শুরু হয় মিলিয়ার। প্রশিক্ষণ শেষে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে একের পর এক চেষ্টা চালান চাকরির জন্য। কখনো থেমে যায়নি তার ইচ্ছাশক্তি। ২০১০ সালে কেয়ার বাংলাদেশেই ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। দীর্ঘ ৮ বছর সেখানে তিনি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চালান। ১৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪৩ হাজার টাকা পর্যন্ত তার মাসিক বেতন গিয়ে পৌছায়। এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা আশার আলোর ঝলকানি লাগে তার পরিবারের ওপর। ধীরে ধীরে ঘুঁচতে থাকে অভাব।

মোটর ড্রাইভিংয়ের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সঞ্চিত দক্ষতা নিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে চলেন মিলিয়া। ২০১৮ সালের ২০ মে সরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে নিয়োগ পান তিনি। ড্রাইভার হিসেবে এটিই তার কর্মজীবনের দ্বিতীয় কোন প্রতিষ্ঠান। ব্যাচেলর জীবন নিয়ে থাকেন রাজধানীর ফার্মগেটের একটি মহিলা হোস্টেলে।

নারী হয়েও অদম্য ইচ্ছা শক্তির কারণে মিলিয়া খানত তার পরিবারের হাল ধরতে পেরেছেন। এখন তিনি গাড়িতে করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে বহন করেন। আর তিনি যখন কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালিয়ে রাস্তা দিয়ে যান তখন অনেকেই তাকিয়ে থাকেন। 

মিলিয়া বলেন, চেষ্টা থাকলে সব নারীই পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব কাজই করতে পারে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের ইন্দ্রানী রায় নামে এক কর্মকর্তা জানান, মিলিয়া অনেক ভাল ড্রাইভিং করে। নৈপূণ্যতায় তার সঙ্গে অনেক পুরুষ ড্রাইভারও পারবে না। নিখুঁত দক্ষতা নিয়ে প্রতিযোগিতা করেই তিনি তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছেন।

পরিবারের কথা ভেবে এখনো সংসার গড়েননি মিলিয়া। নিজে উপার্জন করে দিয়েছেন দুই বোনের বিয়ে। আরও এক বোন ও এক ভাইয়ের পড়ালেখার খরচও জোগাচ্ছেন মিলিয়া খানম।

সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত