রাজান: গাজার সীমান্তে এক অনন্য স্বেচ্ছাসেবক
প্রকাশ | ০৪ জুন ২০১৮, ২৩:৩৪ | আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮, ২৩:৪৬
আমি আমার মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত কাজ করে যাব বলেছিলেন রাজান। তিনি তার কথা রেখেছেন।
রাজান আল-নাজ্জার, বয়স ২১ বছর। গাজায় তিনিই প্রথম নারী যিনি প্যারা মেডিকেল কর্মী হিসেবে সীমান্তে আহত ফিলিস্তিনিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেন। তুরস্ক ভিত্তিক একটি গণমাধ্যমে গত ১ এপ্রিল সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন রাজান।
সেখানে রাজান জানান, প্রথম দিন কাজ করতে এসে খুব কষ্ট হয়েছিল। আমি ৩ বার কাঁদানে গ্যাসের আক্রমণের শিকার হই। সেদিন পুরো মেডিকেল টিমটিই ইসরায়েলের টার্গেট ছিল। সেদিন এক সহকর্মী পিঠে গুলিবিদ্ধ হন। অপর এক সহকর্মীর কানের পাশে আঘাত লাগে। এছাড়া সীমান্তে আহতদের আমরা মাঠেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিই। সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে থাকি। অনেককেই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। আবার অনেককে বহন করে আমাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসি।
নিজের জীবনের ঝুঁকি প্রসঙ্গে রাজান সেদিন বলেন, গতকালও আমি বুলেটবিদ্ধ হতে পারতাম। গতকালও হইনি, আজও বেঁচে গেছি।
গত ১ জুন (শুক্রবার) গাজায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন এই দেশপ্রেমিক তরুণী।
সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে থাকা রাজানের এক সহকর্মী জানান, আমরা হাত উঁচিয়ে তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম। আমরা স্বেচ্ছাসেবক, অসুস্থদের চিকিৎসা দেয়াই আমাদের কাজ, কিন্তু তারা শোনেনি। ঘটনার দিন সীমান্তে এক আহত আন্দোলনকারীকে চিকিৎসা দিচ্ছিল রাজান। তখনই রাজানকে টার্গেট করেই তারা গুলি করে। প্রথমে রাজান বুঝতে পারেনি যে, সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিটি তার বুককে বিদ্ধ করে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন রাজান টের পায় যে সে গুলিবিদ্ধ। তার পিঠের দিকে ইঙ্গিত করে সে সবাইকে জানায় যে সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। রাজানের সাথে সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিল আরও ২ জন।
গাজায় মৃত্যুর সারিতে আরো একটি নাম যোগ হলো-রাজান। কিন্তু রাজান হয়ে উঠেছে আন্দোলনকারীদের প্রেরণার নাম। তাই তো রাজানের শেষ যাত্রায় হাজারো মানুষের ঢল নামে গাজার রাস্তায়। রাজানকে সম্বোধন করা হয় ‘অ্যাঞ্জেল অব হিভেন’ হিসেবে।
রাজানের মৃত্যুতে শোকে স্তব্দ মা বলেন, আমাই আশা করি আমার মেয়ের মৃত্যু সবাইকে সচেতন করবে। পৃথিবীবাসী দয়া করে সজাগ হোন এবং দেখুন। আমার মেয়ে কী দোষ করেছিল? সে কী এমন অপরাধ করেছিল যে তাকে মেরে ফেলা হলো।
তিনি আরও বলেন, সে মানবতার কল্যাণের জন্য কাজ করছিল, এখন তার মৃত্যুতে কোথায় মানবতা? এই পোষাক (এপ্রোন) পর্যন্ত তাকে রক্ষা করতে পারেনি।
সূত্র: টি আর টি ওয়ার্ল্ড, আল জাজিরা