১০০ ধর্ষকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যে নারী
প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:৪৬
গোটা ভারত যখন ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে মুখর, ঠিক সেই সময় গবেষণার জন্য ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন মধুমিতা পান্ডে। ধর্ষকদের বিষয়ে জানতেই তার এই গবেষণা। চার বছরে বিভিন্ন কারাগারে গিয়ে এমন ১০০ জনের সাক্ষাৎকার নেন তিনি।
২০১৩ সালে নয়াদিল্লির তিহার কারাগারে থাকা ধর্ষকদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন মধুমিতা। এক-দুই করে গত চার বছরে বিভিন্ন কারাগারের ১০০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। আর ওই সাক্ষাৎকারই এখন পিএইচডি গবেষণা হিসেবে প্রকাশ করতে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিজ্ঞান নিয়ে পিএইচডি গবেষণারত মধুমিতা।
এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নয়াদিল্লিতে বেড়ে ওঠা মধুমিতা পান্ডে পড়াশোনার খাতিরে যুক্তরাজ্যে যান। ভারতে নির্ভয়া ধর্ষণের পরপরই যখন পুরো দেশ ফুঁসে ওঠে, তখনই এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার কাজ শুরু করেন তিনি।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে সিনেমা দেখে এক ছেলেবন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ফিরছিলেন ওই মেডিকেলছাত্রী ‘নির্ভয়া’। রাত সাড়ে আটটার দিকে একটি বাসে ওঠেন তারা। এতে ছয়জন লোক ছিল। এর মধ্যে একজন কিশোর। তারা মেয়েটির সঙ্গে থাকা ছেলেবন্ধুকে মারধর করে। পরে পালাক্রমে সবাই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এরপর লোহার যন্ত্রপাতি দিয়ে মেয়েটিকে ভয়ানক জখম করে। ঘটনার পর মেয়েটি ও ছেলেটিকে বাস থেকে ছুড়ে পালিয়ে যায় তারা। কয়েক দিন পর নির্ভয়া মারা যান। এ ঘটনায় শুধু দিল্লি নয়, ভারতজুড়ে মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় জড়িত ছয়জনই গ্রেপ্তার হয়। কিশোর অপরাধীকে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। অন্য পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। এর মধ্যে অন্যতম আসামি রাম সিং তিহার কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন।
ভারতের জাতীয় অপরাধ তথ্য ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে দেশটিতে ৩৪ হাজার ৬৫১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
মধুমিতা পান্ডে বলেন, ‘আমরা ধর্ষকদের অস্বাভাবিক বা বিকৃত মনের মানুষ মনে করি। কিন্তু কেন, কোন পরিস্থিতিতে তারা এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করেন? এটা জানতেই আমি ধর্ষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সিদ্ধান্ত নিই।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, মধুমিতা অনুমতি নিয়ে ধর্ষণের দায়ে তিহার কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। এভাবে তিনি ১০০ জন ধর্ষকের সাক্ষাৎকার নেন। মধুমিতা যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নিরক্ষর, কেউ স্কুলপালানো আর কেউবা শুধু স্কুলের গণ্ডিটুকু পেরিয়েছেন।
মধুমিতা বলেন, ‘আমি যখন গবেষণার কাজে গিয়েছিলাম, তখন ধর্ষকদের অস্বাভাবিক ও বিকৃত মনের মানুষ ভেবেই গিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়, তারা অস্বাভাবিক নন। রক্তমাংসের স্বাভাবিক মানুষ। তবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ ও নিজস্ব বোধের কারণেই তারা এসব করেন।’
মধুমিতা বলেন, ‘ধর্ষণের দায়ে কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললে হতাশ হতে হয়। তাদের জন্য কষ্টও হতে পারে। একজন নারী হিসেবে ধর্ষকদের জন্য কষ্ট পাওয়া মোটেও উচিত নয়। কথা বলতে বলতে ভুলে গেয়েছিলাম যে তারা কোনো নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক। কথা বলে জেনেছি, ধর্ষণের কারণে একজন নারীর কী হতে পারে, তা তারা জানেন না। তারা জানেন না ধর্ষণ মানে কী। ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করাকে কী বলে, তাও জানা নেই তাদের।’
অপরাধবিজ্ঞানের এই শিক্ষার্থী বলেন, সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় কেউ ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, সেখানে ধর্ষণের মতো কিছুই ঘটেনি। ১০০ জনের মধ্যে মাত্র তিন-চার বলেছেন, তারা অনুতপ্ত। অন্যদের কেউ ওই নারীর দোষ দিয়েছেন আর কেউবা নিজের কাজকে সঠিক বলে জাহির করার চেষ্টা করেছেন।
মধুমিতা বলেন, ধর্ষণের দায়ে কারাগারে থাকা ৪৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি যা জানিয়েছেন, তা অপ্রত্যাশিত। পাঁচ বছর বয়সী এক মেয়েকে ধর্ষণ করায় তিনি খুব অনুতপ্ত। ওই ব্যক্তি বলেছেন, আমি খুবই অনুতপ্ত, আমি তার (মেয়ে) জীবন ধ্বংস করে দিয়েছি। সে এখন আর কুমারী নেই, কেউ তাকে বিয়েও করতে চাইবে না। আমি যদি কারাগার থেকে ছাড়া পাই, তাহলে ওই মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে তুলব।’
সূত্র: প্রথম আলো