প্রখ্যাত নারীবাদী লেখক কেট মিলেটের মৃত্যু
প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:১৩
যুক্তরাষ্ট্রের নারীবাদী লেখিকা ও আন্দোলনকর্মী কেট মিলেট প্যারিস ভ্রমণকালে ৬ সেপ্টেম্বর (বুধবার) মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
মেয়েদের জন্য ‘ব্যক্তিগত মানেই রাজনৈতিক (দ্য পার্সোনাল ইজ পলিটিক্যাল)’ এই কথা মিলেটই বলেছিলেন, তাঁর প্রথম বইয়ে। যেটি আদতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা তাঁর পিইচডি গবেষণাপত্র। ‘সেক্সুয়াল পলিটিক্স’ নামে এই বইটি ১৫ দিনে দশ হাজার কপি বিক্রি হয়েছিল! কোনও অ্যাকাডেমিক গবেষণাপত্রের এ রকম জনপ্রিয়তা বিশেষ দেখা যায় না। এই বইয়ে পুরুষতন্ত্রে ক্ষমতার বিন্যাসটা ঠিক কী রকম, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল লেখক। বইটিকে পরে ‘নারী মুক্তির বাইবেল’ খেতাব দিয়েছিল ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’।
বিংশ শতাব্দীতে ৬০-এর দশকে পাশ্চাত্যে যে নারীবাদী ধারার উদ্ভব ঘটেছিল তার অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন কেট মিলেট। এই নারীবাদের মূলমন্ত্র হচ্ছে, পুরুষ নারীকে শোষণ করে যৌন নিপীড়নের মাধ্যমে। নারীকে যৌন সামগ্রী হিসেবে পুরুষ ‘যৌন রাজনীতি’র (সেক্সুয়াল পলিটিক্স) মাধ্যমে যে শোষণ চালায় তার বিলোপ সাধনই নারী মুক্তির মূলকথা।
কেবল নারীবাদের প্রবক্তাই নয়, নামকরা নারীবাদী আন্দোলনকর্মীও ছিলেন কেট মিলেট। যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের সম অধিকার আইন সংশোধনীর জন্য প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি। নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষেও তিনি সোচ্চার ছিলেন। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ইরানে নারীদের অধিকারের জন্যও তিনি প্রচার চালিয়েছিলেন।
১৯৭৯ সালে ইরানে প্রথম বার আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করতে গিয়েছিলেন কেট। আয়াতোল্লা খোমেইনির সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। ফিরে যান দু’বছর পরে। দু’বারের সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর তৃতীয় বই ‘গোয়িং টু ইরান’ (১৯৮১)। এর আগে, ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর দ্বিতীয় বই ‘ফ্লাইং’। তত্ত্ব কথার বাইরে বেরিয়ে নিজের জীবন ও অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা সেই বই।
তাঁর মৃত্যুর পরে একটি টুইটার পোস্ট— ‘‘আজ গোটা বিশ্বে, বিশেষ করে আমেরিকায় যখন নারীবাদ এক অদ্ভুত আঁধারে আচ্ছন্ন, তখনই চলে গেলেন কেট মুরে মিলেট!’’
ব্যক্তিগত জীবনে চিত্র সাংবাদিক সোফি কেইরের সঙ্গে উভকামী সম্পর্ক কেটের দীর্ঘদিনের। তবে তার আগে জাপানি শিল্পী ফুমিও ইওশিমুরার সঙ্গে কুড়ি বছরের বিবাহিত জীবনও কাটিয়েছিলেন তিনি।