উনিশ শতকে বাংলায় নারী পুরুষ সম্পর্ক (তৃতীয় অধ্যায়: পরিবারের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক)
প্রকাশ | ২৩ জুন ২০১৭, ০২:৪৩ | আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭, ০২:৫৬
উনিশ শতকে বাংলায় নারী পুরুষ সম্পর্ক, বিলকিস রহমান রচিত প্রথম গ্রন্থ, তার গবেষণার আলোকে লেখা। পড়ে শেষ করলাম বইটি, পড়তে যেয়ে একটু বেশি সময় নিয়েছি, নিতে হয়েছে। আমাকে ভাবিয়েছে বইটি, তথ্য উপাত্ত অবাক করেছে, কখনও কষ্ট পেয়েছি, গুমরে কান্না নিয়ে কাটিয়েছি অনেকটা সময়। নিজের অজান্তেই করুণাও হয়েছে এই সময়ের কিছু নারী জীবন দেখে। সেই বৈরী সময়ের কতোটা পাড়ি দিয়ে এসেছি আমরা যদি তা উপলব্ধি করতো তাহলে স্বেচ্ছায় কেউ কেউ যেমন জীবনধারা বেছে নিয়েছে তা ভাবাতো, নিশ্চয়ই ভাবাতো!!!
এবং বলে নিতে চাই, আমি নিতান্তই একজন সামান্য পাঠক হিসেবে এটি পড়তে যেয়ে যা আমাকে ভাবিয়েছে এবং মনে হয়েছে আরো আলোচনার দাবী রাখে সেই হিসেবেই পুরো বইটি’র একটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
উনিশ শতকের পরিবারে দাম্পত্য জীবনে পুরুষের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব লক্ষ করা যায়, পিতৃতন্ত্র দাম্পত্য জীবনের জন্য কতগুলো বিধিনিষেধ নির্ধারণ করে দেয়- স্বামী হচ্ছে ইহজগতের প্রভু ও দেবতা, তার প্রতি স্ত্রীর প্রশ্নাতীত ভক্তি প্রদর্শন করতে হবে।
দাম্পত্য সম্পর্কের চমৎকার চিত্র ফুটে ওঠেছে ধীরেন্দ্রনাথ পালের স্ত্রীর সহিত কথোপকথন গ্রন্থে। স্বামী-স্ত্রী দাম্পত্যে চার ধরণের সম্পর্কের কথা বলেছেন তিনি। তার মতে, স্বামী-স্ত্রীর প্রথম সম্পর্ক হলো অংশী (Partner) সম্পর্ক, দ্বিতীয়ত স্ত্রী (Wife) সম্পর্ক, তৃতীয়ত সখা (Confidant) সম্পর্ক এবং চতুর্থত আধ্যাত্মিক (Spiritual) সম্পর্ক।
উনিশ শতকে দাম্পত্য সম্পর্কের প্রথাগত ধারণা ছিল সংসারের সর্বময় কর্তা পুরুষ আর নারী বিনে পয়সার দাসী। এই বিষয়ে রামমোহন রায় এর লেখা থেকে লেখক যা উল্লেখ করেছেন তা বড় বেশি বুকে বাধে।
ঘুরেফিরে সেই নারীকেই নানান পরামর্শ, পতিব্রতা হওয়ার, লক্ষী হওয়ার এবং উপযুক্ত সঙ্গী হতে হলে যা যা জানা উচিত।
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মধ্যবিত্ত পরিবারে দাম্পত্য সম্পর্কের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বামী ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত। পাশাপাশি স্ত্রীরা ছিলেন অশিক্ষিত, কখনও কখনও অল্পশিক্ষিত।
বিশ শতকের শুরুতে নারীপুরুষের দৈনন্দিন কাজের চিত্র অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে বেগম রোকেয়ার 'অর্ধাঙ্গী'তে। 'স্বামী যখন পৃথিবী হইতে সূর্য ও নক্ষত্রের দূরত্ব মাপেন, স্ত্রী তখন একটা বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ প্রস্থ (সেলাই করিবার জন্য) মাপেন। স্বামী যখন কল্পনা-সাহায্যে সুদূর আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রমালা বেষ্টিত সৌরজগতে বিচরণ করেন, সূর্যমন্ডলের ঘনফল তুলাদণ্ডের ওজন করেন এবং ধূমকেতুর গতি নির্ণয় করেন, স্ত্রী তখন রন্ধনশালায় বিচরণ করেন, চাউল ডাল ওজন করেন এবং রাঁধুনির গতি নির্ণয় করেন। বলি জ্যোতির্ব্বেত্তা মহাশয় আপনার পার্শ্বে আপনার সহধর্মিণী কই? বোধ হয়, গৃহিনী যদি আপনার সঙ্গে সূর্যমন্ডলে যান, তবে তথায় পঁহুছিবার পুর্ব্বেই পথিমধ্যে উত্তাপে বাষ্পীভূত হইয়া যাইবেন। তবে সেখানে গৃহিনীর না যাওয়াই ভাল'।
১।
উনিশ শতকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মোটেও ঘনিষ্ঠ ছিল না, ছিল পর্দাপ্রথা, মধ্যরাত পর্যন্ত গৃহকর্ম এবং শাশুড়ি-ননদ কর্তৃক নিগৃহীতা হওয়ার বিষয়।
লেখক উল্লেখ করেছেন এমন একটি আত্মজীবনী রচয়িতা রাসসুন্দরী দেবীর এমনই সব অভিজ্ঞতা। স্বামী সম্পর্কে তিনি এতোই লাজুক ছিলেন যে একদিন হঠাৎ স্বামীর ঘোড়া বাড়ির পেছনের আঙ্গিনায় চলে এলে তিনি তাড়াতাড়ি নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন- 'কি করি কর্ত্তার ঘোড়া পাছে আমাকে দেখে, এই ভাবিয়া ঐখানেই থাকিলাম। ইতিমধ্যে আমার বড় ছেলেটি আসিয়া বলিল, মা, ও ঘোড়া কিছু বলিবে না, ও আমাদের জয়হরি ঘোড়া, ভয় নাই। তখন আমি মনে মনে হাসিতে লাগিলাম, ছি ছি আমি কি মানুষ। আমি তো ঘোড়া দেখিয়া ভয় করি না; আমি যে লজ্জা করিয়া পলাইয়া থাকি। এতো মানুষ নহে, তবে, ঘোড়া ও আমাকে দেখলে ক্ষতি কি!'
উনিশ শতকের প্রথম দিকে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের অভিজাত পরিবারে নারীর অবস্থান মোটামুটি একই ধরণের ছিল।
শাশুড়ির নিকট বধূর ষোলো আনা আনুগত্য এমন বহুলভাবে স্বীকৃত নিয়ম ছিল যে বিয়ে করতে যাবার সময় বর সাধারণত মাকে বলতো, 'তোমার জন্যে দাসী আনতে যাচ্ছি'।
২।
উনবিংশ শতাব্দীতে হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজে একান্নবর্তী পরিবার প্রথার বিকাশ ও জনপ্রিয়তা ঘটে। আর যৌথ পরিবারে দাম্পত্য সম্পর্কে নারীর অবমূল্যায়নের বর্ণনা পাওয়া যায় নানান রচনাবলীতে।
সেই সময়ের বিভিন্ন আত্মজীবনী, কথা সাহিত্য, প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, তখন পরিবারের প্রচলিত আচার-ব্যবহার অনুযায়ী স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর দেখা হওয়ার সুযোগ কম ছিল। এই বিষয়ে শাশুড়ির ভূমিকা খুবই মর্মান্তিক। শ্বশুর বাড়িতে বধূর অবস্থা ভীষণই করুণ ছিল।
ওই সময়ে বিয়ের পর নারীদের বাবার বাড়ি যাতায়াত খুব সহজ ছিল না। এক্ষেত্রে শাশুড়ির আদেশই মূলত মুখ্য ছিল। শাশুড়ির নির্দেশ না মানলে শ্বশুর বাড়িতে মেয়ের ওপর আরো অত্যাচার বাড়তে পারে - এই ভয়ে মেয়ের বাবা-মাও চুপ করে থাকতেন।
পুত্রবধূর সঙ্গে অনেক শাশুড়িই কথা বলতেন না, এটাও বোধ হয় উনিশ শতকের অন্দরমহলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৩।
উনিশ শতকের শুরুতে সমাজে বহু বিবাহ ও বাল্যবিবাহ দুটিই সমধিক প্রচলিত ছিল। রাজা রামমোহনকে আধুনিক ভারতের জনক বলা হয়, তার জীবনেও বাল্যবিবাহ এবং বহু বিবাহের বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়।
বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, অসম শিক্ষা ছাড়াও স্ত্রীর প্রতি স্বামীর চরম অবহেলা দাম্পত্য জীবনে ফাটল ধরিয়েছে। লেখক নিয়ে এসেছেন অনেক বাস্তব উদাহরণ, বিশেষ করে অনেক বিখ্যাত সাহিত্যিকের জীবন ছাড়াও বেশ কিছু আত্মজীবনীতে ফুটে উঠেছে নারীদের নিদারুণ কষ্টের চিত্রই।
বাল্যবয়েসে বিয়ের পর দাম্পত্যজীবন অভিজ্ঞতায় আমোদীনি দাসগুপ্ত জীবনকাহিনীতে বলছেন, 'এক হাজার টাকা পণ লইয়া আমার মা এগারো বৎসরের মেয়েকে তেতাল্লিশ বৎসরের চতুর্থ পক্ষের বরের নিকট আমাকে বিক্রি করেন। এই সময় হইতেই তাঁহার শখ যে আমি তাঁহার উপযুক্ত স্ত্রীর ন্যায় বাক্যালাপ করি। কিন্তু সত্য কথা বলিতে কি তাঁহাকে দেখিলেই আমার মনে কেমন ভীতির সঞ্চার হইত। বিছানায় শুইতে গেলে চক্ষু মুদিয়া থাকিতাম। তাহাতে স্বামী বড়ই অসন্তুষ্ট হইতেন'।
৪।
মুসলমান সমাজে বহুবিবাহ বিশ শতকেও বহুলভাবে প্রচলিত ছিল। আধুনিক দাম্পত্যজীবন বলতে যা বোঝায় সপত্নীর কারণে মুসলমান তেমন পরিবারে সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারতো না।
জমিদারি পরিচালনা করে নবাব উপাধি পেলেও ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর দাম্পত্য জীবন তার সপত্নীর কারণে সুখের ছিল না, সম্ভবত সেই অতৃপ্তি, দুঃখবোধ থেকে তিনি রূপজালাল রচনা করেছিলেন।
বেগম রোকেয়ার পিতারও ছিল চার স্ত্রী। এমনকি বেগম রোকেয়ার দাম্পত্য জীবনেও ছিল নানান ছন্দোপতন। এমনকি তার স্বামীর মৃত্যুর পাঁচ মাস পর তারই সপত্নী-কন্যা ও তার স্বামীর পীড়নে ভাগলপুর ছাড়তে বাধ্য হন তার হাতে গড়া বালিকা বিদ্যালয়টি ছেড়ে।
৫।
দাম্পত্য জীবন কেন অসুখী হয়, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক তুলে এনেছেন অক্ষয়কুমার দত্তের কথা 'পরস্পর বিরুদ্ধ-স্বভাব, অসম-বুদ্ধি ও বিপরীত-মতাবলম্বী স্ত্রী-পুরুষের পাণিগ্রহণ হইলে, উভয়কেই যাবজ্জীবন বিষম যন্ত্রণা ভোগ করিতে হয়'।
একটি পত্রিকায় সেই সময় লেখা পাওয়া যায় এমন, 'স্বামী পীড়াগ্রস্থ হইলে স্ত্রী প্রাণ মন শক্তিতে তাঁহার সেবা করেন, যদি সেবার কিছু ত্রুটি হয়, স্বামীর আর ক্রোধের সীমা থাকে না; স্ত্রীর পীড়া হইলে স্বামী তাঁহার সেবা করা দূরে থাকুক পীড়ার অবস্থাও ভালো করে জিজ্ঞেস করেন না'।
৬।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নব্যশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্কের বিষয়ে নতুন চিন্তার জন্ম দেয়। বিবাহিত জীবনের বিশেষ অংশ হিসেবে স্ত্রীর ভূমিকাকে কেউ কেউ গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে শুরু করেন। উঠে আসে নারীদের শিক্ষিত হওয়ার গুরুত্বের বিষয়টি। অশিক্ষিত স্ত্রীরাও শিক্ষিত স্বামীদের নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতেন। যথার্থ শিক্ষার অভাবে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আদর্শ দাম্পত্যসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারতো না।
৭।
সে সময় গৃহের সকল কাজের দায়িত্ব ছিল নারীর ওপর ন্যস্ত। নারীর সারাদিনই ব্যয় হতো সংসারের কাজে। মধ্যবিত্ত পরিবারে দাস-দাসী, পাচক-পাচিকা রাখার রেওয়াজ থাকলেও ঘরকন্নার কাজ, পরিবারের সদস্যের সেবা করা, এমন কি রান্নার কাজও গৃহিনীকেই সামলাতে হতো।
রাসবিহারী দেবী তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করছেন, 'বিশেষত তখন মেয়েছেলের এই প্রকার নিয়ম ছিল, যে বৌ হইবে, সে হাত খানেক ঘোমটা দিয়া ঘরের মধ্যে কাজ করিবে, আর কাহারও সঙ্গে কথা কহিবে না, তাহা হইলেই বড় ভালো বৌ হইলো। সে কালে এখনকার মতন চিকন কাপড় ছিল না, মোটা মোটা কাপড় ছিল। আমি সেই কাপড় পড়িয়া বুক পর্যন্ত ঘোমটা দিয়া ঐ সকল কাজ করিতাম'।
দিনের বেলা স্বামীর সাথে কথা বলতে দিখিলে সেইরকম পুত্রবধূকে শাশুড়ি বলতেন, 'ও মা। কি বেহায়া মেয়ে তো আমি বেম্মাণ্ডে দেখিনি। ও কিনা স্বচ্ছন্দে বসে ভাতারের সঙ্গে গল্প করছে?'
যৌথ পরিবার উনিশ শতকে শ্বশুর-শাশুড়ির দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। যৌথ পরিবারে স্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখানো হতো না, বা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা বা সমর্থন ভালো চোখে দেখা হতো না।
যৌথ পরিবারে থেকেও কেউ কেউ ব্যতিক্রম ছিলেন, নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন, কেউ কেউ স্ত্রীর প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে সুন্দর ও অনুরকরণীয় দাম্পত্য সম্পর্ক তৈরীর চেষ্টা করেছিলেন।
স্বামীর ভালোবাসা ও সহানুভূতিৰ উপরই নির্ভর করে পরিবারের নারীর মর্যাদা। এর সঙ্গে অবশ্য স্বামীর উপার্জনের বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য। স্বামী উপার্জনক্ষম না হলে বধূর অবস্থা আরো বেশি অসহায় ছিল. সন্তান হলে, বিশেষ করে পুত্রসন্তান, বধূর মর্যাদা কিছুটা বাড়ত।
৮।
উনিশ শতকের মধ্যভাগ, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাধীন সম্পর্কের অভাব সাময়িক পত্রে লেখার অন্যতম বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। দাম্পত্য সম্পর্কে প্রকৃত পরিবর্তন যেভাবেই হোক না কেন সে সম্পর্কের তদানীন্তন রুপ নিয়ে যে চিন্তা করা হচ্ছে, বাঙালি-জীবনের চিরাচরিত দাম্পত্য সম্পর্কের ঐতিহ্যে এ এক অভিনব ঘটনা। এমনটি বলছেন লেখক এই অধ্যায়ে। উঠে এসেছে নানান সাহিত্য রচনার উদ্ধৃতি, যা থেকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যে সহজ ও স্বাভাবিক ছিল না তাই জানা যায়।
৯।
এই অধ্যায়ে লেখক তুলে ধরেছেন উনিশ শতকের শুরুতে দাম্পত্য সম্পর্কের বেশ কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুরুতেই আছে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের কথা, ৬ বছরের দিগম্বরী দেবী, ১৭ বছরের দ্বারকানাথের ধর্মপত্নী হয়ে ঠাকুর বাড়িতে এসে পা দিলে যেন বাড়ির শ্রীবৃদ্ধি হতে শুরু করে। অতুলনীয় রূপের সঙ্গে তার ছিল প্রচণ্ড তেজ, শাশুড়ি অলকাসুন্দরীও এই ব্যক্তিত্বময়ী বউটিকে সমীহ করে চলতেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা এবং তার নিজ জীবনের অনেক বিষয় লেখক এই অধ্যায়ে তুলে ধরেছেন, যার প্রতিটিই দাম্পত্য সম্পর্কের নানান ধারণা দিয়ে যায় তবে মন ভালো করা কিছু বিষয়ই জানতে পারি এই অধ্যায় পড়ে।
ঠাকুর পরিবারের ছেলে সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন স্ত্রী-স্বাধীনতায় পক্ষপাতি, তার স্ত্রীর প্রতি যে প্রেম এবং চিঠির মাধ্যমে যে প্রকাশ লেখক উঠিয়ে এনেছেন তা পড়ে ভালোলাগায় মুগ্ধতায় বুঁদ হয়েছি।
উঠে এসেছে সেই সময়ের আরো কিছু সুখময় দাম্পত্য সম্পর্কের কথা।
লেখক এই অধ্যায়টিতে আরো যে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন, স্বামীর ভালোবাসার পাত্রী হওয়া সে যুগের নারীর একমাত্র সাধনা ছিল। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে এসব সাধনার বহিঃপ্রকাশ খুব কম ছিল।
১০।
লেখক আলোচনা নিয়ে এসেছেন ‘স্ত্রী ও স্বামীর পরস্পর সম্বন্ধ’ উন্নয়নের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়ে।
রবীন্দ্রনাথ দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর অবদানকে স্বীকার করেছেন। মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার মধুর সম্পর্কের কথা ছাড়াও মেয়ে মাধুরীলতার সুখী জীবনের কথা উঠে এসেছে।
জ্ঞানদানন্দিনীর জীবনচরিত লিখতে গিয়ে তার মেয়ে ইন্দিরা দেবী লিখেছেন, যা লেখা হবে তাতে আছে ধাপে ধাপে একটি সাধারণ পল্লীবালিকার স্মরণীয়া রমণীতে উত্তরণের ঐতিহাসিক সংকেত। আছে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রেম ও প্রীতির অন্তরঙ্গ নিদর্শন।
(চলবে...)