লং লিভ সিস্টারহুড
প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:২৭
এবারের বইমেলায় যাওয়ার উৎকণ্ঠা ছিলো একটু ভিন্ন- জেসমিন চৌধুরী আপু! ফেসবুকের কল্যাণে আপুকে জানা, আপুর বেশ কিছু লিখা ও তার কর্মকাণ্ড সবকিছু ফলো করতে করতে কখন যে আপুকে নিজের গহীনে অনুভব করতে শুরু করেছি জানি না, তবে এইটুকু বলতে পারবো- আপুর প্রকাশিত বই ‘নিষিদ্ধ দিনলিপি’ আমাকে অনেকটা টেনে নিয়ে গেছে এবারের বইমেলায়। আমার শারীরিক অসুস্থতা ও বইমেলার অসহনীয় ভিড়- এবার আমি যাবোই না ভেবেছিলাম, কিন্তু হঠাৎই মনে হলো আমাদের এগুতেই হবে। আপুকে জানার অদম্য ইচ্ছা ও নিষিদ্ধ দিনলিপি’র টাইটেলটাই যে আমাকে আকৃষ্ট করেছিলো বেশি তা অস্বীকার করবো না।
এখন আপুর লিখা ‘নিষিদ্ধ দিনলিপি’ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই, যদিও আমি এর যোগ্যতা রাখি না তবুও।
ভিড় ঠেলে, স্টল ঘেঁটে বইটা যখন হাতে পেলাম তখন মুখে আমার বিজয়ের হাসি। কেন? ঠিক বুঝেও বুঝলাম না। বই হাতে আমার ছবিটা বরকে দিয়ে তুলালাম। বইটি হাতে পেয়েই কেন যেন এর বিষয়বস্তুগুলো আমার মাথায় ভেসে আসতে শুরু করেছিলো, আমি যেন জানিই এর মধ্যে কি লিখা আছে। যখন পড়তে শুরু করলাম, প্রতিটি শব্দ এবং বাক্য যেন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকলো।
জেসমিন আপু খুবই সরল ও নিষ্পাপ অভিব্যক্তি দিয়ে বইটি শুরু এবং এর পরিসমাপ্তি করেছেন। আপু নিজের জীবনের উদ্ধৃতি দিয়ে নারীমুক্তির পথ দেখিয়েছেন, পুরুষদের খাটো করে নয় বরং নারীদের সাহসী হওয়ার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে। চলার পথে নারীদের কত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়। কত অনাচার, যৌন ও মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়- এই সবকিছুই নিজের জীবনের আলোকে লিখে গেছেন। নিজেদের জীবনের অলিখিত কাহিনীগুলো লিখিত আকারে পড়তে পেয়ে আমি যেনো গোগ্রাসে গিলছিলাম।
আরো লিখেছেন তার মহৎ বাবার কথা যিনি একদিকে দেশপ্রেমিক এবং যোদ্ধা, আবার অন্যদিকে কঠিন একজন শাসক, যাকে আপু সময় বিশেষে নিষ্ঠুর ভেবে কষ্ট পেয়েছেন, আবার তার সেই কঠিন রূপই আপুকে মজবুত হতেও শিখিয়েছে। সেই সাথে বাচ্চাদের প্রতি মা বাবার আচরণ, যেকোনো ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সব কিছু ছাপিয়ে মানুষের মানবিকতা বা মনুষ্যত্বই যে সবচেয়ে বড়- এরকম আরো অনেক কিছুই তিনি লিখেছেন যা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে লিখে শেষ করা যাবে না, আর আমি লিখতেও চাই না কারণ আমি চাই বইটি পাঠকরা বিশেষ করে প্রতিটি মেয়ে পাঠক সংগ্রহ করে পড়ুক। জেসমিন আপু এক একটি খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছেন, যা আমার কাছে মনে হয়েছে নারীদের জীবনের এক একটি অধ্যায়। বইটিকে আমরা নারীদের সামাজিক নির্যাতনের লিখিত দলিল হিসেবে রাখতে পারি।
সবশেষে এইটুকু বলতে চাই জেসমিন চৌধুরীর মতো আমাদেরও জাগ্রত হতে হবে, নিজেদের অদৃশ্য দেয়াল আর ঘাড়ের উপর পুরুষদের গরম নিঃশ্বাস থেকে নিজেদের নিজেই মুক্ত করতে হবে।
আপু, আপনি কড়াইয়ের গরম তেলে তপ্ত হয়েছেন কিন্তু পুড়ে যাননি, নিজের জীবন সঙ্গীকে নিজেই খুঁজে বের করেছেন, নিজের জীবনের কর্তৃত্ব নিজেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সত্যিই, আপনি আমাদের অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন।