মন ছুঁয়ে যাওয়া একটি বই
প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০২০, ১৫:৩২
দিনে দিনে আমাদের বই পড়াশুনার অভ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজে নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করিনি। মাঝে মধ্যে পড়ি। তবে বেশ কিছু দিন ধরে বই পড়া শুরু করেছি। কিন্তু বেশীক্ষণ একটা বইয়ের উপর মনোযোগ ধরে রাখতে পারছি না। এর মধ্যে হঠাৎ করেই জর্জ কার্ভার বইটি আমি পেলাম। শুরুতে বইটা পড়তে ভালো লাগছিল না। কিছু অংশ পড়ার পর আমার এত ভালো লাগলো যে আমি পুরো বই একটানা পড়ে শেষ করলাম। পরে আরো তিন বার পড়ে ফেললাম। প্রতিবার মনে হলো যেন প্রথম বার বইটা পড়ছি। আসলে এটা আমার মন ছুঁয়ে যাওয়া একটি বই। আর আমার তখনই মনে হলো-এই বইটা পড়ে যা জানলাম সংক্ষিপ্ত করে তা সকলকে জানাই।
জর্জ কার্ভার তার জীবন নিজের জাতির উন্নতির জন্য উৎসর্গ করছেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর দেশসেবা প্রবন্ধে বলেছিলেন, “দেশের জন্য যে সুনামের প্রতিষ্ঠা ত্যাগ করতে পারবে না, তার আবার ত্যাগ কোথায়?” সেই কথা ধরে বলতে চাই দেশের জন্য কিছু করতে চাইলে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। জর্জ কার্ভারও তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন নিজের জাতির জন্য, কালো মানুষদের জন্য। খ্যাতির কাছে বিক্রি হয়ে যান নি। আজীবন তাঁর আদর্শ থেকে সরে যান নি। তাঁর জীবন থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই, মানুষ যে অবস্থানেই থাকুক না কেন, সেই অবস্থানে থেকেই মানুষের কল্যাণে কাজ করা যায়। যে পেশাতেই মানুষ কাজ করছে, সেখান থেকেই মানুষের জন্য কাজ করা যা, নিজের নাম যশ খ্যাতির আশা না করে।
সালটা আনুমানিক ১৮৬৪, আমেরিকার মনটনা অঙ্গরাজ্যের ডায়মন্ড গ্রোভে জন্ম জর্জ কার্ভারের। এক ক্রীতদাসীর সন্তান ছিলেন জর্জ কার্ভার। সেই সময় ক্রীতদাস প্রথা প্রচলন ছিল। ক্রীতদাস হিসেবে যাকে কেনা হতো সে মালিকের সকল কাজ আজীবন করতে বাধ্য থাকতো। জর্জ কার্ভারের মা ছিলেন একজন ক্রীতদাসী। জন্মের কয়েকদিনের মধ্যেই কার্ভার তাঁর মাকে হারান। সে তার মালিকের বাড়িতে বড় হতে থাকে। কার্ভার ছোট থেকেই ছিল রুগ্ন। কার্ভার কালো জাতির মানুষ হওয়ায় তার জন্য ছিল আরো কষ্ট। সে সময় তার জন্য শিক্ষার অধিকার ও কোন ব্যবস্থা ছিল না। কালো মানুষদের তখন শুধু ক্রীতদাস হিসেবে ক্রয় বিক্রয় করে দেয়া হতো। কার্ভারের ছোট বেলা থেকেই গাছের প্রতি ছিল টান। কোন গাছ কি ধরনের কাজে লাগে সেটা তিনি শিখেছিলেন পর্যবেক্ষণ দ্বারা। কোন গাছ রুগ্ন হয়ে পড়লে তা তিনি যত্ন দিয়ে বাঁচাতে চেষ্টা করতেন। তখন থেকেই তার ছিল নতুন কিছু আবিস্কারের আদম্য ইচ্ছে এবং যা দেখতেন তাই শিখতে চাইতেন। তার মনে উঁকি দিত অসংখ্য প্রশ্ন। ছবি আঁকার প্রচন্ড আগ্রহ কিন্তু তার কাছে কোন রং ছিল না। কিন্তু সে থেমে থাকেনি, নানা গাছের ছাল শিকড় থেকে রং তৈরি করে তার ছবি আঁকা চলতো।
কার্ভারের পড়াশোনার জন্য মনে প্রচন্ড ক্ষুধা। তাই সে তার স্থানীয় অভিভাবকের কাছে তার স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলো কিন্তু কালো মানুষের জন্য স্কুল নেই বললেই চলে। কেবল তার বাসস্থান থেকে ৮ মাইল দূরে একটি স্কুল ছিল কালো মানুষদের পড়ার জন্য। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পড়ালেখা করতে হলে অনেক কষ্ট করতে হবে। তাই সে ঠিক করলো অন্যের বাসায় কাজ করে হলেও সে পড়ালেখা করবে। বাসা ছেড়ে নিওশোতে গিয়ে কালোদের স্কুলে ভর্তি হলো। মাত্র ১০ বছরের কার্ভার যখন তার আশ্রয় থেকে বেড়িয়ে এসে তার লড়াইয়ের যাত্রা শুরু করলো। তখন তার কাছে মনে হলো পৃথিবী কত বিস্তীর্ণ এবং বড়, তাকে এই পথ পাড়ি দিতে হবে। সে যে স্কুলটাতে ভর্তি হলো সেখানে ছোট একটা রুমে ৭৫ জন ছেলে-মেয়ে নিজেদের জায়গায় টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। জর্জের ছিল প্রচন্ড শেখার আগ্রহ। সে ভাবতো অন্যেরা পারলে আমি পারবো না কেন?
মনিবের বাসায় থাকার সময় বাসার ছোট বড় সকল কাজ যেমন-রান্না করা, কাপড় ধোয়া, ইস্ত্রি করা- সব সে শিখে নিয়েছিল। পড়াশুনা করার জন্য সব কাজই করতে প্রস্তুত। স্কুলে ভর্তি হয়ে কিছুদিনের মধ্যেই সে স্কুল থেকে যতটুকু জানা সম্ভব ততটুকু শিখে নিল। ইতিমধ্যে জর্জ বুঝতে পেরেছিল সে কালো জগৎ এর অধিবাসী। একজন সাদা বালক যা ভাবতে বা করতে পারে তা নিগ্রো বালক পারে না। কার্ভার ভাবতো সব সৃষ্টির পিছনে যদি কোন উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আমাকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য কি? নিশ্চয় কোন উদ্দেশ্য আছে। নিওশোতে তার পড়াশোনা শেষ হবার পর সে চলে যেতে চায় ফোর্টস্কট। জর্জ কাভারের মনে হয় ওখানে গিয়ে যদি আরো নতুন কিছু শিখতে পারা যায়। আরো ভাবতেন দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে জ্ঞান আহরণ করে তা অন্যদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে।
নতুন স্থানে এসেই সে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কাজ খুঁজতে শুরু করলো। কোন কাজকেই তিনি অসম্মান করতেন না। তাই সে প্রতিনিয়ত নানা কাজ করতে থাকে, সেই সাথে পড়ালেখা। কারণ তার আসল উদ্দেশ্য ছিল কলেজে ভর্তি হওয়া। সে ভাবলো হাইল্যান্ড শহরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে, ছাত্র সংখ্যা কম সেখানে সহজেই ভর্তি হতে পারবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখলেন এবং তার উত্তরও এলো। সে ভাবলো এতোদিনে হয়তো ভাবে তার ছন্নছাড়া জীবনের শেষ হলো। কিন্তু সেখানেও তাকে আশাহত হতে হয়। সে যখন প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করতে গেল, প্রিন্সিপাল তখন তাকে দেখে বললো “আমরা নিগ্রোদের পড়াই না বুঝলে, এটা ইন্ডিয়ানদের বিশ্ববিদ্যালয়”। কার্ভারের তখন মনে হলো জীবনের সব আনন্দ হয়ত ফুরিয়ে গেলো, শেষ হয়ে গেলো সব। কার্ভার ভাবছিল -আমার চামড়ার জন্য কি আসে যায়, আমি আমার রং বদলাতে চাই না, শুধু বিদ্যা অর্জন করতে চাই। এ সময় সে বড় অসহায় আর বিপন্ন। তার কোন কাজ করতে ভালো লাগছিল না। ইতিমধ্যে পুরো শহর জেনে গিয়েছিল এক নিগ্রো যুবককে কলেজ থেকে প্রত্যাখানের বিষয়টা। এত কিছুর পর কার্ভার ভাবলো -আমাকে উঠে দাঁড়াতে হবে, এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। সে সরকারি জমিতে একটা খামার করতে চাইলো। সরকারের কাছে আবেদন করে ৫ বছরের জন্য ১৬০ একর জায়গা লিজ নিল চাষ করার জন্য। এমন একটি জায়গায় তার খামার করলো, সেটা ছিল একটা মরুভূমি। গাছ গাছড়া শিশু বয়স থেকেই তিনি ভালোবাসতেন। এই মরুভূমিতে বাগান করা ছিল অনেক কষ্ট। তবুও কষ্ট সহ্য করার জন্য সে প্রস্তুত। কিন্তু কিছু দিন পর জর্জ বুঝতে পারলো এই মরুভূমিতে ৫ বছর কিছুতেই থাকতে পারবে না। এখান থেকেও যে চলে যেতে হবে সেটা সে বুঝতে পারলো। কারণ তাকে পড়াশুনা করে নিজের জাতির জন্য কাজ করতে হবে। জর্জ নিজেকেই বার বার বলে চলেছে- নতুন কিছু করো, একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলো।
১৮৯০ সাল সেপ্টেম্বর মাস। জর্জ হেঁটে চলছে ইন্ডিয়ানোলার শহরের দিকে । ২৫ মাইল পথ সে হেঁটে এসেছে। আসলে জর্জ তখন যাচ্ছে সিম্পসন কলেজে ভর্তি হতে। অবশেষে সে সিম্পসন কলেজে ভর্তি হতে পারে। এই ত্রিশ বছর জীবনে সে কত কষ্টই না সে করেছে। এতদিন যা শিখেছে তার খুব কম অংশ স্কুল থেকে শিখতে পেরেছে, বেশির ভাগ শিক্ষা নিয়েছে বক্তৃতা শুনে, অরণ্যের গভীর থেকে অথবা লাইব্রেরী থেকে। এই কলেজে এসে শিখতে চাইল ছবি আঁকতে। এখন তাকে কাজ খুঁজতে হয় না, কাজই তাকে খুঁজে নেয়। তাই পড়ালেখা থাকা-খাওয়ার কোন কষ্ট হয় নি। কিছু দিন যেতে না যেতেই কার্ভার সবার প্রিয় হয়ে উঠলো। সে ছবি আঁকতে পারতো। তার হাতে আকাঁগুলো ছবি অসাধারণ হয়ে উঠতো।
কিন্তু জর্জের মনে হতো তার জাত ভাইদের কথা। তারা বড় গরীব আর অজ্ঞ। সে মনে মনে জানে এই মুহুর্তে তাদের চিত্রশিল্পী প্রয়োজন নেই। এখন তাদের জানা প্রয়োজন “কি করে মুক্ত মানুষের মত বাঁচতে হয়।” তার একমাত্র ভাবনা ছিল কীভাবে জাতির জন্য সবচেয়ে ভালো ভাবে সেবা করা যায়। একটা সময় তার শিক্ষক মিস বার্ড তাকে বলেন, “তুমি অনেক বড় কাজের জন্য জন্ম নিয়েছ জর্জ। তুমি ছবি আঁকা ছেড়ে দিও না বরং আনন্দের জন্য আঁকো।” আরো বললেন “তুমি কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়ো। তোমার জাত ভাইয়েরা কৃষক। কিন্তু তুমি মাটি সম্পর্কে কিছু জানো না, বিজ্ঞান সম্পর্কে জানো না। তুমি তাদের এই বিজ্ঞান সম্পর্কে, চাষাবাদ সম্পর্কে শিখাতে পারো। তাদের মনের দুয়ার উন্মুক্ত করতে পারো।” এরপর জর্জ কার্ভার কৃষিবিদ্যার উপর পড়তে আসে। মিস বার্ডের বাবা আইওয়া স্টেট কৃষি কলেজের উদ্যান বিদ্যার অধ্যাপক। সেই জন্যই সে এখানে পড়তে পারছিল। সে কলেজে সরকারি উদ্ভিদবিদ হিসাবে নিয়োগও পেল। সে এখানে কাজ করে খুব আনন্দ পাচ্ছে। কিন্তু দ্রুতই তাকে এখানে থেকে চলে যেতে হবে। কারণ তার বিদ্যা জমিয়ে রাখলে চলবে না, তার জাত ভাইদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
১৮৯৫ সাল। জর্জিয়া প্রদেশের আটলান্টা শহর উত্তেজনা মুখর হয়ে উঠেছে। সমস্ত তুলা চাষী উৎপাদক স্টেটগুলো তাদের প্রদর্শনী উদ্বোধন করার জন্য প্রস্তুত। সমস্ত আমেরিকাসহ সারা পৃথিবীর মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে দক্ষিণের মানুষগুলো কিভাবে তাদের রক্ষা করছে তা দেখার জন্য। তারা দেখতে চায় ক্রীতদাস ছাড়া দক্ষিণের সাদা মানুষ কিভাবে আছে। আর ক্রীতদাসরা স্বাধীনতা পেয়ে কি কাজ করছে? অন্যতম প্রদর্শনী হলো নিগ্রোদের তৈরি করা যন্ত্রপাতি। উদ্বোধন স্থলে হাজার হাজার মানুষের ভীড়। সাদা-কালা মানুষ বক্তৃতা শোনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। মঞ্চে অনেকে বসে আছে এবং এদের মধ্যে একজন কালো মানুষ। এই ভদ্রলোককে সবাই চেনে তিনি হলেন অ্যালাবামার নরম্যার এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিয়াল স্কুল এর প্রধান শিক্ষক টি.বুকার। তাকে এখানে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ডাকা হয়েছে এবং সবাই ভাবছে স্বাধীনতা পেয়ে লোকটাকে কেমন লাগছে। প্রিন্সিপ্যাল বুকার বক্তব্য শুরু করলেন- “দক্ষিণাঞ্চলের তিন ভাগের এক ভাগ হলো নিগ্রো। এদের বাদ দিয়ে কোন ভাবেই সুন্দর জীবন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, যেখানে আছো সেখানেই বালতি ডোবাও। অথাৎ যেখানে আছো সেখানেই কাজ করো। কাজের প্রতি দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠাবান হলে সফলতা আসবেই। হতে পারে কৃষিকাজে, যন্ত্রবিজ্ঞানে, ব্যবসায়ে সমাজ সেবায় সকল কাজে তোমাদের সফলতা আসবেই”।
জর্জ কার্ভার আসলেই এমনটাই ভাবছিলেন তার নিজেদের জাতির জন্য কিছু করতে। এক সময় সে সুযোগ এসে গেল, বুকার টি. ওয়াশিংটন তাকে আহবান জানালেন তার তার সাথে কাজ করার জন্য। তিনি যেন এই সুযোগটি খুঁজছিলেন। অনেক টাকা এবং ভালো সুযোগ থাকলেও তিনি তা ছেড়ে দেন। কোন কিছু চিন্তা না করে জর্জ কাভার টি. বুকারের সাথে কাজ করার জন্য টাসকিগীতে রওনা হলেন। তিনি ১৮৯৬ সালে অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের টাসকিগী ইন্সটিটিউটে, কৃষি গবেষণা বিভাগের পরিচালক হিসাবে। জীবন বাকী সময় তিনি এখানেই কাজ করেন। যাওয়ার সময় ট্রেন থেকে দেখলেন যতদুর যতদুর চোখ যায় ততদুর শুধু তুলার ক্ষেত আর জীর্ণ নড়বড়ে কুটির। জর্জ লক্ষ করলেন অতিরিক্ত তুলা চাষের ফলে গাছ কাটতে হয়েছে, জমির উর্বরতা নষ্ট হয়েছে।
তিনি তার কাজের স্থলে পৌঁছালেন। চারদিকের অবস্থা এত খারাপ দেখে ভাবছিলেন কোথা থেকে কাজ শুরু করবেন। তাছাড়া গবেষণাগারও তেমন ভাবে প্রস্তুত ছিল না। তিনি প্রথমেই প্রস্তুতি নিলেন গবেষণাগার ঠিক করার এবং এই অনুর্বর জমি থেকে কিভাবে অন্য ফসলও ফলানো যায়। এখানকার মাটি ঠিক করা গেলে অন্য ফসল ফলানো যাবে। তিনি তার পদ্ধতি পেয়ে গেলেন কিভাবে একই জমিতে অন্য ফসল চাষ করা যাবে এবং সেই সঙ্গে জমি উর্বর করার পদ্ধতি। তিনি ভাবলেন এই আবিষ্কার সকল কৃষকদের জানাতে হবে। তিনি সকল কৃষকদের এই আবিষ্কারের কথা জানালেন। সেই সাথে আরো জানালেন কিভাবে একটি খাদ্য দ্রব্য থেকে ভিন্ন খাবার তৈরি করা যায়। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত জর্জ কার্ভার কাজ করে গেছেন। কোন কাজ শুরু করলে শেষ অবধি করতেন। মাঝ পথে ছেড়ে দিতেন না। জর্জ কার্ভার তার নিজের জন্য কিছুই চান নি এমনকি সম্মান পর্যন্ত, নিজের জন্য কোন প্রচারই চাইতেন না। বরং তিনি তার নিগ্রোজাত ভাই-বোনদের উন্নতির জন্য সারা জীবন কাজ করেছেন।
আসলে এই জর্জ কার্ভার মতো লোকরা ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবীতে, তাদের নানান কাজ নানান নামের মধ্য দিয়ে। আমাদের দেশেও আছে সংখ্যায় কম হতে পারে কিন্তু সবাই একই পথের পথিক। এই বিশ্বের জন্য সমাজের জন্য কাজ করেন তাঁরা। সেই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যিনি আমাকে বইটা পড়তে বাধ্য করেছিলেন। কারণ তিনি এই বইটা পড়তে না দিলে আমি হয়ত ফাঁকিবাজ পাঠকই থেকে যেতাম। আর এই বইটা পাঠ করে আমার মধ্যে যে অনুভূতি, ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছেটাও হয়তো জাগতো না।
লেখক: সাবেক কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন