কুসুমকুমারী দাশ: আদর্শ ছেলের জননী
প্রকাশ | ২৫ মে ২০১৬, ১৭:৪৭ | আপডেট: ২৫ মে ২০১৬, ১৮:০৩
জন্ম: ২১ শে পৌষ ১২৮৯ বঙ্গাব্দ, বাখরগঞ্জ জেলার বরিশাল শহরে।
পিতা: চন্দ্রনাথ দাস, মাতা: ধনমণি।
লেখাপড়া: চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের বিরোধিতায় "গৈলা" গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে তিনি ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর বালিকাদের অভাবের জন্য স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তাঁর বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন। প্রবেশিকা শ্রেণীতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যাওয়ায় লেখাপড়া আর এগোয়নি।
বিয়ে: ১৮৯৪ সালে কুসুমকুমারী দাশ এর বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশন-এর প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাসের সাথে।
সন্তান: দুই পুত্র এক কন্যা সন্তানের জননী ছিলেন তিনি। জ্যেষ্ঠ পুত্র কবি জীবনানন্দ দাশ। আরেক পুত্র অশোকানন্দ দাশ এবং কন্যা সুচরিতা দাশ।
সাহিত্যকর্ম: ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিশুদের জন্য যে চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার বই লিখেছিলেন, তার প্রথম ভাগে কুসুমকুমারী রচিত যুক্তাক্ষরবিহীন ছোট ছোট পদ্যাংশ ছিল।
তিনি সম্পাদক মনোমোহন চক্রবর্তীর অনুরোধে লিখেছেন "ব্রহ্মবাদী" পত্রিকায়।
তাঁর অল্প কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে "প্রবাসী" ও "মুকুল" পত্রিকায়। বিয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যান।
তাঁর কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। খোকার বিড়াল ছানা, দাদার চিঠি, বসন্তে, মায়ের প্রতি, বন্দনা, উদ্বোধন, সাধন পথে, অরূপের রূপ, মনুষ্যত্ব, আদর্শ ছেলে তার উল্লেখযোগ্য কবিতা।
কাব্য মুকুল (১৮৯৬) তাঁর কাব্যগ্রন্থ।
"পৌরানিক আখ্যায়িকা" নামের একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন।
'দৈনন্দিন দিনলিপি' নামে তাঁর একটি ডায়রীও প্রকাশিত হয়েছে।
পুরস্কার: "নারীত্বের আদর্শ" এক প্রবন্ধ প্রতিযোগীতায় কুসুমকুমারী স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন।
ধর্মচর্চা: বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে কুসুমকুমারী যোগদান করতেন। তিনি ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই, বরিশাল ছাত্র সংঘের সপ্তাহকালব্যাপী মাঘোত্সবের মহিলা দিবসের উপাসনায় আচার্যের কাজ করেছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমন একটি স্বাভাবিক মর্যাদার অধিকারিণী হয়েছিলেন তিনি যে, শুধু মহিলাদের উৎসবে নয়, ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সভাতেও তিনি আচার্যের কর্মভার কাজ করেছেন।
মৃত্যু: ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউ এর বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়।