হালিদা এডিভার (এডিব): তুরস্কের নারী স্বাধিকার আন্দেলনের প্রবক্তা
প্রকাশ | ২৫ মে ২০১৬, ১৭:১১
তুরস্কের যে মহিয়সী নারী রাজনীতি এবং সাহিত্যে অসামান্য খ্যাতি অর্জন করেন তিনি হালিদা এডিভার বা এডিব নামে সুপরিচিত। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণকারী হালিদা (বাংলায় খালেদা) জাতীয়তাবাদী ছিলেন।
তিনি ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে American collage for girls at uskundar (Scutuari) থেকে প্রথমে তুর্কি নারী হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শিক্ষা বিভাগে যোগদান এবং স্কুল ইন্সপেক্টরের চাকুর গ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষাকতা করে সুনাম অর্জন করেন।
তাঁর সাথে প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী সালেহ যাকীবের বিয়ে হয়। তিনি তুর্কি নারীদের স্বাধিকার আন্দোলনে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। তাঁর প্রখ্যাত উদারপন্থী প্রত্রিকা Taninw-এ তিনি তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতা, উদারতা এবং প্রজ্ঞা প্রকাশ করে অনেক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তিনি নারীশিক্ষার প্রচারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু কট্টরপন্থী রক্ষণশীল(Conservatives)দল ক্ষমতায় আসলে হালিদা এডিবকে ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে আত্নগোপন করতে হয়।
১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর স্বামীর সাথে বিয়ে বিচ্ছেদ হবার পর তিনি সাহিত্যকর্মে আত্ননিয়োগ করেন। তিনি বহু উপন্যাস এবং আত্মজীবনী রচনা করেন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তুরস্কে ফিরে আসন এবং নারীদের শিক্ষার দাবিতে বক্তৃতা দেন এবং আন্দোলন করেন।
তিনিই সর্বপ্রথম তুর্কি নারী, যিনি তুরস্কের জাতীয় প্রতিষ্ঠান Ojak-এর সদস্য নির্বাচিত হন। এটি ছিলো জাতীয়তাবাদী মতবাদপুষ্ট সংস্থা। এসময় তুর্কি বা অটোমান খিলফত অব্যাহত ছিল। কিন্তু নারীদের ভোটাধিকার ও শিক্ষার অধিকার ছিল না। তাঁর জাতীয়তাবাদী মতবাদ প্রমাণিত হয় তার রচিত উপন্যাসে বিশেষ করে Handan এবং yeni Turan -এ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি সিরিয়া এবং লেবাননে কর্মরত ছিলেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে ডা. আদনান এডিব বা এডিভারের সাথে পরিচয় হয় এবং তাঁর সাথে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। হালিদা এডিবা তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের সাথে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি কামাল আতাতুর্কের পত্রলেখক এবং অনুবাদক ছিলেন।
পরবর্তীকালে তিনি তাঁর সামরিক বাহিনীতে প্রথমে প্রাইভেট এবং পরে কর্পোরাল হিসেবে যোগদান করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিসমাপ্তিতে হালিদা রাজনীতি ও সংগ্রাম পরিত্যাগ করে সাহিত্যচর্চায় আত্ননিয়োগ করেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে তার আত্নজীবনি (memoirs)প্রকাশিত হয়।
ডা. আদনান ও এডিব বহুবছর ইংল্যান্ডে এবং ফ্রান্সে কাটান। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তুরস্কের ফিরে যান। এরপর ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সাহিত্যচর্চা করলেও রাজনীতি থেকে তিনি দূরে ছিলেন না হালিদা এডিভ। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত গ্রান্ড ন্যামনাল এসেম্বলীর সদস্য ছিলেন।
তিনি ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।