“কস্তুরবা গান্ধী” ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে রয়েছে যার অবদান

প্রকাশ | ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:১২ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৩০

জাগরণীয়া ডেস্ক

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ মোহনদাস করমচাঁদ (মহাত্মা গান্ধী) গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধী। কাস্তুবাই নামেও পরিচিতি ছিল তার। যদিও মহাত্মা গান্ধীর বিয়ে ও পরিবারের বিষয়ে যথাযথ তথ্য জানা যায়নি। তাই কস্তুরবা গান্ধীকে আমরা অনেকেই চিনি না। তবে ধারণা করা হয়, ১৮৮৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী তার বাবা মায়ের পছন্দে কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে বিয়ে করেন। বিয়ের ব্যবস্থা করে তাদের অভিভাবক, সনাতন হিন্দু পদ্ধতিতে তাদের বিয়ে হয়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তারা একসাথে মোট বাষট্টি বছর সংসার করেন। তিনি তার স্বামীর সাথে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৪ সালের ১১ এপ্রিল তিনি ব্রিটিশ ভারতের নয়াদিল্লীতে মৃত্যুবরণ করন।

১৮৬৯ সালের ১১ই এপ্রিল ব্রিটিশ শাসিত ভারতের গুজরা্টের পোরবন্দর উপকূলীয় শহরের কাপাডিয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কস্তুরবা গান্ধী। তার পা্রিবারিক নাম কস্তুরবাই মখনজি কাপাডিয়া। তার পিতা গোকুলদাস কাপাডিয়া এবং মাতা ভিরাজকুনয়েরবা কাপাডিয়া। এই পরিবারটি গুজরাটি ব্যবসায়ীর মোধু বনিয়া প্রজাতির অন্তর্গত ছিল। কস্তুরবা প্রথম জীবন সামান্য পরিচিত ছিল। ১৮৮৩ সলের মে মাসে মাত্র ১৪ বছর বয়সী কস্তুরবা বিয়ে করেন, ১৩ বছর বয়সী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে । সনাতন হিন্দু পদ্ধতিতে বিয়ের ব্যবস্থা করেন তাদের অভিভাবক। তাদের মৃত্যুর আগপর্যন্ত তারা একসাথে মোট বাষট্টি বছর সংসার করেন। তাদের বিয়ের দিনের স্মৃতিচারণ করে কস্তরীবা বলেন, তার স্বামী একবার বলেছিলেন, “আমরা বিয়ে সম্পর্কে কিছু জানতাম না, আমাদের জন্য এটা ছিল শুধুমাত্র নতুন জামা পড়া, মিষ্টি খাওয়া এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে খেলা করা।” যাইহোক, প্রচলিত ঐতিহ্য হিসাবে, কিশোরী নববধূ বিয়ের প্রথম কয়েক বছর (তার স্বামীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া পর্যন্ত) তার পিতামাতার বাড়িতে এবং তার স্বামীর কাছ থেকে দূরে কাটিয়ে ছিলেন।

কস্তুরবা এবং গান্ধীর দাম্পত্য জীবনে পাঁচ সন্তানের জন্ম হয়েছিল, তাদের সবার বড়ছেলে হরিলালের কম বয়সে মৃত্যু হয়। এই দম্পতির পরে আরোও তিনটি সন্তান হয় যথাঃ মনিলাল, রামদাস, দেবদাস। কস্তুরবা তার প্রথম সন্তানের মৃত্যু কখনোই ভুলতে পারেননি। গান্ধী প্রথম বিদেশ যাওয়ার আগে তার প্রথম দুই সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮৮ সালে লন্ডনে পড়াশোনা করার সময় তিনি ভারতে তার নবজাতক হরিলালকে বড় করার জন্য ভারতে থাকেন। পরবর্তীতে ১৯০৬ সালে, গান্ধী নিষ্ঠুরতা বা ব্রাহ্মচার্যের অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। যখন তিনি চার সন্তানের পিতা - তখন তিনি 'ব্রহ্মচর্য' বা যৌনসম্পর্কবিরহিত জীবনযাপন শুরু করেন। গান্ধী নিজেই আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তার পিতা যখন মারা যান - তখন তিনি তার স্ত্রীর সাথে যৌনমিলন করছিলেন বলে পিতার পাশে থাকতে পারেন নি - এই অপরাধবোধ তাকে তাড়া করছিল। কিছু রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কস্তুরবা মনে করেছিলেন যে এটি এ কটি ঐতিহ্যবাহী হিন্দু স্ত্রী হিসাবে তার ভূমিকা বিরোধিতা করেছে। তাদের বিয়ের শুরুতে, গান্ধীও স্বৈরাচারী এবং চিত্তাকর্ষক ছিল; তিনি আদর্শ স্ত্রী চেয়েছিলেন, যিনি তার আদেশ অনুসরণ করবেন। যাইহোক, কস্তুরবা তার বিয়েকে দ্রুত রক্ষা করেছিল যখন একজন বন্ধু তাকে অসুখী বলে মনে করেছিল। কস্তুরবার আত্মীয়রাও জোর দিয়েছিলেন যে, সর্বশ্রেষ্ঠ ভাল থাকা এবং তার স্বামী মহাত্মার বাধ্য হওয়া। রামচন্দ্র গুহের জীবনী নির্ভর বই গান্ধী বিফোর ইন্ডিয়া থেকে নিম্নলিখিত উপসংহারের মাধ্যমে কস্তুরবার সম্পর্ককে বর্ণনা করা যেতে পারে; তারা ছিল, মানসিক এবং যৌন ইন্দ্রিয়তে, একে অপরকে সত্যই বলেছিল। সম্ভবত তাদের পর্যায়ক্রমিক, বর্ধিত পৃথকীকরণের কারণে, কস্তুরবা তাদের একসাথে সময়কে গভীরভাবে লালন করত।

১৯২৯ সালে ‘নবজীবন’ নামে একটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্রে মহাত্মা গান্ধী তার স্ত্র্রী সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘‘তার স্ত্রী কস্তুরবার মধ্যে অনেক গুণ রয়েছে৷ আবার কিছু দুর্বলতাও রয়েছে৷ যদিও স্ত্রী হিসাবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করে সব অর্থ আশ্রমের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ৷ তবুও কোথাও যেন তার মধ্যে পার্থিব সুখ পাওয়ার সুক্ষ্ম বাসনা থেকে গিয়েছিল৷’’ গান্ধী লিখেছিলেন, বিভিন্ন সূত্রে তার স্ত্রী টাকা পেতেন৷ সেই অর্থের পরিমাণ পরে হয়ে দাঁড়ায় ১০০-২০০ টাকা৷ পুরো টাকাটাই আশ্রমকে জমা না দিয়ে ৪ টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধী। সেজন্য স্ত্রীকে বিষোদগার করেছিলেন গান্ধী! কস্তুরবা পুরো টাকা আশ্রমে জমা না দিয়ে ৪ টাকা নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই অপকর্মটি ফাঁস করে দেয় চোরেরা ৷’’ মজার ছলে গান্ধী লেখেন, ওই দিন চোরেরা আশ্রমে হানা না দিলে এই ১০০-২০০ টাকার কথা জানতেও পারতেন না৷ যদিও চোরেরা সেই টাকা চুরি করতে পারেনি৷ কিন্তু কস্তুরবা ধরা পড়ে যান৷ পরে অবশ্য সে এই কাজের জন্য অনুতপ্ত বোধ করে৷ যদিও সেই অনুতপ্তবোধ খুব অল্প দিনের জন্য তার মধ্যে থেকেছিল৷ পুরোপুরি তাঁর মনের পরিবর্তন হয়নি৷ তারপরেও টাকা জমিয়ে রাখার মনোবাঞ্ছা থেকে গিয়েছিল কস্তুরবার মধ্যে৷প্রবন্ধে স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধীর অনেক প্রশংসাও করেন৷ জানান, স্ত্রী হিসাবে অনেক অনেক স্বার্থত্যাগ করেছিলেন৷ গান্ধীর আত্মত্যাগের পথে কখনও বাঁধা হয়ে দাড়াননি কস্তুরবা৷ওই প্রবন্ধে গান্ধীজী শুধুই যে স্ত্রী কস্তুরবার সমালোচনা করেছেন তা নয়, এক জায়গায় লিখেছেন তার আত্মত্যাগের কথা।

কস্তুরবা'র একটি সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনের ছিল. তিনি ভারতে মহিলাদের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।. তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতেও সক্রিয় ছিলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের কাজের পরিবেশ নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাকে কঠিন শ্রমের তিন মাস দন্ডিত করা হয়। বিশ্বযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন কস্তুরবা গান্ধী তার স্বামী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সাথে ইংল্যান্ডে ছিলেন। ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে তারা দুজনই হাসপাতাল কর্মী হিসেবে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করেন। ১৯১৪-১৫ সময়কালে কস্তুরবা গান্ধী ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় ভারতীয় একটি সামরিক হাসপাতালে কাজ করেন। ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে আহত হওয়া প্রায় ১৬ হাজার ভারতীয় সৈন্যের জন্য ওই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। ওই হাসপাতালের কাজ করা দয়ারাম থাপার বলেন, “মিসেস গান্ধী বর্ণপ্রথার জন্য জন্য কোনো ভারতীয় সৈন্য যেনো সেবা পেতে বিব্রত না হন সেটি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন”।

জাগরণীয়া.কম/ডিএ