মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল
প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৮, ১৪:২৪
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট নারীনেত্রী শিরিন বানু মিতিল। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে যে কয়জন অদম্য দেশপ্রেমিক নারী প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে তাঁর নাম ইতিহাসে সমুজ্জ্বল। পাবনা শহরের দিলালপুর মহল্লার খান বাহাদুর লজ-এ ১৯৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর শিরিন বানু মিতিল জন্মগ্রহণ করেন। পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, বামপন্থী নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু ছিলেন তিন সন্তানের জননী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রিপ ট্রাস্ট নামে একটি এনজিওর পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। পাবনার প্রীতিলতাখ্যাত বীরমুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু ৭ নম্বর সেক্টরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিলেও যুদ্ধের পর তিনি মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বা সনদের জন্য কোনো প্রকার আবেদন না করায় তাঁর কোনো সনদ নেই।
২.
গত বছরের (২০১৫) ডিসেম্বরে রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহযোগিতায় বাংলাদেশ মানবাধিকার নাট্য পরিষদের উদ্যোগে কৃতী মানুষকে সংবর্ধনা, সম্মাননা জানানোর অনুষ্ঠানে সর্বশেষ দেখা ও কথা হয়। সেই আলোকিত স্মৃতি ভুলি কী করে? মুক্তিযোদ্ধা শিরীন বানু মিতিল ছিলেন দেশপ্রেম ও সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক। দেশকে তিনি ভালোবেসেছিলেন হৃদয় দিয়ে। তাই তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংরক্ষণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও নারীমুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে আমৃত্যু নিয়োজিত রেখেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে কিছু সংখ্যক নারী মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র হাতে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, শিরিন বানু মিতিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশেষ ব্যতিক্রমী একজন।
৩.
একজন আদর্শবান মানুষ, নারী যে কত সাহসী, শক্তিশালী, দৃঢ়প্রত্যয়ী, সঠিক নেতৃত্বদানকারী হতে পারেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শিরিন বানু মিতিল। তাঁর মতোন যে সকল দেশপ্রেমিক মহান নারী দেশকে ভালোবেসে পুরুষের পাশাপাশি নিজের জীবনকে বিপন্ন করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো তাদের অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাস কখনো ভূলে যাবে না। আর তাই শিরিন বানু মিতিল আমাদের কাছে একটি সাহসের নাম—যিনি প্রথা ও প্রতিরোধ ভেঙে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে দুঃসাহসী ভূমিকা রেখে এক অনন্যদৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিলেন। তিনিই সেই অকুতোভয় একমাত্র নারী, যিনি মাত্র ২০ বছর বয়সে পুরুষের পোশাক পরে অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন।
৪.
‘মুক্তির লড়াই-এ নারী” শীর্ষক এক আলাচনা সভায় শিরিন বানু মিতিল বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নারীরা কল্পনাতীত সাহসের সাথে পুরুষের পাশে থেকে সমান তালে লড়াই করেছেন, কিন্তু বীরাঙ্গনা শব্দের মধ্য দিয়ে নারীদের যোদ্ধার চাইতে নির্যাতিত হিসেবেই বেশি বিবেচনা করা হয়। সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের লড়াই এখনও চলছে এবং নারীদের এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
৫.
শিরিন বানু মিতিল ছিলেন একটি রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আলোয় আলোকিত ছিল তাঁর পূর্ববর্তী দুই প্রজন্ম। নানা খানবাহাদুর ওয়াসীম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন পাবনার প্রথিতযশা আইনজীবী, সমাজসেবী এবং পাবনা পৌরসভার প্রথম সভাপতি ও জেলা বোর্ডের আজীবন সভাপতি। শিরিন বানু মিতিলের মা সেলিনা বানু ও বাবা খন্দকার শাহজাহান মোহাম্মদ। বাবা ছাত্রজীবন থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত কম্যুনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ছিলেন। মা ছিলেন পাবনা জেলার ন্যাপ সভানেত্রী এবং ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের এমপি। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হবার ফলে শিশু বয়স থেকেই নিজেও ছিলেন রাজনীতি সচেতন। এমন একটি পরিবারেরই মেয়ে শিরিন বানু মিতিল রাজনীতি আচ্ছাদিত পরিবার বলে তা ছিল পুরোপুরি কুসংস্কারমুক্ত। শিক্ষার আলোয় আলোকিত। জানা যায়, সেলিনা বানুর এক ভাইও সেই সময়ে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেলিনা বানু রাজনীতিতে আসেন ১৯৩৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়। পিতার প্রতিবাদী ও প্রগতিশীল রাজনীতির ধারা তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তাই তিনি তত্কালীন কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে পাবনার নানামুখী সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শিরিনকে এবং তাঁর ধারাবাহিক কাজকে সম্পূর্ণভাবে জানতে হলে তাঁর পরিবারে এই মানুষগুলো সম্পর্কে বিশদভাবে জানা দরকার। ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের সময় সেলিনা বানু মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির লঙ্গরখানায় স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে নন্দিত হয়েছিলেন। ১৯৪৬ থেকে ৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি পাবনা জেলা ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৪৯ সালে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সাথি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য খন্দকার শাহজাহান মোহাম্মদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আরেকটি কথা এখানে উল্লেখ করতে জরুরি- যুক্তফ্রন্টের সময় তাদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সেলিনা বানু এমএলএও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
৬.
শিরীন বানু মিতিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৭০-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী এবং কিছু সময়ের জন্য পাবনা জেলা মহিলা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
৭.
২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে দেশের অন্যান্য স্থানের মত পাবনা জেলাও পাকিস্তানি হানাদারদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। জারি হয় সান্ধ্য আইন৷ ২৬ মার্চ তারা রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার শুরু করে৷ সাধারণ মানুষের উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় অত্যাচার। পাবনায় প্রাথমিক প্রতিরোধ পর্ব হয় একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকেই৷ চলে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত৷ ২৭ মার্চ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয় পাল্টা আক্রমণ। ২৭ মার্চ পাবনা পুলিশ লাইনে যে যুদ্ধ সংগঠিত হয় সেখানে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। সেই যুদ্ধ রূপ নেয় জনযুদ্ধে৷ ঘরে ঘরে মেয়েরাও যুদ্ধে নামার কথা ভাবতে শুরু করে৷ তাদের অস্ত্র ছিল গরম পানি, অ্যাসিড বাল্ব, বটি আর দা৷ শিরিন বানু মিতিলের মতো সংগ্রামী মেয়েদের মানসিকতা ছিল ‘মেরে মরো'৷ শত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সহযোদ্ধা জিঞ্জিরের কাছে মাত্র ত্রিশ মিনিটে থ্রি নট থ্রি চালনা শিখে ফেলেন। কিন্তু নারী হিসেবে সে সময়কার সমাজে সম্মুখ যুদ্ধে যাওয়া ছিল খুবই কঠিন ব্যাপার। মিতিলের দুই চাচাতো ভাই জিন্দান ও জিঞ্জির যুদ্ধের ময়দানে রওনা হয় তাদের মায়ের নির্দেশে৷ এই মায়ের কথা না বললেই নয়। তিনি তাঁর ছেলেদের বলতেন, ‘তোমাদের কি মানুষ করেছি ঘরে থেকে অসহায়ভাবে মরার জন্য? মরতে হলে যুদ্ধ করতে করতে মরো৷' তিনি ছিলেন পাবনা মহিলা পরিষদের আহ্বায়ক কমিটির সভানেত্রী রাকিবা বেগম। এমন পরিস্থিতিতে মিতিলও ঘরে বসে থাকেননি৷ তাই তিনি পুরুষের পোশাক পরিধান করে, শার্ট প্যান্ট পরে কিশোর যোদ্ধা সেজে যুদ্ধে অংশ নেন।
৮.
পাবনায় ২৮ মার্চ টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ৩৬ জন পাকিস্তানি সেনার সাথে জনতার এক তুমুল যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেই যুদ্ধে তিনি ছিলেন একমাত্র নারী যোদ্ধা। এই যুদ্ধে ৩৬ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। এছাড়াও ৩১ মার্চ পাবনার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপিত হয়। ৯ এপ্রিল যমুনা নদীর তীরে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত নগরবাড়ি ঘাটে এক প্রচন্ড যুদ্ধ সংগঠিত হয়, সে সময় কন্ট্রোল রুমের পুরো দায়িত্বে ছিলেন যারা তাদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সি এবং একমাত্র নারী ছিলেন তিনি। এরপর ভারতের স্টেটসম্যান পত্রিকার সাংবাদিক মানস ঘোষ মিতিলের ছবি সহ তাঁর পুরুষ সেজে যুদ্ধ করার খবরটি পত্রিকায় প্রকাশ করে দিলে তাঁর পক্ষে আর পুরুষ বেশে যুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাঁর যুদ্ধ থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে পাবনা শহর পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা দখল হলে তিনি ২০ এপ্রিল সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত নারীদের একমাত্র প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গোবরা ক্যাম্পে যোগ দেন। পরবর্তীতে মেজর জলিলের নেতৃত্বে পরিচালিত ৯নং সেক্টরে যোগ দেন। নাচোল বিদ্রোহের নেত্রী ইলা মিত্রের বাসায় কাটাতে হয়েছে তাঁকে কিছুদিন৷ প্রথমে কয়েকজন নারী বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে ঘুরে ঘুরে মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দল গঠন শুরু করেন৷ তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি৷ অবশেষে ৩৬ জন নারী নিয়ে গোবরা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শুরু হয়৷ আস্তে আস্তে সদস্য সংখ্যা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে সদস্য ছিল ২৪০ এর ওপরে৷ সেখানে প্রশিক্ষণ নেন তিনি৷ পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কলকাতায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিতে থাকেন। অস্ত্রের অভাব থাকায় মহিলা গ্রুপের হাতে অস্ত্র সরবরাহ করা সম্ভব ছিল না৷ তাই প্রথম দলের একটি অংশ আগরতলায় যায় মেডিক্যাল কোরের সদস্য হিসেবে৷।বাকিরা বিভিন্ন এলাকায় ভাগ হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেন।
৯.
মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল ১৯৭৯ সালে রাশিয়ার মস্কোয় অবস্থিত ফেন্ড্রশিপ বিশ্ববদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অজর্ন করেন। ১৯৮০ সালে মস্কো হতে দেশে ফিরে বাংলাদেশ সরকার এর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত ‘ওরাল রিহাইডেশ্রন প্রজেক্ট’ এর রাজশাহী বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে ১৯৮২-১৯৮৭ পর্যন্ত উপ পরিচালক, পল্লী শিক্ষা ও নারী উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে প্রিপ ট্রাস্ট নামক বেসরকারি সংস্থায়, জেন্ডার ও গভর্নেন্স ইউনিট এর পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
১০.
শিরিন বানু ছিলেন মাতৃভূমির সুযোগ্য সন্তান। তাঁর প্রয়াণে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে ‘অনন্য সাহসী কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী যথার্থই বলেছেন,‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জীবনের এক মহা ইতিহাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক বলিষ্ঠ অধ্যায়। সেই বলিষ্ঠতাকে প্রবল প্রাচুর্য ও সাহসের ঐশ্বর্যে ভরিয়ে দিয়েছিল পূর্ব বাংলার বিপুল তরুণ দল। সেই প্রদীপ্ত তারুণ্যের অত্যাশ্চর্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন শিরিন বানু মিতিল। পাবনার মেয়ে। দখলদার হায়েনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে এক দুরন্ত যৌবনের লড়াকু প্রতীক হয়ে দেদীপ্যমান।’
১১.
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নারীর অবদান অনেক। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নারী কখনো গেরিলা যুদ্ধে,কখনও সম্মুখ যুদ্ধে, কখনো সেবিকা, কখনো বার্তাবাহক হিসেবে অনেক অবদান রেখেছেন। অনেক নারী শহীদ হয়েছেন,অনেকে তাদের স্বামী,সন্তান,বাবা,ভাই হারিয়েছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। অথচ নারীদের অবদান স্বীকার করতেই আমাদের যতো কৃপণতা। অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদার লড়াইয়ের অসীম সাহসী এই বীর নারীকে আজ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। সারা জীবন দেশকে ভালোবেসে দেশের জয়গান গেয়েছেন, জীবনকে উৎসর্গ করার সাহস দেখিয়েছেন। তাই তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। শিরীন বানু মিতিলের মতো দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ও তাঁকে অনুসরণের মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদেরই আলোকিত করতে পারি।
১২.
দুঃসাহসী এ মুক্তিযোদ্ধার অবদান ও সাহসিকতা সর্বজন স্বীকৃত। মুক্তিযুদ্ধে তার অংশগ্রহণ ও অবদান নিয়ে কোন প্রশ্ন না থাকলেও, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অজুহাতে দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখা হয় তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থগিত করে রাখা হয়েছে তার নাম। পাবনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত প্রায় প্রতিটি গ্রন্থ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণায় তার গৌরবগাঁথা উচ্চারিত হলেও অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রশাসনের তথ্য বাতায়নে সংযুক্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ছিলো না তার নাম ও অবদানের কথা। মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের যথাযথ মূল্যায়নের সময় চলে গেছে অনেক আগেই। আমরা অনেক দেরী করে ফেলেছি এই সব সাহসী আর মহান নারীদের সন্মানিত করতে। আমাদের প্রিয় লাল সবুজ পতাকার পুরুষের রক্তের পাশাপাশি মিশে আছে নারীর রক্ত, নারীর আত্মত্যাগ। সকল নারীর এই মহান আত্মত্যাগের যথাযথ সন্মান জানাতে হবে।
১৩.
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য আমরা তাঁর নিকট কতৃজ্ঞ। সাহসী, সরল, মায়াবী, স্নেহপ্রবণ, ঋজু এই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি অশেষ ভালোবাসা, অসীম শ্রদ্ধা। বীর মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল আজীবন মুক্তিযোদ্ধাই থেকেছেন।
(তথ্যসূত্র : বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট)