ভাষা আন্দোলনের সৈনিক অধ্যাপক রওশন আরা চৌধুরী
প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৫৪ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:০৭
ভাষা আন্দোলনে তেজি আপসহীন সৈনিক অধ্যাপক রওশন আরা চৌধুরী। তিনি বায়ান্ন সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমতলার সভায় উপস্থিত হন। কারফিউ ভঙ্গ করে সেদিন ১০ জন ১০ জন করে আমতলার সভায় যোগ দেন। তিনি সেখানে গিয়ে মিলিত হন অসংখ্য প্রতিবাদী মুখের সঙ্গে। একের পর এক বক্তৃতা শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুলিশের লাঠিপেটা আর কাঁদানো গ্যাসের মুখে পড়েন তিনি। চারদিকের পরিস্থিতি সামলাতে অধ্যাপক রওশর আরা চৌধুরীসহ অনেকে ঢুকে পড়েন কলাভবনে।
শুরু হয় গণগ্রেপ্তার। দুটি গাড়ি ভরে ছেলেদের নিয়ে যেতে দেখে অধ্যাপক রওশন আরা চৌধুরী সামনে এগিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকেসহ আরো ২৫ জন মেয়েকে পুলিশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় লাগবাগ থানায়। দুপুরের দিকে তাদের জেলে পাঠানো হয়। রাজবন্দিরা যে ওয়ার্ডে থাকতেন, সেটি খালি করে সেখানেই রাখা হলো ২৫ জন ছাত্রীকে একসঙ্গে। এঁদের মধ্যে কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেউ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আবার কেউ মিটফোর্ড মেডিকেলের ছাত্রী ছিলেন। প্রতিবাদী মেয়েদের এক মিলনস্থলে পরিণত হলো কারাগার। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ৯টায় খাবার এলো সবার জন্য।
প্রতিবাদী মেয়েদের পরিবারের লোকজন আসতে শুরু করলেন কারাগারে। পরিবারের চাপে তখন বন্ড সইয়ের পালা। বন্ডগুলো ছিলো রকমারি: এধরনের কাজে ভবিষ্যতে আর কেউ অংশগ্রহণ করবে না, আগের কাজের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু অধ্যাপক রওশন আরা চৌধুরীসহ আরো ১০-১২ জন বন্ডে সই দিতে রাজি হলেন না। তিনি বলেন, ‘একদিন আমার বাবা কীভাবে জানতে পেরে আমাকে কারাগারে দেখতে এলেন। আমাকে বন্ড দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলেন। কিন্তু আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারলাম না।’
যাঁরা বন্ডে সই দিলেন না তাদের মধ্যে রয়ে গেলেন অধ্যাপক রওশন আরা চৌধুরী। কোন ভাবেই তারা অপশক্তির কাছে মাথা নত করলেন না। ১২ দিন পর তাদের মুক্তি মিলল কারাগার থেকে। ১৯৫২ সালে সালমান-বরকতের রক্তে ভেজা বাংলার মাটিতে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সময় লেগেছিল প্রায় চার বছর। ১৯৫৬ সালে এ দাবি আদায় হয়।
১৯৫৫ সালকে অধ্যাপক রওশন আরা চৌধুরী বিশেষ বছর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সেই উত্তাল সময়ের অনুভুতি একটি বাক্যে বর্ণনা করেন, ‘সে এক অপূর্ব উম্মাদনা, দেশপ্রেম, ভাষার জন্য মমতা; এখনো গা শিউরে ওঠে, চোখ ভিজে ওঠে।’
তথ্যসূত্র: বায়ান্নর ৫২ নারী, সুপা সাদিয়া