রাণী ভিক্টোরিয়া: রাজতন্ত্রের এক অনন্য সংস্কারক

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০১৮, ০৩:৩৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

ব্রিটেনের রাজতন্ত্র পুনঃনির্ধারণের অগ্রদূত রাণী ভিক্টোরিয়া। সামাজিক দায়বদ্ধতাকে রাজপরিবারের সাথে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে রাণী ভিক্টোরিয়া এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভারতের সম্রাজ্ঞী পদবীতে ভূষিত হয়েছিলেন। 

জন্ম: ১৮১৯ সালের ২৪ মে লন্ডনের কেনসিংটন প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন রাণী ভিক্টোরিয়া। পুরো নাম আলেকজান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়া। তিনি ছিলেন ডিউক অব কেন্ট এডওয়ার্ডের একমাত্র সন্তান। ভিক্টোরিয়ার বয়স এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ১৮২০ সালে তার বাবা মারা যান।

শৈশব ও কৈশোর: রাণী ভিক্টোরিয়ার শৈশব ছিল দুর্বিষহ। সেইসময় রাজপরিবারে প্রচলিত ‘কেনসিংটন সিস্টেম’ এর কারণে ভিক্টোরিয়াকে সবসময় তার মায়ের সাথে শেয়ার করে থাকতে হতো। ব্রিটেন সৈন্যের অন্যতম চৌকস অফিসার জন কনরি সবসময় তাকে রাজপরিবারের কঠোর নিয়মের মধ্যে বন্দি করে রাখতেন। এসব নিয়ে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিন কেটেছে ছোট ভিক্টোরিয়ার। কখনো একা না থাকলেও তার শৈশব ছিল একাকীত্বের। সমবয়সী কারো সাথে মেশার সুযোগ তার কখনো হয়নি। জানা যায়, মুকুট মাথায় দেয়ার পর তিনি প্রথমেই তার মায়ের আলাদা শয়নকক্ষের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া জন কনরিকে রাজপরিবারে নিষিদ্ধ করেন।

সিংহাসনে আরোহণ: রানী ভিক্টোরিয়ার চাচা চতুর্থ উইলিয়ামের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে রাজসিংহাসনে আরোহণ করেন রাণী ভিক্টোরিয়া। ১৮৩৭ সালের ২৮ জুন ছিল রাণীর সিংহাসনে বসার দিন। প্রথা অনুযায়ী ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে রাণীর মাথায় মুকুট পরিয়ে দেয়া হয়। উপস্থিত জনতা রাণী দীর্ঘজীবী হোক বলে স্লোগান দিতে থাকে।

রাণী তার রাজত্বের শুরুতে বেশ কিছু রায় দেন যা আবেগতাড়িত, শাসনকাজে আবেগের স্থান দেয়াকে কেন্দ্র করে সাধারণ জনগণের মাঝে রাণীর ইমেজের বিষয়ে এক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকেই মনে করেন, লেডী ফ্লোরা হেস্টিংস কেলেঙ্কারি মূলত রাণীর একচোখানীতির শিকার।​

১৮৪০ সালে মামাতো ভাই অ্যালবার্টকে বিয়ে করেন রাণী। সেসময় রাণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার সাহস কারো ছিল না। তাই প্রথা ভেঙে রাণী নিজেই অ্যালবার্টকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তাদের ঘরে ৯টি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। রাণীর আর  অ্যালবার্ট এর মধ্যে সুমধুর সম্পর্ক ছিল। তারা পাশাপাশি বসে ব্রিটেনের কাগজপত্র দেখতেন। রাণীকে ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ পছন্দ করলেও অ্যালবার্ট কখনোই সাধারণ মানুষের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেননি। ১৮৬১ সালে মাত্র ৪২ বছর বয়সে অ্যালবার্ট মৃত্যুবরণ করেন। অ্যালবার্ট এর মৃত্যুর পর রাণী ভীষণ ভেঙে পড়েন। দীর্ঘদিন তিনি রাজকার্য থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন। পরে অবশ্য আবারো কাজ শুরু করেন। শোকের চিহ্ন হিসেবে তিনি কালো পোষাক পরিধান শুরু করেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি কালো পোষাক পরিধান করেছিলেন।

১৮৫৪ থেকে ১৮৫৬ সময়কালে রাশিয়ার ক্রিমিয়ায় যুদ্ধরত ব্রিটেন সৈনিকদের প্রতি সহমর্মী হয়ে উঠেন রাণী ভিক্টোরিয়া। ক্রিমিয়ার ঐ যুদ্ধের ভয়বহতার পাশাপাশি শীতের তীব্রতায় নানা দুর্ভোগে পড়ে ব্রিটিশ সৈন্যদল। যদিও সেসময় সামরিক প্রসঙ্গে নাক গলানোর ক্ষমতা ব্রিটেনের রাজপরিবারের ছিল না। কিন্তু প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে রাণী মোজাসহ নানা শীতের সামগ্রী সাহায্য হিসেবে পাঠান। এছাড়া যুদ্ধে স্বামী হারানো নারীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে চিঠি লেখেন তিনি। এছাড়া সৈন্যদের সম্মানিত করতে পদক চালু করেন।

১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ভারতের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্রিটেন। ১৮৭৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রয়েল টাইটেল অ্যাক্ট পাশের মাধ্যমে ভারতের সম্রাজ্ঞী হন রাণী ভিক্টোরিয়া। ভারত উপমহাদেশকে রাণী ভিক্টোরিয়া খুবই পছন্দ করতেন। গর্বের সাথে ভারতকে মুকুটের মণি হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

১৮৪০ সাল থেকে ১৮৮২ সালের মধ্যে তিনবার রাণীকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালানো হয়। এসব আক্রমণ রাণীর জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে তোলে।

মৃত্যু: ১৯০১ সালে ৮২ বছর বয়সে মারা যান রাজতন্ত্রের এক মহিয়সী নারী রাণী ভিক্টোরিয়া। তার মৃত্যুর পর বড় ছেলে এডওয়ার্ড সিংহাসনে বসেন।

সূত্র:উইকিপিডিয়া​​ 

 

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত