বেগম রোকেয়া: বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত
প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:৫৮ | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৫০
বাংলার পশ্চাৎপদ মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। তার পিতার নাম ছিল মুহম্মদ নূর সাহেব আবুল কামু সাবের জহিরুদ্দীন মুহমদ আবু আলী হায়দার সাবের। তার মাতার নাম রাহাতন্নেছা সাবেরা চৌধুরানী। পিতা ও মাতার দিক থেকে বেগম রোকেয়া উচ্চবংশীয় এবং জমিদার শ্রেণীভুক্ত। কুর্সিনামা থেকে জানা যায় যে, তার পূর্বপুরুষ ইরানের তাব্রিজ শহর থেকে ভাগ্যান্বেষণে ভারতবর্ষে আসেন এবং বাংলার রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ অঞ্চলে জমিদারি স্থাপন করেন। পায়রাবন্দের জমিদারি সম্বন্ধে বেগম রোকেয়া বলেন, “আমাদের অবস্থা সচ্ছল ছিল-আমরা প্রায় সুখে খাইয়া পরিয়া গাভরা গহনায় সাজিয়া থাকিতাম….আমাদের এ অরন্য-বেষ্টিত বাড়ির তুলনা কোথায়! সাড়ে নিত বিঘা লাখেরাজ জমির মাছখানে কেবল আমাদের এই সুবৃহৎ বাটী।”
বংশপরিচয় প্রসঙ্গে বলা যায় যে, বেগম রোকেয়ার পিতার চার স্ত্রী ছিলেন এবং এদের মধ্যে একজন ছিলেন বিদেশী নারী। বেগম রোকেয়ার মা ছিলেন প্রথম স্ত্রী এবং তারা ছিলেন দুই ভাই এবং তিন বোন। রোকেয়া ছিলেন দ্বিতীয় কন্যা, তার বড় বোনের নাম করিমুন্নেসা, এবং ছোট বোন ছিলেন হোমেরা। একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, রোকেয়ার পরিবার ছিল খুবই উচ্চশিক্ষিত। শুধু তাই নয় তারা সমাজসচেতন ছিলেন, শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতেন। সাহিত্যসেবীও ছিলেন। তা সত্ত্বেও এই পরিবারে পর্দাপ্রথা কঠোরভাবে পালিত হত। শুধু পুরুষমানুষ বা পরপুরুষই নয় অনাত্মীয় নারীদের সামনেও পর্দা করতে হত। পরিবারের অন্যান্য নারীদের মতো বেগম রোকেয়াও শৈশবকাল থেকে ছিলেন গৃহবন্দিনী। ছেলেদের লেখাপড়ার সুযোগ থাকলেও পায়রাবন্দের মেয়েদের শিক্ষালাভের তেমন কোন সুযোগ ছিল না। কেবল পবিত্র কুরআন পাঠ ছাড়া অন্য কোন বিষয় পাঠ করার কোন বিধান ছিল না। ফলে বেগম রোকেয়ার কোন বিদ্যালয়ে গিয়ে বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ হয়নি। তিনি গৃহে আবদ্ধ থেকেই বড় বোন করিমুন্নেছার কাছ থেকে বাংলা এবং বড় ভাই ইব্রাহিম সাহেবের কাছ থেকে ইংরেজী ভাষা শিক্ষালাভ করেন। তার বড় ভাই রোকেয়াকে ইংরেজী ভাষা শিক্ষালাভে উৎসাহ দিয়ে বলতেন, “বোন, এই ইংরেজী ভাষাটা যদি শিখে নিতে পারিস, তা হলে তোর সামনে এক রত্নভান্ডারের দ্বার খুলে যাবে।”
মাত্র ষোলো বছর বয়সে বিহারের ভাগলপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার বিয়ে হয়। ১৮৯৮ খ্রিঃ তিনি খান বাহাদুর সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। উল্লেখ্য, বেগম রোকেয়া ছিলেন সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী। স্বামীর সাথে তার বয়সের তারতম্য থাকলেও তাদের বিবাহিত জীবন ছিল সুখের। রোকেয়া-জীবন গ্রন্থে তাদের মধুর দাম্পত্যজীবনের আলেখ্য ফুটে উঠেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের দুটি কন্যাসন্তান জন্মের অল্প কয়েক মাসের মধ্যে মারা যায়। ১৯০৯ খ্রিঃ দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে সাখাওয়াত হোসেন মৃত্যুবরণ করলে বেগম রোকেয়া বৈধব্য জীবন বেছে নেন এবং সমাজসেবামূলক কাজ ও সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন।
বেগম রোকেয়া স্বামীর মৃত্যুর পর ভাগলপুরের ভিটামাটি ছেড়ে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন। প্রতিবাদী রোকেয়া নারী স্বাধিকার ও সমঅধিকারের প্রবক্তা ছিলেন। দীর্ঘ তেইশ বছরের বৈধব্যজীবনে তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে তার শিক্ষাবিস্তার প্রচেষ্টা এবং নিরলস সাহিত্যচর্চার ভেতর দিয়ে। পুরুষশাসিত কূপমন্ডুক সমাজের গন্ডি থেকে অবগুন্ঠনবতী ও অবরুদ্ধ মুসলিম নারীকে মুক্ত করতে যে মহতী প্রয়াস তিনি করেন, তা তার অসাধারণ প্রতিভা ও সমাজসচেতনাতারই পরিচায়ক। তিনি কোনদিন হীনম্মন্যতায় ভোগেননি এবং পশ্চাৎপদ মুসলিম নারীসমাজের অগ্রগতির জন্য শিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে শুধু চিন্তাভাবনাই করেননি, তার স্বপ্নের রূপায়নে বাস্তব পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন।
১৯০৯ খ্রিঃ মুসলিম নারীসমাজের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারের জন্য তার স্বামীর মৃত্যুর দু'বছর পর অর্থাৎ ১৯১১ খ্রিঃ কলকাতার ১৩ নম্বর ওয়ালিউল্লাহ লেনের একটি বাড়িতে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লাস স্কুল স্থাপিত হয়। এর আগে কলকাতায় মুসলমান নারীদের জন্য দুটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমটি ১৮৯৭ খ্রিঃ মুর্শিদাবাদের নবাব বেগম ফেরদৌসী মহলের পৃষ্ঠাপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৯ খ্রিঃ দ্বিতীয় বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন সোহরাওয়ার্দির মাতা খুজিস্তা আক্তার বানু। এ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মুসলিম নারী জাগরণ ও সমাজকর্মে কি প্রভাব ছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। বেগম রোকেয়ার একাগ্রতা, নির্ভীকতা এবং আত্মপ্রত্যয়ের ফলে মুসলিম সমাজের পরিবর্তনের ঢেউ ক্রমশ লক্ষগোচর হতে থাকে। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল প্রথমে ছিল প্রাথমিক স্কুল; পরে ১৯১৪ খ্রিঃ এটি উচ্চ প্রাইমারি বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। এ-সময় ছাত্রীসংখ্যা ছিল ৮৪। উল্লেখ্য, রক্ষণশীল পরিবারের অন্তপুরিকা বেগম রোকেয়া কোন স্কুল বা কলেজের শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু অবহেলিত মুসলিম নারীসমাজের জাগরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল স্থাপন করে শিক্ষার যে আলো বিস্তার করেন, তা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলার ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
পারিবারিক পরিমন্ডলে স্বামীর অনুপ্রেরণায় তার মৃত্যুর পর মাত্র পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে তার কোন পূর্বঅভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি কলকাতার বেথুন ও গোখেল মেমোরিয়াল প্রভৃতি স্কুলে গিয়ে প্রথমে স্কুল পরিচালনা সম্বন্ধে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল ১৯৩০ খ্রিঃ বেগম রোকেয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমে একটি উচ্চ ইংরেজী বালিকা বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। তার এই কাজের প্রশংসা করেন ব্রিটিশ-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী সরোজিনি নাইডু। তিনি তাকে একটি চিঠিতে লেখেন, “কয়েক বছর থেকে দেখছি যে আপনি কি দুঃসাহসের কাজ করে চলেছেন। মুসলিম বালিকারদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য আপনি যে কাজ হাতে নিয়েছেন এবং তার সাফল্যের জন্য দীর্ঘকালব্যাপী যে কাজ হাতে নিয়েছেন, তা বাস্তবিকই বিস্ময়কর।”
শিক্ষার মাধ্যমে নারীসমাজকে আধুনিক প্রগতিশীল করাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। বেগম রোকেয়া ১৯২৬ খ্রিঃ বঙ্গীয় নারীশিক্ষা সমিতির সম্মেলনে শিক্ষাবিস্তারে তার দীর্ঘ ২৬ বছরের সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেন। শিক্ষা যদি জাতীর মেরুদন্ড হয়, তাহলে স্ত্রীশিক্ষা নিশ্চিতভাবে এর একটি অবিচ্ছেদ অঙ্গ। তিনি সমাজ ও রাজনীতির অঙ্গনে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান সুযোগ সৃষ্টির জন্য আন্দোলন করেন, আমেরিকার নারী স্বাধিকার আন্দোলনে সুসান বি. অ্যাস্থনি ঠিক যেমনটা করেছিলেন। কলকাতায় সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে পুরুষশাসিত সমাজের সমাজপতি ও রক্ষণশীল গোঁড়াপন্থি মোল্লাশ্রেণীর কিছু লোক নানা বিঘ্ন সৃষ্টি করে। তারা অপপ্রচার করে বলে, “যুবতী বিধবা স্কুল স্থাপন করে নিজের রূপ-যৌবনের বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন।” এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখার জন্য বেগম রোকেয়া তার নিজস্ব জমিদারি থেকে প্রাপ্ত আয়ের বহুলাংশ স্কুলের জন্য ব্যয় করেন। তিনি স্কুলের সুপারিনটেন্ডেন্ট ও প্রধান শিক্ষয়িত্রী হিসেবে কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন না। তিনি বিলাসবহুল জীবন-যাপন না করে কৃচ্ছতা সাধন করে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আত্মত্যাগ করেন। তিনি একাধারে সমাজসেবী ও শিক্ষাপ্রসারে অগ্রণী নেত্রী ছিলেন। বাংলার অবহেলিত মুসলিম নারীসমাজের জাগরণের জন্য বেগম রোকেয়া তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক এবং আফগানিস্তানের বাদশাহ আমানুল্লাহ এর আদর্শকে গ্রহণ করেন। আফগানিস্তানের মধ্যযুগীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করেন বাদশাহ্ আমানুল্লা। তিনি এবং তার স্ত্রী রানি সুরাইয়া শিক্ষাবিস্তারে বিশেষ অবদান রাখেন। বাদশাহ্ আমানুল্লাহর শাশুড়ি বেগম তরজি কাবুলে ছয়টি বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন। বাদশাহ্ নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য আফগান নারীদের ইউরোপ ও তুরস্কে পাঠাতেন প্রশিক্ষণের জন্য।
বাংলার মুসলিম নারীসমাজের অগ্রগতি সাধনের জন্য বেগম রোকেয়া ১৯১৬ খ্রিঃ ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ নামে একটি মুসলিম নারী সমিতি স্থাপন করেন। এই সমিতির কার্যক্রম প্রসংঙ্গে মোতাহার হোসেন সুফি তার ‘বেগম রোকেয়া: জীবন ও সাহিত্য’ গ্রন্থে বলেন, "জাতিগঠনমূলক কাজের জন্য আঞ্জুমান নাম ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। আঞ্জুমান অজস্র বিধবা রমণীকে অর্থসাহায্য করেছে। চরিত্রহীন স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে বহু অসহায় বধূকে রক্ষা করেছে, বয়ঃপ্রাপ্ত দরিদ্র কুমারীকে সৎপাত্রস্থ করেছে, অভাবগ্রস্থ মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণে নানাভাবে সাহায্য করেছে"। কলকাতায় Bengal Womens’ Education Conference-এর সভায় বেগম রোকেয়া সভানেত্রীর আসন অলঙ্কৃত করেন। তিনি উদার মনোভাবাপন্ন ছিলেন এবং সমাজের সকল কুসংস্কারকে স্বচ্ছ দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করতেন। তিনি অবরোধপ্রথার বিরোধী হলেও পর্দাপ্রথাকে সমর্থন করতেন। অবশ্য যে পর্দা নারীকে অবগুন্ঠনবতী করে, তিনি তার ঘোর বিরোধ ছিলেন। তিনি নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন। এ-কথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, বেগম রোকেয়ার আত্মত্যাগ ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বাংলার মুসলিম নারীজাগরণ ও মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়। ১৯৩৯ খ্রিঃ বেগম শামসুন্নাহার মাহমুদ বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনে নারী শাখার সভানেত্রী হিসেবে এক ভাষণে বলেন, “মুসলিম নারী প্রগতি যে পথে চলছে তার পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। মোটকথা হচ্ছে এই যে, পাষাণকারা ভেঙেছে। অবরোধের প্রাচীর মুসলমান মেয়েদের আর আবদ্ধ করে রাখতে পারছে না। যুগ-যুগান্তের পুঞ্জিভূত অন্ধকার ভেদ করে মুসলিম নারী আলোকের রাজ্যে প্রবেশ করেছে।” বলা বাহুল্য, মুসলিম নারীর ‘আলোকের রাজ্যে’ প্রবেশের প্রাথমিক মুখ্য কৃতিত্বটুকু বেগম রোকেয়ারই।
মুসলিম নারী সমাজে শিক্ষাবিস্তার, নারীমুক্তি ও প্রগতির আন্দোলন ছাড়াও বেগম রোকেয়া সাহিত্যক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার স্বামী বিহারি ছিলেন এবং পরিবারে উর্দু ও ফারসি ভাষায় ব্যাপক প্রচলন সত্ত্বেও বেগম রোকেয়া মাতৃভাষা বাংলায় সাহিত্যচর্চা করেন। সৃজনশীল সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তিনি মুসলিম নারীজাতিকে কূপমন্ডুকতা, কুসংস্কার ও গোঁড়ামি থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেন।
বেগম রোকেয়া তার নিজস্ব প্রকাশভঙ্গি, স্বকীয়তা ও স্বীয় বৈশিষ্ট্য দ্বারা সমসাময়িক নারীদের সাহিত্যকর্ম অতিক্রম করতে সক্ষম হন। এ-প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাহিত্যিক কাজি আবদুল ওদুদ বলেন, “বাস্তবিকই মিসেস আর. এস. হোসেন (রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন) একজন সত্যিকার সাহিত্যিক, তার একটি বিশিষ্ট Style আছে। সেই Style-এর ভিতর দিয়ে ফুটেছে তার তীক্ষ্ম দৃষ্টি আর কান্ডজ্ঞান আর বেদনাভরা অথবা মুক্তি অভিসারী মন।” বেগম রোকেয়া বৈচিত্রপূর্ণ সাহিত্যজীবনে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে ‘মতিচুর’ (১ম ও ২য় ক্ষন্ড), ‘Sultana’s Dream’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘পদ্মরাগ’ ও ‘অবরোধবাসিনী’। এ-সমস্ত গ্রন্থ রোকেয়ার কাব্যপ্রতিভার স্বাক্ষর বহন করেছে। তার কবিতাগ্রন্থের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্যোগ্য ‘বাসিফুল’, ‘শশধর’, ‘চাঁদ’, ‘নলিনী ও মুকুদ’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘সওগাত’, ‘আপীল’, ‘নিরূপম বীর’। এ-ছাড়া তিনি কয়েকটি ব্যঙ্গধর্মী রচনা লেখেন, যেমন ‘পরী-ঢিবি’, ‘তিনকুড়ে’, ‘বলিগর্ত’, ‘পঁয়ত্রিশমণ খানা’, ‘বিয়েপাগলা-বুড়ো’। প্রবন্ধকার হিসেবেও তিনি যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন। তার রচিত প্রবন্ধের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘সিসেম ফাঁক’, ‘চাষার দুক্ষু’, ‘এন্ডিশিল্প’, ‘বঙ্গীয় নারী শিক্ষা সমিতি’, ‘লুকানো রতন’, ‘রাণী ভিখারিণী’। এ সমস্ত প্রবন্ধাদি রোকেয়া রচনাবলিতে সংকলিত হয়েছে।
রোকেয়ার কাব্যপ্রীতি অতুলনীয়, তার ‘বাসিফুলে’ আছে-
“পিসিমা! তোমার তরে আনিয়াছি ফুল
এত বলি আমি ছুটি
হাতে দিল ফুল দুটি
চেয়ে দেখি, আনিয়াছে দুটি বাসিফুল।”
এই পঙক্তিতে পিসিমা (ফুপু) এবং ভাইপোর রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ‘বাসিফুল’। বিধাতার বিধানে পিসিমার কাছ থেকে বাসিফুলের মতো ভাইপো ঝরে পড়ে মৃত্যুবরণ করে।
অপর একটি কবিতা ‘শশধর’ (চাঁদ)। এটিতে বলা হয়েছে:
“কি দেখিছ, শশধর! আমার হৃদয়?
তোমারি, কলঙ্কসম অন্ধকারময়!
শুধু পাপ, তাপ, ভয়
শোকে পূর্ণ এ হৃদয়,
এহনে উজ্জ্বল শুভ্রসরলতাময়।
কি দেখিবে, শশধর এ পোড়া হৃদয়?”
এই কবিতায় কবি চাঁদের প্রতি খুবই সহানুভুতিশীল এবং তার কলঙ্কের জন্য আফসোস করেছেন। তিনি শশধরের দুঃখমেটাতে উৎসুক। আক্ষেপ করে কবি বলছেন,
“তোমার কলঙ্ক, শশি! মুছিবে কেমনে?
যাবে না কালঙ্ক তব কোন শুভক্ষণে।”
কবির ব্যঙ্গাত্মক কবিতা ‘আপীল’-এ উল্লেখ আছে:
“কারো কাছে জমিদারী
কেহ বা উপাধিধারী
বাঙলা-বিহারে মোরা যত কিছু ধারী
সকলে মিলিয়া আবেদন করি।”
এই কবিতার মাধ্যমে ইংরেজ শাসকের বাঙালি বাবিহারি মোসাহেবদের চাটুকারিতা দ্বারা পদবিলাভের কথা ব্যঙ্গসহকারে বলা হয়েছে।
কাব্যরচনার মতো গদ্যসাহিত্যও বেগম রোকেয়ার অবাধ বিচরণ ছিল। তার গদ্য রচনা অবহেলিত ও কূপমন্ডূক নারীসমাজের জ্বালা-যন্ত্রণা নিয়ে লেখা। এ-প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘অবরোধবাসিনী’, যা তার চিত্রধর্মী রচনার সংকলন। ১৯২৮ খ্রিঃ প্রকাশিত এই গ্রন্থটিতে উচ্চবংশীয় বা আশরাফ মুসলিম পরিবারে বসবাসকারী পর্দানশিন নারীদের অবরোধ বা পর্দাপ্রথার কঠোর অনুশাসন সম্বন্ধে বলা হয়েছে। অবরুদ্ধ নারীদের মেধা, সৃজনশীলতা ও কর্মক্ষমতা বিকাশের যে কোনো সুযোগ থাকে না-এ গ্রন্থে তাই সুচারুভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মোতাহার হোসেন সুফীর বাসায়, ‘অবরোধ-বাসিনী’ গ্রন্থে একাধিক্রমে সাতচল্লিশটি অবরোধ-সম্পর্কিত পারিবারিক ও সামাজিক দুর্ঘটনার মর্মস্পর্শী কাহিনী লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই কাহিনীগুলো অমানবিক প্রথাসম্পৃক্ত নারী নিপীড়ন ও নির্যাতনের কাহিনী। অবরোধপ্রথার কুফল সম্বন্ধে বেগম রোকেয়া হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন কয়েকটি অবিশ্বাস্য ঘটনা এবং করুণ কাহিনীর মাধ্যমে। ঘটনাগুলো, যা মাসিক মোহাম্মদীতে প্রকাশিত হয়, সংক্ষেপে বিবৃত হল। এ-প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গোটা ভারতবর্ষে অষ্টাদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দীতে মুসলমানদের অবরোধ কেবল পুরষেদের বিরুদ্ধে নয়, নারীদের বিরুদ্ধেও, অবিবাহিতা বালিকাগণও (অসূর্য্যস্পশ্যা) অতি ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং বাড়ির পরিচারিকা বা চাকরানি ছাড়া অন্য কোনো স্ত্রী লোকের সামনে বের হত না; এনেকে এগুলো আষাঢ়ে গল্প বলে উড়িয়ে দিলেও ছিল বাস্তব ঘটনা।
পায়রাবন্দ গ্রামের জমিদার বাড়ির মেয়ে বাড়ির দাওয়ায় বসে ওজু করার সময় হঠাৎ করে এক মস্ত লম্বা-চৌড়া কাবুলি স্ত্রীলোক আঙিনায় এসে উপস্থিত হল। চাকরানি যে সাহেবজাদিকে বদনা থেকে পানি ঢেলে দিচ্ছিল, সে তাকে দেখে হঠাৎ চিৎকার করে উঠল। সে ভালো উর্দু জানে না, তবুও উচ্চস্বরে সবাইকে জানিয়ে বলল, “আউ! আউ! মরদা (পুরুষ, নারী হচ্ছে মরদানা) না কোন আইল।” কাবুলি নারী তখন দন্ত বিকশিত করে বললেন, “হাম মরদা (বা পুরুষ) না মরদানা (বা নারী) হায়? সাহেবজাদি এই নারীকে দেখে ওজু বাদ দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে অন্দরমহলে গিয়ে চাচিআম্মার কাছে গিয়ে বলল, “পায়জামা পরা এক নারী বেগানা এসেছে।” চাচিআম্মা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সে কি তোমাকে দেখেছে?” সাহেবজাদি বললেন, “হ্যাঁ।” এ কথা শুনে নামাজ পড়ারত অবস্থায় অন্য বালিকারা নামাজে ইস্তফা দিয়ে হুড়মুড় করে জানালা লাগাতে লাগলেন, যাতে কাবুলি নারী কুমারীদের দেখতে না পায়।
বেগম রোকেয়া বলেন যে পাঁচ বছর বয়স থেকেই তাকে অন্দরমহলেও পর্দা করতে হত। কোন পড়শি বেড়াতে এলেও তার সামনে বের হওয়া যেত না। একবার বেগম রোকেয়ার এক আত্মিয়ার বাড়ি থেকে দুজন চাকরানী তাদের বাড়িতে তাকে দেখতে এসেছিল। তাদের আগমনে রোকেয়া তখন খাটের নিচে বা দরজার কপাটের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন, যাতে তারা তাকে দেখতে না পায়। অবশেষে চাকরানিরা যখন চিলেকোঠায় তার সন্ধানে গেল, তখন রোকেয়া নিঃশ্বাস বন্ধ করে খাটের নিচে ঘাপটি মেরে বসে থাকলেন। নিঃশ্বাসের শব্দে তারা যাতে তাকে খুঁজে না পায়, তাই এ ব্যবস্থা। এভাবে তাকে বহুক্ষণ অভুক্ত অবস্থায় থাকতে হয়।
আর একটি ঘটনা এরূপ: পাটনার ভাগলপুরে শ্বশুরালয়ে থাকাকালীন বেগম রোকেয়ার অবরোধপ্রথা সম্বন্ধে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। পাটনার এক জমিদারবাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। পালকি করে নারীরা বিয়েবাসরে আসছেন। পালকি অন্দরমহলের কাছে এলে চাকরানি পালকির পর্দার দরজা খুলে দিয়ে বেগম সাহেবাদের অন্দরমহলে নিয়ে যেতে থাকে। এক-একটি পালকি আসছে এবং নারীরা পালকি থেকে নেমে পড়ছেন। এভাবে বহুক্ষণ ধরে পালকির সওয়ারি নেমে গেলে দেখা গেল হাসমত বেগম নামের এক নারী তার শিশুসন্তানকে সাথে নিয়ে আসেননি। সকলের ধারণা হল যে হয়তোবা হাসমত বেগমের ছয়মাসের শিশুসন্তান অসুস্থ্, তাই আসতে পারেননি। কিন্তু পরের দিন যখন মেহমানরা এক-এক করে তাদের পালকিতে চড়ে বিদায় হতে লাগলেন, তখন হঠাৎ একটি পালকি সামনে এলে পর্দা খুলে দেখা গেল হাসমত বেগম তার ছয় মাসের শিশুসন্তানকে বুকে জড়িয়ে ভেতরে বসে আছেন। দেখা গেল এভাবে পৌষ মাসের দীর্ঘ রজনী তিনি ও শিশু অভুক্ত অবস্থায় মাঠে কাটিয়েছেন। উল্লেখ্য, হাসমত বেগম কোন শব্দ করেননি এবং তার শিশুকে কান্না থেকে বিরত রাখেন পাছে সব জানাজানি হয়ে যায় এবং বেহারারা তার কন্ঠস্বর শুনতে পায় এই ভয়ে।
বেগম রোকেয়া আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা বর্ণনা করেন। এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের আট বছরের একটি মেয়ে একদিন বিকেলে এই রান্নাঘরে ঠেকানো একটি ছোট মই-এ ওঠার চেষ্টা করল। তার নাম তাহেরা। সে কৌতূহলবশে এ মইটির মাত্র দুই ধাপ যখন উঠেছে, তার বাবা বাড়িতে এসে এক হ্যাঁচকা টান দিয়ে তাকে মই থেকে নামিয়ে দিলেন। তাহেরা ছিল তার পিতামাতার একমাত্র আদরের কন্যা। পিতা তাকে কোনদিন ভর্ৎসনা করেননি। কিন্তু এই ঘটনার মুখে তিনি ভীষণভাবে রাগারাগি করতে থাকলে তাহেরা কাপড়ে প্রস্রাব করে দেয়। ফলে অবেলায় তাকে গোসল করতে হয় এবং একারনে তার ভিষণ জ্বর আসে। সে-সময়ে ডাক্তাররা আজকের মতো সামনাসামনি বসে নারী রুগী দেখতে পারতেন না। পর্দার আড়াল থেকে দেখতে হত। কারণ, ডাক্তার সাহেব বেগানা পুরুষ। তিনদিন পর তাহেরার অকালে মৃত্যু হয়। অবরোধপ্রথাই তার মৃত্যুর কারণ।
অপর একটি চমকপ্রদ ঘটনা হচ্ছে কোন এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বয়ঃপ্রাপ্ত কন্যার বিয়ে দেনা-পাওয়ার জন্য ভেঙে গেলে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা পারিবারিক সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য তার মাতাল ও দুশ্চরিত্র ভ্রাতুস্পুত্রের সাথে বিয়ে দিতে মনস্থ করেন। তেঁতুলের রস খাইয়ে ছেলেকে প্রকৃতিস্থ করা হলেও জমিদার কন্যা এহেন দুশ্চরিত্র ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হল না। যাহোক শেষ পর্যন্ত বলপূর্বক তাকে বিয়ের মজলিশে বসানো হল। কাজি সাহেব বহুবার তাকে ‘হুঁ’ বলার অনুরোধ করলেও মেয়েটি নিশ্চুপ থাকল। এমন সময় তার একজন সঙ্গী তার হাতে খুব জোরে চিমটি কাটলে সে ব্যথায় ‘উহু’ বলে উঠল। মেয়েটির ‘উহু’ শব্দটিকে ‘হুঁ’ শব্দে পরিণত করে তার বিয়ে সম্পন্ন করেন।
বেগম রোকেয়া যখন উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে ছিলেন তখনই অবরোধপ্রথার কুফলজনিত বহু ঘটনা প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ করেন। এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল আলিগড় রেলস্টেশনে। তিনি বলেন, যে, তার সঙ্গীদের নিয়ে বোরকা পরা অবস্থায় তিনি স্টেশনে বেড়াতে যান। কিছুক্ষণ পর একটি শিশুর কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেল। তারা চারিদিকে তাকিয়ে (বোরকার ফুটো দিয়ে) দেখলেন আশেপাশে কোনো শিশু নেই। তখন তারা বুঝতে পারলেন যে, বোরকাধারিনী এক বিবি তার শিশুসন্তানকে বোরকার ভেতরে নিয়ে হাঁটছেন। বেচার শিশু গরমে অস্থির হয়ে চিৎকার শুরু করেছে।
বেগম রোকেয়া আরেকটি মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক ঘটনার উল্লেখ করেন। তার এক দূর-সম্পর্কীয় মামি শাশুড়ি তার একজন পরিচারিকা নিয়ে ভাগলপুর থেকে পাটনা যচ্ছিলেন। কিউল স্টেশনে নেমে ট্রেন বদলাতে হয়। কিন্তু বদলাতে গিয়ে মামি তার প্রকান্ড বোরকাসহ ট্রেন ও প্লাটফর্মের মধ্যে পড়ে গিয়ে আটকে থাকলেন। কুলি ও যাত্রীরা তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করলে চাকরানি বলল, বেগম সাহেবার গায়ে হাত দিলে তার আবরু চলে যাবে। বয়স্কা ও মোটা নারীর দেহ চাকরানী একা টেনে তুলতে পারলো না। আধঘন্টা অপেক্ষা করে ট্রেন যখন ছেড়ে দিল, তখন দেখা গেল যে, বেগম সাহেবার শরীর ক্ষতবিক্ষত। এভাবে বেগম সাহেবা লোমহর্ষক মৃত্যুর সম্মুখীন হলেন।
বেগম রোকেয়ার বিরল সাহিত্যপ্রতিভা সম্বন্ধে কোনো দ্বিমত নেই। কাব্য ও গদ্য-রচনায় তিনি যশস্বী হয়েছেন। তিনি বহু প্রবন্ধ ‘নবপ্রভা’, ‘নারী’, ‘অন্তঃপুর’ প্রভৃতি সাময়িকিতে প্রকাশ করেন। এছাড়া ছিল মাসিক ‘মোহাম্মদী’, ‘সওগাত’, ‘মোয়াজ্জিন’ ও ‘বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা’। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধাদি ‘মতিচুর’ নামে একটি গ্রন্থের প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ডে তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়। বেগম রোকেয়ার জ্যেষ্ঠ ভগ্নি সুসাহিত্যিক করিমুন্নেসা খানম সম্বন্ধে তিনি একটি রচনা করেন, যার অংশ বিশেষ নিচে উদ্ধৃত হল:
সাগরের সুগভীর আঁধার গহ্বরে,
উজ্জ্বল রতন কত রয়েছে লুকায়ে;
ফুটিয়া কুসুম কত বিজনে প্রান্তরে শুকায়
শৌরভ তার বুয়াতে মিশায়ে।
উপন্যাস রচনায়ও বেগম রোকেয়া অসমান্য কৃতিত্বের পরিচয় দেন। তার রচিত একমাত্র উপন্যাস ‘পদ্মারাগ’। সমকালীন মুসলিম লেখিকাদের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম উপন্যাস রচনার প্রয়াস করেন, তিনি তাদের অন্যতম। এই গ্রন্থে মুসলিম নারীসমাজের পশ্চাৎপদতা ও তাদের মধ্যেপ্রচলিত কুসংস্কার ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বেগম রোকেয়া নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেও সোচ্চার ছিলেন। বৈচিত্রময় প্রতিভার অধিকারিণী বেগম রোকেয়া বাংলার মুসলিম সমাজের এক বিরল ব্যক্তিত্ব।
এই মহীয়সী নারী ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।