নাচোলের হার-না-মানা নেত্রী ‘ইলা মিত্র’
প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০১৭, ০০:৩৭ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩২
এমন সংগ্রামী নেত্রী ও নেতা ইতিহাসে খুব কম আসেন। তাই প্রয়াত ইলা মিত্র আমাদের স্বপ্ন আশার এক বিরল প্রতীক। তাঁর সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস আমাদের জীবনের ইতিহাস, আমাদের জীবনের মহৎ ঐতিহ্যের ভাণ্ডার। সেই মহৎ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী আমরা, নতুন প্রজন্মের সংগ্রামী মানুষেরা: দেশ এবং কাল নির্বিশেষে বর্তমান মুহূর্তের পৃথিবীর সকল নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষেরা।
মহৎ ঐতিহ্যের এমন প্রতীকের মৃত্যু নেই। মৃত্যু থাকে না। সেই মহৎ ঐতিহ্যকে আমাদের ক্রমাধিকভাবে অনুসন্ধান করতে হবে, আবিষ্কার করতে হবে এবং ঐতিহ্যের সেই সম্ভাবের অপরাজেয় শক্তির বোধে আমাদের উদ্ধুদ্ধ হতে হবে।
ইলাদি আপনি মৃত নন, জীবিত। আপনার কাছে আমাদের জীবনের ঋণের শেষ নেই। আপনি আমাদের পাশে আছেন, আমাদের সাথে আছেন এবং আমাদের সংগ্রামের লাইনের একেবারে সম্মুখে আছেন। আমরা বলছি: জয়তু ইলা মিত্র।
জয়তু ইলা মিত্র
সরদার ফজলুল করিম
ইলা মিত্রের স্বপ্ন ছিল সফল বিপ্লবের, যে বিপ্লব বৈষম্য-পীড়িত সমাজ পালটে দেবে, শোষণের অবসান ঘটাবে। এবং তা শুধু ভারতবর্ষেই নয়, গোটাবিশ্বের- এমন কি দরিদ্র বিশ্বের দেশে দেশে। সময়ের টানে ইলা মিত্র হয়ে ওঠেন বিপ্লবের দূত-যেজন্য জেল-জুলুম-হুলিয়া কোনো সমস্যা হয়ে ওঠে না।
তাঁর বিপ্লবী আদর্শের প্রধান বিষয় যেমন ছিল সামাজিক পরিবর্তন সেই সঙ্গে ছিল অসাধারণ একটি দিক ‘নতুন মানুষ’ অর্থাৎ আদর্শ মানুষ গড়ে তোলার স্বপ্ন। এই নয়া মানুষ গড়ার কথা তাঁর সাক্ষাৎকারগুলো পড়ে বোঝা যায়। নতুন সমাজ, নতুন মানুষ গড়ার স্বপ্ন তিনি পেয়েছিলেন বিশ্ব বিপ্লবীদের কাছ থেকে- না কি তা ছিল তার স্বতোৎসারিত ভাবনা, যে ভাবনা ক্রমে তার স্বপ্ন হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে এক ধরনের ‘অবসেশন’ যা তিনি ব্রিটিশ শাসক-শোষকদের দেখিয়েছিলেন।
নতুন সমাজ, নতুন মানুষ, আলোকিত মানুষ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কথা এসে যায়। কবি রবীন্দ্রনাথ কর্মী রবীন্দ্রনাথ হিসেবে চেয়েছিলেন তার পল্লীউন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আদর্শ স্বদেশী সমাজ গড়ে তুলতে, আলোকিত চেতনার মানুষ তৈরি করতে। পদ্ধতির দিক থেকে দু-দিককার পথ সম্পূর্ণ পৃথক হলেও তাদের ভাবনা এবং স্বপ্ন ভিন্ন ছিল না। ইলা মিত্রও ঠিক সারাবিশ্বে মানুষের মুক্তি চেয়েছিলেন। তাঁর নারী মুক্তি, নারী আন্দোলন নিয়ে ভাবনাগুলো পড়লে সত্যিই অবাক হতে হয়! একটা মানুষ কতটা চিন্তাশীল হলে তাঁর ভাবনাগুলো এতটা পরিষ্কার, ঝকঝকে, তকতকে হতে পারে! তার উদাহরণ ইলা মিত্র। গোটা বিশ্বের নিপীড়িত জনতার মুক্তি হবে এটাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান।
ইলা মিত্র একটি নাম। একটি বিপ্লবের নাম। একটি দর্শনের নাম। নারী আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, সাঁওতাল আন্দোলনের লড়াকুর নাম। ইলা মিত্র, নাচোলের রাণী মা; তেভাগা আন্দোলনের লড়াকু বিপ্লবী, সাঁওতালদের একান্ত আপনজন। তিনি গরীব-দুঃখী সাঁওতাল কৃষকদেরকে জোতদার, জমিদার ও মহাজনদের শাসন-শোষণ ও অত্যাচার থেকে মুক্ত করার জন্য ইস্পাতদৃঢ় সংকল্প নিয়ে লড়াই করেছেন। সাঁওতালদের কাছে ইলা মিত্র ছিলেন মায়ের মতো, তাই তারা তাঁকে ‘রাণী মা’ বলে ডাকতেন। কমিউনিস্ট পার্টি, সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ বলতে সাঁওতালরা রাণী মা’কেই বুঝতেন। তাদের সকল সুখ-দুঃখ রাণী মা’র সাথে ভাগাভাগি করে নিতেন। আর রাণী মা-ও তাদেরকে নিজের সন্তানের মতো ভালবাসতেন। সাঁওতালরা এবং রাণী মা ছিলেন অবিচ্ছেদ্য। নাচোলের তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র একই সূত্রে গাঁথা। শুধু তাই নয়, ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি জীবনবাজি রেখে লড়েছেন।
তিনি জন্মেছিলেন কলকাতায়- ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর। তাঁর বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অধীন বাংলার একাউনটেন্ট জেনারেল। ইলা মিত্রের আদি বসত ছিল ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রামে। বাবার চাকুরির কারণে তারা কলকাতায় বসবাস করতেন। কলকাতা শহরেই ইলার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময় কাটে। লেখাপড়া হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর কলকাতার বেথুন স্কুল ও কলেজে। কলেজ শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ভর্তি হন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলায়ও তুখোড় ছিলেন। ১৯৩৫-৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন রাজ্য জুনিয়র এ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়ন। সাঁতার, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলায়ও তিনি ছিলেন বেশ পারদর্শী। তিনিই প্রথম বাঙালি মেয়ে যিনি ১৯৪০ সালে জাপানে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন। যুদ্ধের জন্য অলিম্পিক বাতিল হয়ে যায়। খেলাধুলা ছাড়াও গান, অভিনয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। ১৯৩৬-৪২ সালের মধ্যে ইলা মিত্রের নাম সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে।
ইলা মিত্র বেথুন কলেজে পড়াশুনা করার সময়ে নারী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৩ সালে তিনি কলকাতা মহিলা সমিতির সদস্য হন। হিন্দু কোড বিল এর বিরুদ্ধে মহিলা সমিতির আন্দোলনে তিনি একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকাবস্থায় তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন।
১৯৪৫ সালে ইলা মিত্রের বিয়ে হয় বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতা রমেণ মিত্রের সাথে। বিয়ের পর কলকাতা ছেড়ে চলে এলেন শ্বশুরবাড়ি রামচন্দ্রপুর হাটে। রক্ষণশীল জমিদার পরিবারের নিয়মানুসারে অন্দরমহলেই থাকতেন ইলা মিত্র। এই সময় রমেণ মিত্রের বন্ধু আলতাফ মিয়া কৃষ্ণগোবিন্দপুর হাটে মেয়েদের জন্য একটি স্কুল খুলেন। রমেণ মিত্রের কাছে গ্রামের সবাই দাবি জানালেন তাদের নিরক্ষর মেয়েদের লেখাপড়া শেখাবার দায়িত্ব নিতে হবে বধূমাতা ইলা মিত্রকে। অনুমতি পেল ইলা মিত্র। মাত্র তিনজন ছাত্রী নিয়ে স্কুলটি শুরু হলো। তিনমাসের মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০/৫০ জনে।
ইলা মিত্র সম্পর্কে রমেন মিত্রের কৌতুকরস, ‘কলেজ লাইফে ইলা সেন (পৈতৃক নাম) কী দুর্দান্ত অ্যাথলেট আর স্মার্ট তরুণী! যেমন খেলাধুলায় তেমন ডিবেটে।’ পেছনে সহপাঠীদের লাইন লেগে থাকতো। ‘আর সেই ডাকসাইটে ইলা সেন কী না শেষ পর্যন্ত হাবুল মিত্তিরের (রমেণ মিত্র) বউ হয়ে ঘরে এল। ইলা সেন হয়ে গেল ইলা মিত্তির’। বলেই সিগারেটে লম্বা টান।....
রমেণ মিত্র সম্পর্কে ইলা মিত্রের স্মৃতিচারণটাও ঠিক এরকম, ‘চরিত্রে-প্রকৃতিতে রমেন মিত্র নামক মানুষটি একজন শুদ্ধ রোমান্টিক। কথায় কথায় কবিতা পঙ্ক্তির উচ্চারণ- রবীন্দ্রনাথের মহুয়া থেকে প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘আমি কবি যত’ কিংবা সুভাষ, সুকান্ত। কখনো গুনগুন ‘এ দেশ আমার গর্ব, এ মাটি আমার চোখে সোনা’ ইত্যাদি। সশস্ত্র বিপ্লবের বিভ্রান্তিকর রণনীতি কী রমজান ভাই (রমেণ মিত্র) অন্তর থেকে গ্রহণ করতে পেরেছিলেন?’ আরো একটি স্মৃতিচারণে ইলা মিত্র বলেন- রমেণ মিত্রকে কখনোই-ই আমার কৃষকনেতা বলে মনে হয়নি, জঙ্গি তেভাগা আন্দোলনের নেতা তো নয়ই। তাঁকে মনে হয়েছে ইন্টলেকচুয়াল মার্কসবাদী, সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তিত্ব, কিন্তু বাস্তব ঘটনা ভিন্ন। নাচোল এলাকার তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রমেন মিত্র। তেভাগা বলতে নড়াইলের দূর গ্রামাঞ্চলের ভাগচাষীর আন্দোলন, আর সে আন্দোলনের সংগঠক বলতে নূরজালাল, অমল সেন, রসিকলাল, মোদাচ্ছের মুন্সি, একটু উচ্চস্তরে হেমন্ত সরকার ও কৃষ্ণবিনোদ রায়।
এমন প্রশ্ন তখন খুব স্বাভাবিক...
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক ছিল দু’জনের। তাঁরা দু’জনই মার্কসবাদের রাজনীতির দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। মার্কসবাদই একমাত্র নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত মানুষের মুক্তির পথ। মার্কসবাদই পারে সারাবিশ্বের মানুষকে মুক্তি দিতে। আর রমেণ মিত্রের একান্ত সহযোগিতায়ই ইলা মিত্র হয়ে উঠেন ‘রাণী মা’- তেভাগা আন্দোলনের লড়াকু যোদ্ধা।
রমেণ মিত্রের কাছে তিনি জমিদার ও জোতদারের হাতে বাংলার চাষীদের নিদারুণ বঞ্চনা, শোষণ এবং শোষণের বিরুদ্ধে তাঁদের আন্দোলনের বীরত্বপূর্ণ কাহিনী শোনেন। অনেক পূর্বে কমিউনিস্ট রমেণ মিত্র জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে পারিবারিক ঐতিহ্য ও মোহ ত্যাগ করে কৃষকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। রমেণ মিত্র ইলা মিত্রকে এসব কাজে উৎসাহ দেন। ১৯৪৬-৫০ সাল পর্যন্ত রাজশাহীর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র।
এ শোষণ কৃষকের মনে বিক্ষোভের জন্ম দেয়। যার ফলে ১৯৩৬ সালে গঠিত হয় ‘সর্ব ভারতীয় কৃষক সমিতি’। ১৯৪০ সালে ফজলুল হক মন্ত্রিসভার উদ্যোগে বাংলার ভূমি ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব দেয় ‘ফাউন্ড কমিশন’। এই কমিশনের সুপারিশ ছিল জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ করে চাষিদের সরাসরি সরকারের প্রজা করা এবং তাদের উৎপাদিত ফসলের তিনভাগের দুইভাগের মালিকানা প্রদান করা। এই সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য কৃষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। চল্লিশের দশকে এসব আন্দোলনে ইলা মিত্র নেতৃত্ব দেন।
১৯৪২-৪৩ সালে সমগ্র বাংলায় দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। এ সময় কৃষকের ওপর শোষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। তিনভাগের দুইভাগ ফসল, কৃষকের এই দাবি নিয়ে বেগবান হতে থাকে তেভাগা আন্দোলন। ১৯৪৬-৪৭ সালে দিনাজপুরে কমরেড হাজী দানেশের প্রচেষ্টায় সংগঠিত হয় যুগান্তকারী তেভাগা আন্দোলন। কমিউনিস্ট পার্টি ও কৃষক সমিতি চাষিদের সংগঠিত করে আন্দোলনকে জোরদার করতে থাকে। পার্টি থেকে রমেণ মিত্র ও ইলা মিত্রকে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কৃষক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে তেভাগা আন্দোলনকে জোরদার করতে বলা হয়। ১৯৪৬ সালে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা শুরু হলে কমিউনিস্ট পার্টি দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকায় সেবা ও পুনর্বাসনের কাজ করতে এগিয়ে আসেন। এসময় ইলা মিত্র নোয়াখালীর দাঙ্গা বিধ্বস্ত গ্রাম হাসনাবাদে পুনর্বাসনের কাজে চলে যান।
১৯৪৮ সাল। ইলা মিত্র অন্তঃসত্ত্বা। সন্তান প্রসবের জন্য তিনি গোপনে কলকাতায় যান। পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এক মাস বয়সের ছেলেকে শাশুড়ির কাছে (রামচন্দ্রপুর হাটে) রেখে তিনি আবার ফিরে আসেন নাচোলে। ১৯৪৯ সালে তার নেতৃত্বে হাজার হাজার ভূমিহীন কৃষক সংগঠিত হয়। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে জোতদার, মহাজনদের দল। ওই বছর কৃষকের ধান জোতদারদের না দিয়ে সরাসরি কৃষক সমিতির উঠোনে তোলা হয়। ফলে সংঘর্ষ বাধে। নাচোলে সাঁওতাল ও ভূমিহীনদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এক শক্তিশালী তীরন্দাজ ও লাঠিয়াল বাহিনী। এই বাহিনীর প্রধান ছিলেন মাতলা মাঝি। এভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন ইলা মিত্র ও রমেণ মিত্র। নাচোল অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের বাস্তব রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন তারা।
১৯৫০ সালে জোতদার ও ভূমি মালিকেরা নাচোলের ভিতর এবং আশেপাশে তেভাগা কার্যকর করতে বাধ্য হয়। সরকারের পুলিশ বাহিনী গ্রামে গ্রামে অভিযান চালিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে। ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি পুলিশ বাহিনী চণ্ডীপুর গ্রামে আসে। গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে পুলিশ বাহিনীকে পাল্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে উত্তেজিত গ্রামবাসী ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও পাঁচ জন পুলিশ কনস্টেবলকে হত্যা করে। এই ঘটনার দু’দিন পর ৭ জানুয়ারি শুরু হলো পুলিশের প্রতিশোধ। দুই হাজার সেনা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে উপস্থিত হয়ে অভিযান শুরু করে। বারোটি গ্রাম ঘেরাও করে তছনছ করে। ঘরবাড়ি ধ্বংস করে। গুলি চালিয়ে হত্যা করে অসংখ্য গ্রামবাসীকে। নারীদের ধর্ষণ করে। শিশুদের উপর চালায় যৌন নির্যাতন। আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীরা যে যার মতো আত্মগোপনে চলে যায়। ইলা মিত্র ৭ জানুয়ারি সাঁওতাল বেশ ধারণ করে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভারত সীমানা পার হওয়ার সময় তিনিসহ আরো অনেক নেতা-কর্মী রোহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে ধরা পড়ে যান। তাদের ধরে আনা হয় নাচোল স্টেশনে। পুলিশ তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। এই অত্যাচারে ইলা মিত্রের সাথীদের মধ্যে আনুমানিক ৮০/৯০ জন মারা যায়।
কমরেড ইলা মিত্রের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হল। পুলিশ অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে তার স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে। টানা চার দিন অত্যাচারের পর নাচোল স্টেশন থেকে ইলা মিত্রকে নবাবগঞ্জ পুলিশ স্টেশনে আনা হয়। সে সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত ঝরছিল। গায়ে ছিল প্রচণ্ড জ্বর। ইলা মিত্রের ওপর বাঁশকল, শরীরের নাজুক অংশে বুটের আঘাত, বিবস্ত্র করে প্রহার, অনাহারে রাখা, ধর্ষণ ইত্যাদি ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়। পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরলাম:
ইলা মিত্রের একটি স্মৃতিচারণ তুলে ধরা হলো
ওরা প্রথম থেকেই নির্দয় ভাবে মারতে শুরু করলো। শুধু আমাকে নয়, আমাদের সবাইকেই। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে এল নাচোলে। আমি মারপিটের ফলে অবসন্ন হয়ে পড়েছিলাম, আমার সর্বাঙ্গে বেদনা। ওরা আমাকে একটা ঘরের বারান্দায় বসিয়ে রাখল। আমাদের সঙ্গে যে সকল সাঁওতাল কর্মীরা ছিল, আমার চোখের সামনে তাদের সবাইকে জড় করে তাদের উপর বর্বরের মত মারপিট করে চললো। আমি যাতে নিজের চোখে এই দৃশ্য দেখতে পাই, সেজন্যই আমাকে তাদের সামনে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।
ওরা তাদের মারতে মারতে একটা কথাই বারবার বলছিল, আমরা তোদের মুখ থেকে এই একটা কথাই শুনতে চাই, বল, ইলা মিত্র নিজেই পুলিশদের হত্যা করবার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। এই কথাটুকু বললেই তোদের ছেড়ে দেব। কিন্তু যতক্ষণ না বলবি, এই মার চলতেই থাকবে। মারতে মারতে মেরে ফেলব, তার আগে আমরা থামব না।
কথাটা তারা যে শুধু ভয় দেখাবার জন্য বলছিল, তা নয়, তারা মুখে যা বলছিল, কাজেও তাই করছিল। ও সে কি দৃশ্য! আর সেই দৃশ্য আমাকে চোখ মেলে দেখতে হচ্ছিল। এ কি শাস্তি! কিন্তু কি আশ্চর্য, সেই হিংস্রর পশুর দল আঘাতের পর আঘাত করে চলেছে। রক্তে ওদের গা ভেসে যাচ্ছে, কিন্তু কারু মুখে কোন শব্দ নাই, একটু কাতরোক্তি পর্যন্ত না। ওরা নিঃশব্দ হয়ে ছিল, কিন্তু দেখতে দেখতে কেঁদে ফেললাম আমি। এই দৃশ্য আমি আর সইতে পারছিলাম না। মনে মনে কামনা করেছিলাম, আমি যেন অজ্ঞান হয়ে যাই। কিন্তু তা হল না, আমাকে সজ্ঞান অবস্থাতেই সব কিছু দেখতে হচ্ছিল, কিন্তু একটা কথা না বলে পারছি না, এত দুঃখের মধ্যেও আমাদের এই বীর কমরেডদের জন্য গর্বে ও গৌরবে আমার বুক ভরে উঠেছিল। একজন নয়, দু’জন নয়, প্রতিটি মানুষ মুখ বুজে নিঃশব্দ হয়ে আছে, এত মার মেরেও ওরা তাদের মুখ খোলাতে পারছে না। এমন কি করে হয়! এমন যে হতে পারতো এ তো আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
মনে মনে একটা কথা আবৃত্তি করে চলেছিলাম, হে বীর সাথীরা আমার, তোমাদের কাছ থেকে যে শিক্ষা আমি আজ নিলাম, তা যেন আমার বেলায় কাজে লাগাতে পারি। আমার উপর অত্যাচার এই তো সবে শুরু হয়েছে। আমি জানি, এরপর বহু অত্যাচার আর লাঞ্ছনা আমার উপর নেমে আসবে। সেই অগ্নি-পরীক্ষার সময়, হে আমার বীর সাথীরা, আমি যেন তোমাদের এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে নিঃশব্দে মুখ বুজে থাকতে পারি। আর যদি মরতেই হয়, যেন অমনি নিঃশব্দে মরে যেতে পারি।
প্রচণ্ড তর্জন গর্জনের শব্দ শুনে চমকে উঠলাম, চেয়ে দেখি, হরেককে দলের মধ্য থেকে মারতে মারতে বার করে নিয়ে আসছে। ওদের মুখে সেই একই প্রশ্ন, বল, ইলা মিত্র সে-ই পুলিশদের হত্যা করবার আদেশ দিয়েছিল। না বললে মেরে ফেলব, একদম মেরে ফেলব। আমি চেয়ে আছি হরেকের মুখের দিকে। অদ্ভুত ভাববিকারহীন একখানি মুখ। অর্থহীন দৃষ্টিতে শূন্যপানে তাকিয়ে আছে। ওদের এত সব কথা যেন তার কানেই যাচ্ছে না। ক্ষেপে উঠল ওরা। কয়েক জন মিলে তাকে মাটিতে পেড়ে ফেলল। তারপর ওরা ওদের মিলিটারি বুট দিয়ে তার পেটে বুকে সজোরে লাথি মেরে চলল। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, হরেকের মুখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর তার উপর ওরা আরও কতক্ষণ দাপাদাপি করল। একটু বাদেই এক খ- কাঠের মত স্থির হয়ে পড়ে রইল হরেক। ওদের মধ্যে একজন তাকে নেড়ে চেড়ে দেখে বলল, ছেড়ে দাও, ওর হয়ে গেছে। এই বলে ওরা আর এক জনকে নিয়ে পড়ল।
মরে গেছে। আমাদের ছেড়ে চলে গেছে হরেক। অনেক দিন আগেকার পুরানো একটা কথা মনে পড়ে গেল। একদিন হরেককে পার্টির একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজের সময় তার দেখা মেলেনি। এজন্য কৈফিয়ত চাইলে পরে সে বলেছিল, তার গরুটা হারিয়ে যাওয়ায় সে তাকে খোঁজ করতে বেরিয়েছিল। সেই জন্যই সে সময় মত উপস্থিত থাকতে পারেনি। এজন্য অনেকের সামনে তাকে তিরস্কার শুনতে হয়েছিল। তারপর থেকে তার উপর কোন দায়িত্বপূর্ণ কাজের ভার দেওয়া হতো না। এটা বুঝতে পেরেছিল হরেক। এই নিয়ে সে এক দিন অভিমান-ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেছিল, আমাকে কি মনে করেন আপনারা? জানেন, প্রয়োজন হলে পার্টির জন্য আমি জীবন দিতে পারি? এই ধরনের বাগাড়ম্বর অনেকেই করে। তার এই কথায় কেউ ততটা আমল দেয়নি। কিন্তু আজ? আজ হরেক তার জীবন দিয়ে প্রমাণ করে দিয়ে গেল, সেদিন সে যা বলেছিল, তা বাগাড়ম্বর নয়, অক্ষরে অক্ষরে সত্য।
আমাদের ছেড়ে চলে গেছে হরেক। আর কোন দিন ফিরে আসবে না। একটু আগেই আমি কেঁদেছিলাম। কিন্তু এখন আমার সমস্ত কান্না শুকিয়ে গেছে। তার পরিবর্তে ভিতর থেকে প্রচ- একটা জিদ মাথা তুলে জেগে উঠছে। আমার মন বলে চলেছে, মারুক, মারুক, ওরা আমাকেও এমনি করে মারুক। আর মনে হচ্ছে, এই যে আমাদের কয়েক শ’ সাথী, এদের মধ্যে কাউকে দিয়ে ওরা কথা বলাতে পারবে না। কিছুতেই না। ওদের হার হয়েছে। ওদের হার মানতে হবে।
- ইলা মিত্র
(সত্যেন সেনের বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলন বইয়ের পৃষ্ঠা: ১০৬-১০৯ থেকে সংগৃহীত।)
সুস্থ হওয়ার পর থেকেই - তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু। সুস্থ হয়ে তিনি কলকাতা সিটি কলেজে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ইলা মিত্র পশ্চিমবঙ্গের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির জেলা ও প্রাদেশিক কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি চারবার মানিকতলা নির্বাচনী এলাকা থেকে বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৭-৭২ সালে বিধান সভায় কমিউনিস্ট ডেপুটি লিডার ছিলেন। ১৯৬২-০২ পর্যন্ত শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে তিনি পাঁচবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য নির্বাচিত হন। পশ্চিমবঙ্গেও বিভিন্ন আন্দোলনের জন্য ১৯৬২, ৭০, ৭১ ও ৭২ সালে কারাগারে যেতে হয়েছে তাকে। ইলা মিত্র ভারতের মহিলা ফেডারেশনের জাতীয় পরিষদ সদস্য, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির সহ-সভানেত্রী এবং ভারত ও সোভিয়েত সাংস্কৃতিক সমিতির সহ-সভানেত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার ছিল বিশেষ আন্তরিকতা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করেছেন।
‘সেই ধাতব-চেতনার ইলা মিত্র, সাম্যবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী মুক্তচেতনার ইলা মিত্র যদি হাসপাতাল-বেডে শুয়ে শুয়ে ভাবতেন ‘এত সব জঘন্য নির্যাতনের পর লোকে তাঁকে আগের মতো দেখতে পারবে কিনা’ তখন ঐ প্রশ্ন শুনে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। প্রশ্ন যদিও আমাকে, তবু অনেকটাই স্বগতোক্তির মতো। ক’মাসের অন্তরঙ্গতার কারণে বোধহয় অমন নিতান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতেও তাঁর বাধেনি। জবাবে শুধু বলি: ‘লোকে আপনার সাহস ও সংগ্রামের কথাই মনে রাখবে, আপনার অসামান্য সহিষ্ণুতাই বড় করে দেখবে, লোকের চোখে কিংবদন্তীর সংগ্রামী নেত্রী হয়ে থাকবেন আপনি।’ কথাগুলো মন থেকেই বলি। শুনে বিষণœ চোখে তাকিয়ে থাকেন ইলা মিত্র।
ভাবি, যত আধুনিক চেতনার বা মুক্তচিন্তার প্রগতিবাদীই হোন একটি বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়েদের মন বড় স্পর্শকাতর। সামাজিক সংস্কারের ছিঁটেফোটা বোধহয় সেখানে লেগেই থাকে। ঐতিহ্য সূত্রে লালিত সংস্কার থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়া বুঝি খুবই কঠিন। ইলা মিত্রের সঙ্গে এ কথোপকথনের তারিখ ১৫ মাঘ, ১৩৬০ বঙ্গাব্দ। তবে আমার বিশ্বাস রমেন মিত্রের মতো উদারচেতা, আধুনিক চিন্তার মননশীল ব্যক্তির সংস্পর্শে ইলা মিত্রের ওই সংকোচ, সংশয় দূর হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে তাঁকে দেখে, তাঁর সঙ্গে কথাবার্তায় তেমনই মনে হয়েছে।
সাম্যবাদী মতাদর্শ ও সেই রাজনীতি নাকি ব্যক্তি সম্পর্ককে বড় একটা গুরুত্ব দেয় না, বোধহয় সমষ্টিস্বার্থের লড়াই তার প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠার কারণে। তত্ত্বগত বিচার যাই বলুক এটা বুঝেছি বছর কয়েকের পার্টি সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা থেকে। বুঝতে পেরেছি কয়েকজন পার্টি নেতার সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলোচনায়। কিন্তু ব্যক্তি নিয়েই যে সমষ্টি এ সহজ কথাটা কেন জানি তাঁদের অধিকাংশই বুঝে উঠতে পারেননি। অবশ্য এর মধ্যেও ব্যতিক্রম দেখেছি রমেন মিত্রকে। দেখেছি ওই চুয়ান্ন সালেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাজবন্দি নরসিংদির রানু চ্যাটার্জির মধ্যে। সেসময় হাসপাতালে আরও ছিলেন সিলেটের অপর্ণা পাল, বিক্রমপুরের জীতেন ঘোষ, অভয় চ্যাটার্জি প্রমুখ কয়েকজন নিরাপত্তা বন্দি। ইলা মিত্রকে মনে হয়েছে ওই ব্যতিক্রমীদের একজন। অস্বীকার করব না ব্যক্তিসম্পর্ক আমি গুরুত্বের সঙ্গে দেখি, অবশ্য কিছু শর্তসাপেক্ষে। ওই শুদ্ধ মানবীয় প্রীতিসম্পর্কের টানেই নরসিংদি হয়ে গ্রামের বাড়ি যাবার পথে বারবার রাণুদি’র বাড়িতে যেতে হয়েছে, গল্প-খাওয়া-দাওয়ায় সময় দিতে হয়েছে।’- ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের স্মৃতিচারণ।
মানুষে-মানুষে প্রীতি, শ্রদ্ধা বা বন্ধুত্বের শুদ্ধ সম্পর্ক যে মানব চেতনার শ্রেষ্ট সম্পদ এটা কারও কারও মত ইলা মিত্রও জানতেন এবং বুঝতেন, কট্টর মতাদর্শবাগীশরা যা জানেন না বা বোঝেন না। ইলা মিত্র এ মানবীয় মূল্যবোধের দাম দিতে পেরেছেন। এসত্য জানতেন রমেন মিত্র, বুঝতেনও। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক উজ্জ্বলতা সৃষ্টিও মানসিক মূল্যবোধের বিকাশ যাদের লক্ষ্য তারা কেন ব্যক্তি সম্পর্ককে মূল্য দেবেন না এ রহস্য তাঁরা ঠিক বুঝে উঠতে পেরেছিল। এগুলোর সঙ্গে তো ব্যক্তি সম্পর্কের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র। ব্যক্তিকে নিয়েই তো সমষ্টি। মতাদর্শগত রাজনীতিতে একনিষ্ঠ এরা দুজন মানসিকতা ও জীবনবোধের দিক থেকে আর দশজন রাজনৈতিক নেতা বা সাংস্কৃতিক ধীমান থেকে ভিন্ন ছিলেন। উদার মানবীয় মূল্যবোধ তাঁদের চেতনা ও জীবনধারায় গভীর ছাপ এঁকে স্বতন্ত্র মাত্রা যোগ করেছিল। অন্তরঙ্গ সম্পর্কগুলো তাঁদের হৃদয়ের উষ্ণতায় সজীব থেকেছে। এমন নিকট-সজ্জনের স্মৃতি কখনও হারিয়ে যায় না।
নাচোলের হার না মানা, উপমহাদেশে নারী জাগরণ ও কৃষক আন্দোলনের এই কিংবদন্তী কৃষকনেত্রী ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর মারা যান।
জয়তু ইলা মিত্র