মৌলবাদ-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান
প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৬, ০৩:২১
গুলশানে রেস্টুরেন্টে ও শোলাকিয়ায় বর্বরোচিত জঙ্গী হামলা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণসহ সারাদেশে ধারাবাহিক উগ্রবাদী গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ডাকে সারাদেশে ‘বিক্ষোভ দিবস’ পালনের অংশ হিসেবে ১৩ জুলাই বুধবার বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রখেন মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হেসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, বাসদ(মাহবুব)-এর কেন্দ্রীয় নেতা ইয়াসিন মিঞা ও মহিনউদ্দিন লিটন, প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া নিরপরাধ মানুষকে যারা জবাই করতে পারে, যারা ঈদের জামাতে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে, ভিন্নধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে নিরীহ পুরোহিত-ভিক্ষু-পাদ্রীকে কুপিয়ে খুন করে তারা মানবতা ও সভ্যতার শত্রু। ধর্মের নামে মানুষ হত্যাকারী এই বর্বর শক্তির বিরুদ্ধে সকলকে আজ সোচ্চার হতে হবে।”
বক্তারা বলেন, “সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায় বিপুল অস্ত্র-বোমাসহ সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ প্রমাণ করে দেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও জনগণের নিরাপত্তাহীনতা প্রকটরূপ ধারণ করেছে। সরকার পুলিশকে দলীয়করণ করে বিরোধী দমনে ব্যস্ত। ধর্মের নামে গুপ্তহত্যাকে তারা সবসময় ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে দেখাতে চেয়েছে এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কাজে লাগাতে চেয়েছে। এই সুযোগে ধর্মীয় জঙ্গীবাদী শক্তি আজ মহীরুহ হয়ে দেখা দিয়েছে। এখনো সরকার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষিদের চিহ্নিত না করে বিরোধীদের কাঁধে দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। জঙ্গী সন্দেহভাজনদের বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে পুলিশী রাজত্ব কায়েম করছে।”
বাম মোর্চা নেতৃবৃন্দ বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’। কিন্তু এদেশের শাসকগোষ্ঠী সবসময় নিজেদের গণবিরোধী শাসন আড়াল করতে এবং ভোটের রাজনীতির স্বার্থে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করেছে, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে মদত দিয়েছে, ধর্মীয় কূপমণ্ডুক শিক্ষার বিস্তার ঘটিযেছে। এর ফলে সমাজের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি-পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। মহাজোট সরকার ফ্যাসিবাদী শাসন পাকাপোক্ত করতে পরিকল্পিতভাবে দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে। অধিকারহীন দমনমূলক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে একদিকে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করা হচ্ছে, অপরদিকে অন্ধকারের শক্তি মৌলবাদ-জঙ্গীবাদের ক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে।”
তাঁরা আরো বলেন, “জঙ্গীবাদ দমনে নিরাপত্তা সহযোগিতার নামে আমাদের দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার স্বার্থে একসময় আফগানিস্তান বা লিবিয়া-সিরিয়ায় আল কায়েদাসহ বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীকে অস্ত্র-অর্থ-প্রশিক্ষণ দিয়েছে, আবার সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে দেশে দেশে আগ্রাসন-হস্তক্ষেপ চালাচ্ছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাস বিরোধী মুসলিম দেশের কেন্দ্রে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ, অথচ এই সৌদিরা সিরিয়িায় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর পৃষ্ঠপোষক, তারা ইয়েমেনে গণহত্যা চালাচ্ছে। মার্কিন-ভারত-সৌদি শাসকগোষ্ঠী সবাই সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগায়, আবার একে অজুহাত করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। ফলে এদের ওপর নির্ভর করা যায় না।”
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা নেতৃবৃন্দ মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ উভয়ের বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠী ও কায়েমী স্বার্থের প্রভাবমুক্ত সকল বাম-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক শক্তি ও জনগণের প্রতি ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।