বাংলাদেশে ধর্ষণের মামলার শাস্তি হচ্ছে কি?
প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৭, ১৭:১০
বাংলাদেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের বহু ঘটনা ঘটছে কিন্তু তার বিচার এবং শাস্তি হচ্ছে খুবই কম। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাই ধামাচাপা পড়ে যায়। এছাড়া ধর্ষণের বিচার পেতেও নারীকে পদে পদে হয়রানি আর অবমাননার শিকার হতে হয়।
ধর্ষিত হয়ে চার বছর মামলা চালিয়ে বিচার পেয়েছেন এমন একটি মেয়ে সম্প্রতি বলেন, মাদ্রাসার একজন শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন। নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ভিকটিম বলেন, “আমার টিচার ছিল। ঘটনা হওয়ার পর আমরা পুলিশের কাছে যাই নাই। অনেক পরে জানাজানি হইছে। আমার ফ্যামিলিও জানতো না। আমারে ভয় দেখানো হইছিল। আর আমি তখন কিছুই বুঝতাম না। জানার পরে আমার আব্বু কোর্টে মামলা করে। মেডিকেল রিপোর্টে আসছিল আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছিলাম। আমার ঘটনা জানাজানির পরেই নিরাপত্তার জন্য আমি মহিলা আইনজীবী সমিতির শেল্টারে ছিলাম।”
ধর্ষণের শিকার নারীকেই দোষী করার একটা প্রবণতা এদেশের সমাজে আছে সেটিও এ ভিকটিমের অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি আরো বলেন “আমার এলাকার মানুষও সবসময় আমার বিরুদ্ধে ছিল। তারা চাইছিল আমাদের এলাকা থেকে বের করে দেয়ার।”
ধর্ষণের শিকার নারীকে বার বার ঘটনার বিবরণ দেয়া এবং নানান প্রশ্নের মুখে বিব্রত হতে হয়। এ ভিকটিম বলছিলেন, “আমি কোর্টে দুইবার গেছি। আমি মিথ্যা বলতেছি এমন প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। একটা সত্য ঘটনা মিথ্যা বলে প্রমাণের চেষ্টা করলে খারাপ লাগবেই। কোর্টের মাঝখানে এত মানুষের সামনে কথা বলতে আমার খুউব আনইজি লাগছে। এতগুলা মানুষের সামনে এত পারসোনাল বিষয়ে এতকথা বলা! তারপর এক একজন এক এক কথা বলে একেকটা মন্তব্য করে। যেমন এটা মিথ্যা হইতে পারে বা আমি খারাপ।”
চার বছর মামলা চলার পর তার ধর্ষকের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। এই ভিকটিম চার বছরে বিচার পেলেও অনেক মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে।
ধর্ষণের শিকার মেয়েদের সারাদেশে ৮টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মাধ্যমে কাউন্সেলিং, পুলিশি ও আইনি সহায়তা দেয়া হয়। ২০০১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্র থেকে ৪ হাজার ৩শ ৪১টি যৌন নির্যাতনের মামলা হয়েছে যার মধ্যে ৫শ ৭৮টি বিচার হয়েছে এবং সাজা হয়েছে মাত্র ৬৪টি ঘটনার।
ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ডাক্তার বিলকিস বেগম বলেন, শারীরিক পরীক্ষা যথাসময়ে না হলে ধর্ষণ প্রমাণ ও বিচার পাওয়া কঠিন।
তিনি বলেন, “আইনি লড়াইয়ের জন্য এই যে সার্টিফিকেটটা খুবই দরকার। এই সার্টিফিকেট না হলে কোনো বিচারই হবে না। ওরা আসতেই দেরি করে ফেলে অনেক সময়। ফাইন্ডিংস আমরা ঠিকমতো পাইনা। ঘটনা ওরা স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে, সময়টা কিল করে ফেলে। লিডাররা বসে সাতদিন পনেরদিন পার করে ফেলে আমরা ফাইন্ডিংস পাই না।”
সূত্র: বিবিসি