রোহিঙ্গা নারীদের দেহে ধর্ষণের আলামত
প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৫৯
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের পরীক্ষা করে বহু নারীর দেহেই ধর্ষণসহ ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের আলামত পেয়েছেন জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আসা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ওই মেডিকদের (চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী) বরাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
শারীরিক পরীক্ষা থেকে পাওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে মেডিকরা জানান, ওই রোহিঙ্গা নারীদের দেহে যৌন নির্যাতনে সৃষ্ট আঘাত ও ক্ষত পাওয়া গেছে। সেখান থেকে তারা সিদ্ধান্তে এসেছেন, ওই নারীরা যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকারও হয়েছে।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়া ৪ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ২৫ জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ-পরবর্তী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান সেখানে দায়িত্বরত ৮ স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাকর্মী। এর আগেও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘও এ অভিযোগ করেছিল সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করে, সেনাবাহিনীকে বদনাম করতেই এই মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে।
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র মুখপাত্র জও হ’তে বলেন, এ ধরণের যে অভিযোগই তাদের কাছে আনা হবে কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত চালাবে। ‘ধর্ষণের শিকার নারীদের উচিত আমাদের শরণাপন্ন হওয়া। আমরা তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেবো। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো,’ বলেন তিনি।
গত বছরের অক্টোবরে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর হওয়া সেনা অভিযানের সময়ও বহু নারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে। কিন্তু সে সময়ও নিজে থেকে এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি সু চি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৫ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।