ভারতে গিয়ে যৌনদাসী
প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০১৭, ১৭:১৭
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত লাগোয়া নদী পাড়ি দেন ১৬ বছরের এক তরুণী। চোখে স্বপ্ন নিয়ে ভারতে পা রাখলের নৃত্যশিক্ষকের চাকরির আশায়। কিন্তু কয়েকদিন পরেই সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। জন্মভূমি থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে মহারাষ্ট্রের পুনের এক ‘নিষিদ্ধ পল্লীতে’ বিক্রি হয়ে যায় মেয়েটি।
সেখানেকার নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে বাংলাদেশি এই তরুণী বলেন, প্রতিনিয়ত নিপীড়ন ও মারধর সইতে হয়েছে তাকে। তালাবন্ধ একটি কক্ষে আটকে রেখে তাকে বাধ্য করা হত যৌনকর্মে। প্রতিদিন অনেক খদ্দেরের মনোরঞ্জন করতে হত তাকে। প্রায় সাড়ে নয় মাস আগে তরুণীকে উদ্ধার করে পুনের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়। কেউ তাকে বাড়ি ফিরতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে ভাবতে পারেনি মেয়েটি।
সম্প্রতি থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভারতের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বাংলাদেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকা অনেকের দুঃসহ জীবনের কথা।
২০১৫ সালের মার্চে হাই কমিশনে যোগ দেওয়া মোশাররফ হোসেন থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, আমি অনেক বাংলাদেশি মেয়ে ও ছেলেকে পেয়েছি, যারা অনেক কষ্ট সয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। উদ্ধার হওয়াদের দেশে ফিরতে দেরির কারণ হিসেবে পাচারের ঘটনাগুলোর তদন্তে দীর্ঘসূত্রতার কথা বলেন তিনি।
গত দুই বছর ধরে এই কাজ করছেন মোশাররফ। বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা যেসব নারী ভারতে নিষিদ্ধ পল্লীগুলোতে কাজ করছেন, তাদের উদ্ধার করে দ্রুত দেশে পাঠানোই তার লক্ষ্য।
আমি (কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পর) দ্রুত কাজে নেমে পড়ি এবং উদ্ধার হওয়া অনেক বাংলাদেশি নারীর খোঁজ পেতে থাকি। কেরালায় আমি কয়েকটি মেয়েকে পাই, যারা দেশে ফেরার অপেক্ষায় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে সাত বছর ধরে অবস্থান করছে।
মোশাররফ গত বছর পুনের আশ্রয়কেন্দ্রসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রেসকিউ ফাউন্ডেশন পরিচালিত পুনের আশ্রয় কেন্দ্রে তিনি ওই তরুণীর দেখা পান দুই সপ্তাহ আগে। গেল সপ্তাহেই তার দেশে ফেরার কাগজপত্র প্রস্তুত হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তিনি দেশে ফিরতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তরুণী বলেন, আমার দেশে ফেরার কথা শুনে মা কেঁদেছে। মাকে বলেছি, কয়েক মাস আগেও আমার অবস্থা খারাপ ছিল, এখন অনেক ভালো আছি। ‘পতিতাপল্লী থেকে নয়, আশ্রয় কেন্দ্র থেকে দেশে ফিরতে পারছি, আমি খুশি।’