নির্মম নির্যাতনের শিকার শিশু আর্জিনা

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০১৬, ১৫:২২

অনলাইন ডেস্ক

আর্জিনা বেগম। বয়স মাত্র ৬। যে বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, সংসারের অভাব তাকে তখন ঠেলে দিয়েছিল উপার্জনের পথে। অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গিয়েছিল সে। সাত বছর কেটে গেলো এভাবেই। সম্প্রতি ওই বাড়িতেই নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছে মেয়েটি। পরে এক স্বজন গিয়ে তাকে নিয়ে আসে। শরীরে ক্ষত আর নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন নিয়ে মেয়েটি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।    

শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোড়ার দাগ, ডান হাত ও কোমড়ের হাড় ভাঙা, আঘাত আর পোড়ার চিহ্নও রয়েছে শরীরের বিভিন্ন স্থানে।

রবিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে ১৩ বছরের আর্জিনাকে ভর্তি করা হয় নীলফামারীর ডিমলা হাসপাতালে।  

২০০৯ সালের লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আরজি শেখ সুন্দর গ্রামের আনছের আলীর শিশু কন্যা ছয় বছর বয়সী আর্জিনা বেগমকে কাজে মেয়ে হিসাবে পাঠানো হয় টাঙ্গাইল জেলা সদরের বিশ্বাস বেতটার সিংনাত পাড়ার তাজুল ইসলামের বাড়ীতে। গত এক বছর ধরে মেয়েটির ওপর গৃহকর্তী আমেনা বেগম ও তার মেয়ে লাভলী আক্তার তাকে নানা নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছে মেয়েটি। শিশুটির অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে, সে ঠিকমত কথাই বলতে পারছে না।

আজিনার মা আনজু বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভাল বাসায় কাজের মেয়ে নিবে শুনছিলাম। পরে আমার মেয়েকে পাঠাই সেখানে। মেয়েটি কয়েক বছর ভালই ছিল সেখানে। প্রতি ঈদে বাড়ি আসত। নতুন কাপড় দিতে আসত। কিন্তু ছয় মাস থেকে মোবাইলে কথা বলতে দিত না তার সাথে।’

আর্জিনার মা বলেন, ‘যখনই ফোন দিতাম, বলতো বাইরে আছে। বাড়িতে গিয়ে ফোন দিবে। কিন্তু আর ফোন দিত না। দুই ঈদে বাড়িতে আসেনি।’ 

আর্জিনার মা জানান, গৃহকর্তীর এমন আচরণে তার সন্দেহ হলে মেয়েটির দুসর্ম্পকের দাদা নুর মোহাম্মদকে তিনি ওই বাড়িতে পাঠান। গিয়ে মেয়েটির অবস্থা দেখে আঁতকে উঠেন তিনি। এরপর শনিবার (১ অক্টোবর) সকালে আর্জিনাকে বাসে টাঙ্গাইল থেকে নীলফামারীর ডিমলার সুটিবাড়ী বাজারে তার নানার বাড়ি নিয়ে আসেন।    

রবিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে মেয়েটি অবস্থা দেখে গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ ইবনে ফয়সাল মুন ডিমলা হাসপাতালে ভর্তি করেন মেয়েটিকে। 

ডিমলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইয়াসমিন ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছে মেয়েটিকে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পোড়ার দাগ। ডান হাতের বাহুর হাড়, কোমড়ের হাড় ভাঙা, হাতের নখে সিরিঞ্জ ঢুকানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সে মারাত্মক অসুস্থ্য। তাকে দ্রুত রংপুর হাসপাতালে স্থান্তান্তর করার দরকার।’ 

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউর করিম বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে মেয়েটির চিকিৎসার তদারকি করতে বলা হয়েছে। আর দ্রুত মামলা করতে বলা হয়েছে আর্জিনা'র পরিবারকে।’ 

মেয়েটিকে নির্যাতন করার বিষয়ে জানতে গৃহকর্তা তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেয়েটিকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাহলে মেয়েটির হাড় ও কোমর ভাঙা কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তাজুল বলেন, ‘সেটি আগে থেকে ভাঙা ছিল।’ 

গায়ে পোড়ার দাগ থাকার পেছনে তাজুল বলেন, ‘শরীরের বিভিন্ন স্থানে চর্ম রোগের কারণে ঘায়ের দাগ এগুলো।’