গর্ভে মেয়ে সন্তানের খবরে স্ত্রীকে হত্যা!
প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৭, ০৩:১৫
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার শিবপুর গ্রামে স্ত্রীর গর্ভে মেয়ে সন্তান আসার খবরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ইয়াছমিন আক্তার (২৬) একই উপজেলার জিন্নতপুর গ্রামের মো. কবির হোসেনের মেয়ে। নিহতের স্বামী মোস্তফাকে পুলিশ আটক করেছে। আজ পুলিশ নিহতের লাশ মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় স্বামী, দেবর, ননদসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে নিহতের বাবা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দেবিদ্বার উপজেলার শিবপুর গ্রামের মৃত. রেহান উদ্দিন রেনু মিয়ার ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী মোস্তফা কামালের সাথে একই উপজেলার জিন্নতপুর গ্রামের মো. কবির হোসেনের মেয়ে ইয়াছমিন আক্তারের গত বছরের ১০ অক্টোবর বিয়ে হয়। মোস্তফা কামালের পিতা রেহান উদ্দিন রেনু মিয়া ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় তার শ্বশুর বাড়ি থেকে ৪ লক্ষ টাকা চিকিৎসা বাবদ আনে। মোস্তফা দীর্ঘসময় দেশে থাকায় তার সিঙ্গাপুরের ভিসা বাতিল হয়ে যায়। অপরদিকে ইয়াছমিনের ভগ্নিপতি সিঙ্গাপুর প্রবাসী আজিজুল হক মোস্তফাকে পুনরায় সিঙ্গাপুর নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরই মধ্যে ইয়াছমিন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। মেয়ে সন্তান হবে এমন খবরে শ্বশুর বাড়ির লোকজন নাখোশ হয়ে ইয়াছমিনকে অবজ্ঞা করতে থাকে। এ নিয়ে চলতে থাকে পারিবারিক বিরোধ। গত ৭-৮দিন যাবৎ মোস্তফা তার পিতার চিকিৎসা বাবদ ঋণের বোঝা কমাতে ইয়াছমিনকে ৩ লক্ষ টাকা এনে দিতে চাপ প্রয়োগ করে। ইয়াছমিনের পিতার পরিবার তা দিতে অপারগতা জানান। কারণ এ টাকা এখন দিয়ে দিলে বিদেশ যাওয়ার সময় টাকার অভাবে তার আর বিদেশ যাওয়া হবে না। এ নিয়ে দু’পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলতে থাকে। মেয়ে সন্তান আর টাকার জন্য ইয়াছমিনের উপর চলে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন। ৯ জুলাই (রবিবার) দুপুরে এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তার শ্বশুর বাড়ির শোবার ঘরের ছাদের ফ্যানের হুকের সাথে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে ইয়াছমিন ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
নিহতের বাবা কবির হোসেন জানান, গর্ভে মেয়ে সন্তান ধারণ করায় এবং ঋণের টাকার জন্য প্রতিনিয়ত নির্যাতনে শিকার হতো তার মেয়ে। ঘটনার দিন ৯ জুলাই (রবিবার) বেলা সাড়ে ৪টায় একই কারণে শারিরীক নির্যাতনের এক পর্যায়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা শেষে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার কোন লক্ষণ দেখিনি। তার মুখের অবস্থা ও জিহ্বা স্বাভাবিক ছিল।
দেবিদ্বার থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই ইয়াছমিন আক্তার আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে হত্যা নাকি আত্মহত্যা। এ ঘটনায় ইয়াছমিনের পিতা মো. কবির হোসেন বাদী হয়ে ইয়াছমিনের স্বামী মোস্তফা কামাল (৩৬), দেবর মো. ইয়াছিন (২৮), ননদ নাজমা বেগম (৩৩) ও সালমা বেগমকে (৩৭) অভিযুক্ত করে দেবিদ্বার থানায় মামলা দায়ের করেছেন।