ডিম পোচ করতে না পারায়ই সাবিনাকে নির্যাতন
প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০১৭, ২২:২৭
ডিম পোচ করতে গিয়ে ডিমের কুসুম ছড়িয়ে যাওয়াই ছিল তার অপরাধ। আর এই অপরাধেই ১১ বছর বয়সী সাবিনার বুকে ও হাতে গরম খুনতি দিয়ে ছ্যাঁকা দেন ‘ম্যাডাম’ আয়েশা লতিফ। শুধু তাই নয়, রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে পেটানো হয় সাবিনাকে। আঘাতে কালো হয়ে ফুলে প্রায় বন্ধ সাবিনার দুই চোখ। মাথা, গলা, পিঠ, উরুসহ সারা শরীরেও নতুন-পুরোনো অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট।
স্থানীয় বাসিন্দা, থানা এবং ঢামেক এর ওসিসির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় মাস আগে টাঙ্গাইলের সাবিনা ঢাকায় কাজ নেয় লে. কর্নেল তসলিম আহসানের বাসায়। শিশুটিকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতেন তসলিম আহসানের স্ত্রী আয়েশা লতিফ। গত ৩০ জুন সর্বশেষ নির্যাতনের শিকার হয় সে। সেসময় কোনোভাবে মিরপুরের ডিওএইচএসের বাসা থেকে পালাতে সক্ষম হয় সাবিনা।
এরপর মিরপুর ১২ নম্বরে মিরপুর সেনানিবাসের কাছে মোল্লা মার্কেটের সামনে থেকে স্থানীয় ব্যক্তিরা যখন তাকে উদ্ধার করেন, তখনো ভালোভাবে হাঁটতেই পারছিল না সে। উদ্ধারের পর তাকে পল্লবী থানায় নেওয়া হয়। সেখানেই গত ২ জুলাই বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ফৌজদারি কর্যবিধিতে মামলা করে সাবিনা। সেদিনই পল্লবী থানার উদ্যোগে তাকে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।
পল্লবী থানা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) এবং সাবিনাকে উদ্ধারকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে সাবিনা জানিয়েছে, ডিম পোচ ভালোভাবে করতে না পারায় ম্যাডাম তাকে পিটিয়েছেন।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার সময় তসলিম আহসান যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। আয়েশা লতিফের এক মেয়ে আছে। বর্তমানে তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানা গেছে।
এদিকে ৩ জুলাই (সোমবার) সকালে সাবিনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগেই ‘উন্নত চিকিৎসা’র জন্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে।
ওসিসির সমন্বয়কারী বিলকিস বেগম বলেন, শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে।
পল্লবী থানায় এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসিফ ইকবাল বলেন, মামলার আসামি এখন পর্যন্ত পলাতক আছেন। মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মেয়েটির শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। তাই তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার সকালে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) নির্বাহী পরিচালক এবং সরকারের শিশুশ্রমবিষয়ক কমিটির কো-চেয়ার সালমা আলী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। এরপর তিনি বলেন, "হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, 'বেটার ট্রিটমেন্টের' জন্য শিশুটিকে সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, ওসিসি থেকে রাতারাতি কেন শিশুটিকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হলো? কোন মহলের চাপের কারণে এটি করতে হলো?"
সালমা আলী বলেন, ওসিসিতে থাকা অবস্থায় বিএনডব্লিউএলএ শিশুটির কাছ থেকে ওকালতনামা নিয়েছে। শিশুটির মামলায় আইনি সহায়তা দেবে বিএনডব্লিউএলএ।