ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে গৃহকর্মীকে হত্যার চেষ্টা
প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০১৭, ১৫:৩৫
রাজধানীর শাহবাগ থানার পরীবাগে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে এক গৃহকর্মীকে ৭ তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে হত্যাচেষ্টা করেছেন গৃহকর্তা। মুমূর্ষু অবস্থায় ৩০ বছর বয়সী ওই গৃহকর্মীকে ৩০ জুন (শুক্রবার) রাত সোয়া ১১টায় পুলিশ ও প্রতিবেশীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
শাহবাগ থানার এএসআই তরিকুল ইসলাম জানান, পরীবাগের ৭/৮ দিগন্ত টাওয়ারের ৭ তলার ৩/৩ এ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সালেহ আহমেদের বাসায় কাজের জন্য বরিশালের রাজাপুর থেকে ১৫ দিন আগে তাকে আনা হয়।
গৃহকর্মীর অভিযোগ, সে ওই বাসায় কাজে যোগ দেয়ার পর থেকেই গৃহকর্তা সালেহ আহমেদ তাকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন। সে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সালেহ আহমেদ তাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে জাপটে ধরেন।
একপর্যায়ে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ক্ষিপ্ত সালেহ আহমেদ তাকে ৭ তলা থেকে নিচে ফেলে দেন। পরে দিগন্ত টাওয়ারের একজন ফ্ল্যাট মালিক আশরাফ হোসেনসহ প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩০ বছরের ওই নারীর ডান হাত ভেঙেছে, পিঠে গুরুতর আঘাতের কারণে পারছেন না নড়াচড়া করতে, জখম হয়েছে তার মুখেও। গৃহকর্মীর চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ যোগানো নিয়ে দিশেহারা তার স্বজনরা।
১ জুলাই (শনিবার) রাতে মিরপুর থেকে সালেহ আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জাফর আলী বিশ্বাস জানিয়েছেন। বাসার নিচ থেকে আটক করা হয়েছে তার ব্যবহৃত একটি গাড়ি, যাতে জাতীয় সংসদের মনোগ্রামযুক্ত স্টিকার লাগানো রয়েছে।
পরীবাগের বিলাসবহুল দিগন্ত টাওয়ারে এ জেড এম সালেহ আহমেদ ও তার বাবার দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই রাতে সালেহর বাবা আবুল হোসেনকেও আটক করা হয়। দিগন্ত টাওয়ারের আরেকটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হোসেন বিএনপির সহযোগী সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২ জুলাই (রবিবার) আদালতে পাঠানো হয় বলে পরিদর্শক জাফর জানান।
হাসপাতালে ওই গৃহকর্মী জানান, বাড্ডার নাজমা আক্তার নামের এক নারীর মাধ্যমে গত ১৬ জুন পরীবাগের এই বাসায় মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ নেন তিনি। কাজ শুরুর পরদিনই গৃহকর্তা তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। ওই বাসায় মনোয়ারা বেগম নামে একজন বৃদ্ধাও আট হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। বাসায় সালেহ আহমেদের স্ত্রী পরিচয় দেওয়া সীমা নামের আরেক নারী থাকতেন।
সালেহ আহমেদ বাসার বাইরে গেলে সবাইকে তালাবন্ধ করে রেখে যেতেন। প্রায়ই বাসায় বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা আসত। তারা একটা রুমে ইয়াবা সেবন করত।
গৃহকর্মীর মা বলেন, আমার মেয়ে তো কোনো অন্যায় করেনি। তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। তাকে অন্যায় কাজে বাধ্য করতে চাওয়া হয়েছিল। নিজেকে রক্ষা করতে চাওয়ায় বাড়ির মালিক তাকে সাত তলা থেকে ফেলে দেয়। এখন মেয়ের চিকিৎসার খরচ কীভাবে চালাব জানি না।
তার ভাই বলেন, বনানীতে একটি বাসায় গাড়ি চালাই। বোনের চিকিৎসার জন্য বেতনের বেশ কিছু টাকা এরইমধ্যে তোলা হয়ে গেছে। এখন মালিক ছুটিও দিতে চাইছে না। হাসপাতালে অনেকগুলো টেস্ট করতে দিয়েছে। এজন্য যে টাকা দরকার, সেটা আমাদের কাছে নেই। কেউ চিকিৎসার খরচ মেটানোর জন্য এগিয়ে না এলে আমার বোনের চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে না।