মিতু হত্যা: মুছার ভাইসহ গ্রেপ্তার আরো ২
প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০১৬, ১৫:৩৭ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬, ২১:১৭
এসপি বাবুল আক্তার এর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরও দুইজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রামের পুলিশ।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলছেন, "শুক্রবার ভোর রাতে শাহজাহান ও সাইফুল ওরফে সাকু নামে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়"।
তিনি বলেন, "এই ঘটনায় আগে গ্রেপ্তার হওয়া ওয়াসিম ও আনোয়ার ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল শাহজাহান হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। আর সাইফুল এ মামলায় অন্যতম সন্দেহভাজন মুছার ছোট ভাই। মিতু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি কিনতে সে সহায়তা করেছিল”।
শুক্রবার দুজনকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাইফুলের ভাই কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মধ্যম ঘাগড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম শিকদারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতির অন্তত আটটি মামলা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মুছার বিরুদ্ধে ২০০১ সালে রাঙ্গুনিয়ায় সরকারি বন কর্মচারিদের ওপর হামলা করে গাছ ছিনতাইয়ের দুটি মামলা রয়েছে। একই থানায় ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে দুটি ডাকাতি, একটি অস্ত্র ও একটি হত্যা মামলা হয়। ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে ইমারত বিধিমালা আইনেও একটি মামলা হয়।
আর শাহজাহান একই উপজেলার ঘাগড়া কুল রানীর হাটের বাসিন্দা কবির আহমদের ছেলে।
গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল ও শাহজাহানকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ওয়াসিম এর জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় শাহজাহান নিরিবিলি হোটেলের নিচে অবস্থান নিয়ে পর্যবেক্ষণে ছিল। নবী, কালু, মুছার সঙ্গে নিজেও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা জনিয়ে ওয়াসিম জবানবন্দিতে বলেছে, নবী ও কালু মিতুকে ছুরিকাঘাত করে ও সে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন চট্টগ্রামে বিভিন্ন জঙ্গি বিরোধী অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী। ঘটনার পরদিন ভোরে গোয়েন্দা পুলিশ নগরীর পাঁচলাইশ থানার বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে, মোটরসাইকেলটি বোয়ালখালী উপজেলা থেকে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে গত ৮ মে চুরি হয় বলে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মোটরসাইকেল চুরির সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল হাটহাজারী থানার নতুনপাড়া এলাকা থেকে সন্দেহভাজন চোর রনিকে ও পটিয়া থেকে তার সহযোগী আরিফকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের খবর বের হয়।
এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আট জনকে গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে গত ২৬ জুন আনোয়ার ও মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করে পুলিশ।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এই দুজন জানায়, মুছার ‘পরিকল্পনানুযায়ী’ এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এর কয়েকদিন আগে থেকে তারা পরিকল্পনায় ছিল এবং মুছা মোটরসাইকেল সংগ্রহ করে।
তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে ওই হামলার ‘অস্ত্র জোগানদাতা’ এহতেশামুল হক ভোলা ও মনির হোসেন নামে দুইজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।
মুছা ও শাহজাহান, রাশেদ, নবী ও কালু নামে মোট পাঁচজনকে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন ঘোষণা করে বুধবার তাদের দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পুলিশ। এদের কয়েকজন আগে থেকেই পুলিশের হাতে রয়েছে বলে তাদের স্বজনরা সন্দেহ করলেও সিএমপি কমিশনার তাদের গ্রেপ্তারের খবর অস্বীকার করেন।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শুরুতে জঙ্গিদের দায়ী মনে করলেও তদন্তকারীরা এখন বলছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পেশাদার অপরাধী।