রাঙামাটিতে বাড়ছে খাবারের দাম, বেঁচে থাকার হাহাকার
প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৭, ২২:০২ | আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭, ২২:১২
রাঙামাটিতে চলছে মৃত স্বজনদের জন্য আহাজারি আর নিজেদের বেঁচে থাকার লড়াই। যারা স্বজন হারায়নি তারাও জীবন না হারানোর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। খাবার পানির, খাবারের, কেরোসিনের, দিয়াশলাইয়ের, মোমবাতির সংগ্রহের জন্য। বিচ্ছিন্ন রাঙামাটিজুড়ে এখন এ রকম খণ্ড খণ্ড সংগ্রাম ও হাহাকার এখন নিত্য দিনের সঙ্গী।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা যায়, টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের পর গত ১৩ জুন (মঙ্গলবার) থেকে সড়কপথে বিচ্ছিন্ন রাঙামাটি। পণ্যবাহী কোনো যান ঢুকতে পারছে না এই শহরে। ভেঙে পড়েছে সব ধরনের সরবরাহ ব্যবস্থা। সময় যত গড়াচ্ছে রাঙামাটির সব কিছুই যেন ফুরিয়ে আসছে।
বিদ্যুৎ নেই। তাই লাইনে পানির সরবরাহ বন্ধ। সবার পক্ষে বোতলজাত পানি কেনা সম্ভব নয়, সামর্থ্যও নেই অনেকের। যাদের আছে তারাও কিনতে পারছে না সংকটের কারণে। যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় কুপির কেরোসিন ও মোমবাতির জন্য অনেকটা মারামারির মতো অবস্থা। বাড়তি দাম দিয়েও তা পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের আইপিএস আছে, তাতে চার্জ নেই। চার্জ দেওয়ার সুযোগ না থাকায় অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ হয়ে গেছে।
বাজারে কোনো মাছ-মাংস নেই, সবজিও শেষে দিকে। কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় এত দিন রাঙামাটির মানুষ নির্ভরশীল ছিল বাইরে থেকে আসা মাছের ওপর। কিন্তু যোগাযোগবিচ্ছিন্নতার কারণে সেই মাছও আসছে না। আবার দুর্যোগের কারণে গরু-মহিষ জবাইও অনেকটা বন্ধ। ফলে ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে খাবারের সংকট।
১৫ জুন (বৃহস্পতিবার) শহরের প্রধান তিন বাজার তবলছড়ি, রিজার্ভবাজার, বনরূপা দৃশ্য হচ্ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মজুদ কমে আসায় যা পাওয়া যাচ্ছে তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। ২০ টাকা দামের আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, ৬০ টাকার মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে ২০০ টাকায়।
গত দুই দিনে শহরের প্রায় প্রতিটি তেলের দোকান ও পেট্রল পাম্পে কোথাও কোন জ্বালানি তেল নেই বলেই চলে। ফলে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে অন্যান্য সব গাড়ি। জ্বালানি তেল না থাকায় ব্যক্তিগত ও অফিশিয়াল জেনারেটরগুলোও বন্ধ হয়ে পড়ছে।
দিনমজুর সুহেল মিয়া বলেন, ১৮ বছর ধরে রাঙামাটিতে আছি, কিন্তু কোনো দিন এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে বুঝতে পারিনি।
রাঙামাটি শহরের লোকজন এখন সেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাউকে না গিয়ে সরকারের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহের পরামর্শ দিচ্ছে। কেননা স্বেচ্ছাসেবীরা গিয়ে বিপাকে পড়তে পারে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান ১৫ জুন (বৃহস্পতিবার) শহরের সব বাজারের ব্যবসায়ীদের ডেকে জরুরি সভা করেছেন। তাদের বলা হয়েছে, মানবিক বিপর্যয়ের এই পরিস্থিতিতে কোনো বাজারে কেউ যদি কোনো পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্যবসায়ী নেতারা জেলা প্রশাসককে আশ্বাস দিলেও বিভিন্ন বাজারে ক্রেতাদের জিম্মি করে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, দুই দিনের মধ্যে শহরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আংশিকভাবে চালু করা সম্ভব হবে। বিকল্প উপায় হিসেবে কাপ্তাই থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে এই সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার।