অবশেষে চট্টগ্রামের মরণ ফাঁদ মহেষখালের বাঁধ অপসারণ
প্রকাশ | ১৪ জুন ২০১৭, ০৩:২১
অবশেষে চট্টগ্রাম মহানগরীর মরণ ফাঁদ খ্যাত মহেষখালের ওপর নির্মিত বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবির মুখে ১৩ জুন (মঙ্গলবার) দুপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নির্মাণের মাত্র দেড় বছরের মাথায় আলোচিত এই বাঁধ অপসারণের কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। বাঁধ অপসারণকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে উৎসুক হাজার হাজার জনতা ভিড় জমায়।
এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তড়িঘড়ি করে বন্দর অডিটোরিয়াম সংলগ্ন মহেষখালের ওপর বাঁধ নির্মাণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নির্মাণ কাজ শুরুর সময় নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, তৎকালীন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঊর্ধ্বতন বন্দর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার অপসারণ কাজ শুরুর আগে সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, "জনগণের দাবিতে এই বাঁধ দেয়া হয়েছিল। এখন আবার জনগণের দাবির প্রতি সম্মান রেখে তা অপসারণ করা হচ্ছে। এতে করে জনগণের সুফল না কুফল হবে তা বলতে পারবো না"।
জানা যায়, প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মহেষখালের ওপর বাঁধ নির্মাণের ফলে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে নগরীর আগ্রাবাদসহ তৎসংলগ্ন এলাকার লোকজন এক প্রকার পানিবন্দী দশায় পড়ে। নগরীর দক্ষিণ পশ্চিমাংশের কয়েকটি ওয়ার্ডের লোকজনকে সড়ক পারাপারে নৌকা পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়েছে। আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার বাসা-বাড়ির অনেক লোকজন পানির কারণে অন্যত্র চলে গেছে। এ সকল এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য এক প্রকার লাটে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে মহেষখাল ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় এর পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া মহেষখালের পাড় ও তার পাশ্ববর্তী উন্মুক্ত পুকুর, জলাধারসহ প্রাকৃতিক পানি রিজার্ভারগুলোতে অবকাঠামোসহ বাসা-বাড়ি গড়ে উঠায় স্বল্প বৃষ্টিতেই উপচে পড়া পানি বাসা-বাড়ি ছাড়াও মূল সড়কে ছেয়ে যায়। এতে করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
আবার কর্ণফুলী নদীর সাথে যুক্ত মহেষখাল দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে আগ্রাবাদ হালিশহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। এলাকার লোকজন তা থেকে মুক্তি পেতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে। এ সমস্যা সমাধানে লোকজন বন্দর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করতে থাকেন।
এই বাঁধ নির্মাণের সময় কেউ বিরোধিতা না করলেও সকলের বক্তব্য হলো পানি বিশেষজ্ঞদের কোন প্রকার মতামত গ্রহণ ছাড়াই সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে বিশাল অংকের টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ বাঁধ নির্মাণের কিছুদিনের মাথায় যারা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা এবং বাঁধের নিচের অংশের লোকজন এর অপসারণের দাবি জানাতে থাকেন। ফলে দেড় বছর পর বাঁধটি অপসারণ করতে হলো।