লক্ষ্মীপুরের ৫০০ নারীর কর্মসংস্থান আয়েশা উদ্যোগে

প্রকাশ | ২৮ জুন ২০১৬, ১৯:৩৭

অনলাইন ডেস্ক

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের মেয়ে আয়েশা বেগমের অক্লান্ত পরিশ্রমের সফলতায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন প্রায় ৫শ’ জন নারী। সমাজের বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও এলাকার দরিদ্র নারীদের নিয়ে আয়েশা নিজের বাড়িতে শুরু করেন ছোট একটি বুটিক কারখানা।

বর্তমানে জেলার রায়পুর উপজেলার চরবংশী গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি, চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার কাটাখালী ও সদর উপজেলার কামান খোলা এলাকার বাবুর বাড়িতে মিলে রয়েছে শতাদিক বুটিক ফ্রেম। নারীদের হাতে কাজ করা বুটিক শাড়ী যাচ্ছে ঢাকা শহরের বসুন্ধরা মার্কেট, নিউ-মার্কেট ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। সরকারি বা কোন দাতা সংস্থার সহযোগীতা পেলে এ পেশায় আরো বহু নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় রায়পুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে ৫ ক্যাটাগরিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১০ জন করে জয়িতা বাছাই করেন। এতে আয়েশা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অর্থনীতি সাফল্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন। পরে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিভাগে ৫০টি উপজেলার ২৫০ নারীকে পিছনে ফেলে ওই ক্যাটাগরিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা লাভ করে নির্বাচিত হন আয়েশা। এখন জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়াও আয়েশা নার্সিং ট্রেনিং নিচ্ছেন লক্ষ্মীপুরে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল টেকনোলজিতে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কামানখোলার বাবুর বাড়িতে ঘিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে চলছে শাড়ীতে বুটিকের কাজ। সমাজের পিছিয়ে পড়া মহিলারা ও লেখা-পড়ার পাশা-পাশি স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা শাড়ীতে বুটিকের কাজ করে বাড়তি টাকা রোজগার করছে।

উদ্যোক্তা আয়েশা বেগম বলেন, অষ্টম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তার বাল্যবিয়ে হয় কৃষক মোস্তফার সাথে। বিয়ের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। নিজের শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও শিক্ষিত হতে না পেরে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন বুনেন। ছেলের উচ্চ শিক্ষার জন্য এলাকার একটি বুটিকের দোকানে মাসে ১৫ শ’ টাকা বেতনে চাকরি নেন। এর মাঝে আয়েশা তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণের জন্য ‘বাংলাদেশ উম্মক্ত বিশবিদ্যালয়ে’ মাধ্যমিক শাখার ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। প্রতিবেশিদের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে আয়েশা নিজের ঘরেই একটি ছোট বুটিকের কারখানা গড়ে তোলেন। এ আয় দিয়ে ছেলের লেখাপড়া ও সংসার চলতে শুরু হয়। এতেই সংসারের কিছুটা অভাব দূর হয়। এভাবেই ৬ বছর পার হলে আয়েশা বিএ পাস করেন। পরে সমাজের বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও এলাকার দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নিজের ছোট বুটিকের আয় দিয়ে ১৩টি ফ্রেম দিয়ে গ্রামে গড়ে তুলেন একটি বড় কারখানা। ঘুরে যায় তার জীবনের গতি। এলাকার দরিদ্র নারীদের নিয়ে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার কাটাখালী এবং চলতি বছরের ১ জুলাই সদর উপজেলার কামানখোলা এলাকার বাবুর বাড়িতেসহ তিনটি কারখানা গড়ে তোলেন। যার মধ্যে শতাদিক ফ্রেমে কাজ করছে ৩ শতাধিক নারী এবং চরবংশী নিজ গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে এই বুটিকের কাজ করে সাবলম্বী হচ্ছে ২শ’ নারী। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিভাগে ৫০টি উপজেলার ২৫০ নারীকে পিছনে ফেলে অর্থনীতি সাফল্যেতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা লাভ করে নির্বাচিত হন আয়েশা।

তিনি আরো জানান, আমার এই সম্মাননা সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য উৎসর্গ করেছি। তবে আমার বুটিক কারখানায় সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতা, সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা পেলে নারীর কর্মসংস্থান করাসহ উৎপাদন বৃদ্ধি পেত। শিল্প কেন্দ্রীক সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণে ভাগ্য বদল হতে পারে এ অঞ্চলের সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের।