বনানী ধর্ষকদের রক্ষায় মসজিদে মোনাজাত-কোরান খতম!
প্রকাশ | ২০ মে ২০১৭, ২০:৩১
চাঞ্চল্যকর বনানী ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত ধর্ষণকারীদের মুক্তি ও আপন জুয়েলার্স পরিবারের সদস্যদের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষার জন্য কক্সবাজারের ২টি মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে।
এমনকি ধর্ষকদের রক্ষার জন্য মসজিদে বিশেষ কোরান খতমেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ ও বদর মোকাম জামে মসজিদে জুম্মার নামাজে ধর্ষকদের রক্ষার জন্য এমন ধর্মীয় প্রার্থনায় উপস্থিত মুসল্লিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
১৯ মে (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর কক্সবাজারের শহরের বায়তুশ শরফ মসজিদে ধর্ষক ও আপন জুয়েলার্সের জন্য কেন মোনাজাত করা হলো তা নিয়ে মুসল্লিরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। পরে তোপের মুখে বাইতুশ শরফ মসজিদ কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও মসজিদের ইমাম মৌলানা রিদুয়ানুর হক পালিয়ে যান।
আবুল বাশার নামের ওই মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া এক মুসল্লি জানান, নামাজের সময় তিনি একেবারে সামনের সারিতেই ছিলেন। জুমার নামাজ শেষে মসজিদের ইমাম মৌলানা রিদুয়ানুল হক মোনাজাতে রাজধানীর বনানীতে ২ ছাত্রী ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের মুক্তি ও আপন জুয়েলার্সকে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করেন।
একাধিক মুসল্লি জানান, বাইতুশ শরফ মসজিদ কক্সবাজার শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এই মসজিদে কয়েক হাজার মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেন। মোনাজাত শেষ হওয়ার পর ৩ তলা ওই মসজিদের কয়েক হাজার মুসল্লি চিৎকার শুরু করেন। তারা মসজিদের ইমাম ও কমিটির সভাপতির কাছে এই ধরণের ঘৃণিত কাজের জন্য মোনাজাত কেন করা হয়েছে তা জানতে চান। মুসল্লিরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে ইমাম ও সভাপতি দ্রুত পালিয়ে যায়।
মসজিদের ইমাম মৌলানা রিদুয়ান জানান, জুমার নামাজের পর কার কার জন্য দোয়া করতে হবে তা সভাপতি সিরাজুল ইসলাম কাগজে লিখে দেন। আমি ঐ কাগজ দেখে দোয়া করি।
আবুল মনসুর নামে আরেক মুসল্লি জানিয়েছেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি জামায়াতে ইসলামীর মতাদর্শে বিশ্বাসী। যুদ্ধপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের অনুসারী ছিলেন। নানা সময় মসজিদের ভেতরে সিরাজুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কটূক্তি করেছেন।
এই দিকে জুমার নামাজে মসজিদে ধর্ষক ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য দোয়া চাওয়া নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসী ঐ ইমামকে মসজিদে ঢুকতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এই ব্যাপারে বাইতুশ শরফ কমপ্লেক্সের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মসজিদে ধর্ষক ও আপন জুয়েলার্সের জন্য দোয়া করার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, মসজিদে যে কারো জন্য দোয়া করতে পারে। এটি অন্যায়ের কিছু না।
অপরদিকে শহরের বদরমোকাম মসজিদের পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন ব্যক্তি মসজিদের ইমাম মওলানা ইউনুছ ফরাজীকে আপন জুয়েলার্সের জন্য দোয়া করতে বলেন। ইমাম সহজ-সরল মনে তাই করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসা লোকজন বদরমোকাম মসজিদের ইমামকে নগদ টাকা দিয়ে কোরান খতমেরও আয়োজন করেন। গতকাল আছরের নামাজের আগে খতমও পড়ানো হয় মসজিদটিতে।’