মিতু হত্যা
গভীর রাতে এসপি বাবুল আক্তারকে নিয়ে গেছে পুলিশ
প্রকাশ | ২৫ জুন ২০১৬, ১৫:১৯
জঙ্গি দমন অভিযানের জন্য আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে গভীর রাতে ঢাকায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ।
শনিবার সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, “কয়েকজন আসামির সামনে মুখোমুখি করে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
মিতু হত্যাকাণ্ডে এসপি বাবুল আক্তারকেই গ্রেফতার করা হয়েছে এমন গুজবের সত্যতা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এখনও বলার সময় হয়নি। শিগগিরই জানতে পারবেন।”
বাবুল আক্তারকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাবুল আক্তার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ওই এলাকার অনেককেই তিনি চেনেন, যাদের আটক করেছি তাদের কনফার্ম করার জন্য বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।”
এদিকে বাবুল আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে স্বজনদের মধ্যে সন্দেহ আর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তার বাবা ও শ্বশুর বলছেন, বাবুলের স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে এসেছে; কিন্তু এখন তারাও সহযোগিতা ‘করছে না’।
স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুর বাড়িতেই থাকছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেন, "শুক্রবার রাত ১টার দিকে তাদের বনশ্রীর বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে নিয়ে যায় খিলগাঁও থানার ওসি মঈনুল হোসেন ও মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন। আইজি সাহেব দেখা করতে বলেছেন বলে ওকে নিয়ে গেল। এরপর তার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারছি না। যারা নিয়ে গেল তাদের সাথেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।”
মিতু হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রামে যে মামলা হয়েছে, বাবুল আক্তারই তার বাদী। সে কারণে প্রায়ই তাকে পুলিশের কার্যালয়ে যেতে হত বলে মোশাররফ হোসেন জানান।
তিনি বলেন, “আগেও ও রাতে গেছে। কিন্তু যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে এমন হয়নি। এ কারণে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না কেন? ফোন বাজছে, ধরছে না কেন? বাসায় দুই বাচ্চা কাঁদছে, মা তো আর নেই।”
শুক্রবার রাতে বনশ্রী থেকে যখন বাবুল আক্তারকে নিয়ে যাওয়া হয়, তার বাবা ওয়াদুদ মিয়াও তখন ওই বাসায় ছিলেন। তিনি বলেন, “সন্ধ্যায় অফিসার্স ক্লাবে একটা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে যাওয়ার পর বাবুল জানায়, আইজি সাহেবের সাথে দেখা করবে। দেখা করার পর অনুষ্ঠান হয়েই বাসায় আসে ওরা। ওসি সাহেবও (মঈনুল হোসেন) তখন সঙ্গে ছিলেন। রাত পৌনে ১টার দিকে সবাই বাসায় ফিরল। কিছুক্ষণ পর ডিসি সাহেব (আনোয়ার হোসেন) আসেন এবং আইজি সাহেব দেখা করতে বলেছেন জানিয়ে বাবুলকে নিয়ে যান।”
ওয়াদুদ মিয়া বলেন, “আমার ছেলের সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। আগে ওসি সাহেব একবারেই ফোন ধরতেন, আমাদের নিরাপত্তার খোঁজ খবর নিতেন। এখন ফোনই ধরছেন না। ডিবি অফিসেও যোগাযোগ করেছি, কেউ কোনো সহযোগিতা করছে না; বলছে, উপরের অফিসাররা বলতে পারবে।”
এদিকে বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রাখা হয়েছে বলে শোনা গেলেও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না পুলিশের কোনো কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর ও আর নিজাম রোডের বাসার অদূরে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু খুন হন। মোটর সাইকেলে করে আসা তিন হামলাকারী মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
চট্টগ্রামের পুলিশ বলে আসছিল, গত দুই বছরে চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানে বাবুলের ভূমিকার কারণে জঙ্গিদেরই সন্দেহের তালিকায় প্রথমে রেখেছেন তারা; সেভাবেই মিতু হত্যার তদন্ত করছেন তারা।