সুর বদলেছে রেইনট্রি কর্তৃপক্ষের
প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৭, ১৯:৩৮
'ধর্ষণের কোন ঘটনার রেকর্ড তাদের কাছে নেই', গত ১৩ মে রেইনট্রি হোটেলের এক্সিকিউটিভ ইন্টারনাল অপারেশন অফিসার ফারজানা আক্তার রিমি গণমাধ্যমের কাছে এমন দাবি করলেও এবার সুর পাল্টেছে হোটেল কর্তৃপক্ষের। রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি করেছে দ্য রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ। আজ ১৬ মে (মঙ্গলবার) বেলা ১১টার দিকে হোটেলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি জানান হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ঝালকাঠির সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনের বড় ছেলে আদনান হারুন।
সংবাদ সম্মেলনে আদনান হারুন বলেন, ১৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কোনো মাদক খুঁজে পায়নি। ওই দিনই সন্ধ্যায় হোটেলের সিসিটিভি সিস্টেম জব্দ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই পরদিন সকালে কীভাবে হোটেলে মদ পাওয়া গেল সেটা আমাদেরও প্রশ্ন আপনাদের বিবেকের কাছে। রেইন ট্রি যখন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে তখনই ধর্ষণের মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। যা আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে জানতে পারি।
এ ঘটনায় জড়িত সাফাত-নাঈমসহ সকল অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তদন্তে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। ঘটনার দিন হোটেলের ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেট সস্ত্রীক হোটেলে অবস্থান করছিলেন। ২৮ মার্চ রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হোটেলে কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি। এমনকি ভিকটিমরা হোটেল কর্তৃপক্ষকে কোনো অভিযোগও করেননি। হোটেলের রুমগুলো সাউন্ড প্রুফ হওয়ার কারণে ভেতরের ঘটনা উপলব্ধির সুযোগও ছিল না।
তিনি আরও বলেন, ৩০ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ডিলিট হয়ে যায়। আসামী সাফাত একদিনই হোটেলে রাত্রি যাপন করেন। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই প্রয়োজনীয় তথ্য রেখে রুম ভাড়া দেওয়া হয়েছিল, সে সব তথ্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরবরাহ করা হয়েছে। হোটেলের নিয়ম অনুযায়ী সাফাতের জন্মদিনে কেক সরবরাহ করা হয়েছে, এর সাথে মাহির হারুনের সংশ্লিষ্টতা নেই।
হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ঝালকাঠির সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনের বড় ছেলে আদনান হারুন বলেন, গত ১৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর হোটেলে তল্লাশী করে কিছুই পায়নি। কিন্তু পরদিন ১৪ মে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান চালিয়ে ১০ বোতল মদ পেয়েছে বলে দাবি করা হয়। তারা হোটেলে কীভাবে মদ পেলো? এখন সেটা আমাদেরও প্রশ্ন, আপনাদের বিবেকের কাছে।
তিনি আরও বলেন, হোটেলের রুমগুলো সাউন্ড প্রুফ হওয়ায় কক্ষের ভেতর কোনও অপরাধ হলে হোটেল কর্মচারীদের পক্ষে বাইরে থেকে সেটা বুঝার কোনও সুযোগ ছিল না। সুতরাং হোটেলের ৭০০ ও ৭০১ নম্বর কক্ষে ভিকটিমদের সঙ্গে এ ধরনের অপরাধ ঘটেছে কি না সেটা আদালতে প্রমাণিত হবে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেটা তদন্ত করছে, যা প্রক্রিয়াধীন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মাহিন হারুন কেক নিয়ে গেছে বলে যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তাতে মাহিন হারুনের ব্যক্তিগত কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।
আদনান বলেন, এমনিতেই এ ঘটনার প্রেক্ষিতে হোটেলের ব্যবসা ধ্বংসের মুখে পতিত হতে চলেছে। কারণ গত এক সপ্তাহ ধরে হোটেলে কোনও অতিথি আসেননি। এমনকি আগামী দুই সপ্তাহের যারা হোটেল বুকিং দিয়েছিলেন তারা সবাই তা বাতিল করেছেন। আর হোটেলে অবস্থানরত অতিথিরা হোটেল ত্যাগ করেছেন। রেইন ট্রি হোটেল সাফাত-নাঈম চক্রের অপরাধের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তাধীন বিষয় সম্পর্কে কিছু বলতে চাচ্ছি না। এ ঘটনায় হোটেলের কেউ জড়িত কি না তা তদন্তে প্রমানিত হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিবে। আর এ ঘটনার বিচার আমরাও চাই।
এর পর হোটেল কর্তৃপক্ষ আর কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দেয় নি। আপনারা কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে চাইছেন না কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হোটেলের এমডি বলেন, আমরা আপনাদের একটি প্রেস রিলিজ দিয়েছি। সেখানে আমাদের বক্তব্য লেখা আছে।