রাজশাহীর জঙ্গি আস্তানায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬
প্রকাশ | ১১ মে ২০১৭, ১৫:২৬ | আপডেট: ১১ মে ২০১৭, ১৮:৫৬
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরের জঙ্গি আস্তানায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন জঙ্গি এবং একজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। নিহত পাঁচ জঙ্গির সবাই একই পরিবারের সদস্য।
বাড়িতে চার জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে প্রথমে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলেও পরে জানানো হয়, নিহত জঙ্গির সংখ্যা ৫। তারা হলো- বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন (৫০), তার স্ত্রী বেলী বেগম (৪৫), তাদের ছেলে সোয়াইদ (২৫), আল-আমিন (২০) ও মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭)।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জঙ্গি আস্তানা থেকে বেরিয়ে সাজ্জাদ হোসেনের বড় মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (২৭) আত্মসমর্পণ করেছেন। এর আগে বাড়ি থেকে সুমাইয়ার ৮ বছর বয়সের ছেলে জুবায়ের হোসেন ও তিন মাসের মেয়ে আফিয়া খাতুনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সকাল ১১টার পর সুমাইয়া ও তার সন্তানদের পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই গাড়িতে প্রায় ২৫ বছরের এক যুবককেও দেখা গেছে। তিনি সুমাইয়ার দেবর মিনারুল ইসলাম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মিনারুল স্থানীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম।
সুমাইয়ার শ্বশুর বাড়ি পদ্মার চরাঞ্চলে বলে জানা গেছে। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কয়েকমাস আগে তার স্বামী জহুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। জহুরুল এখন গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী।
এদিকে জঙ্গি আস্তানার আশপাশের এক কিলোমিটার এলাকায় বর্তমানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তারপরেও উৎসুক জনতা নিষেধাজ্ঞা থাকা এলাকায় ভীড় জমিয়েছেন। জঙ্গি আস্তানার পাশে এখনও থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ডিএমপির একটি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে আসছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, ডিবি পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে। অবস্থান করছেন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে মাঠের ভেতর ওই বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ। এরপর তাদের আত্মসমর্পণের জন্য মাইকে আহ্বান করে পুলিশ। কিন্তু জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করেনি। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে বাড়িটিতে পানি ছিটাতে শুরু করে।
এ সময় বাড়ি থেকে আচমকা জঙ্গিরা বের হয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারপর গ্রেনেড ছুঁড়ে। এরপর তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতি হয়।
এদিকে জঙ্গিদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী আহত হন। হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আবদুল মতিনকে (৪০)। মতিন গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ভাটা গ্রামের মৃত এহসান আলীর ছেলে। জঙ্গিদের ছোঁড়া বল্লমের আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
সকালে গোদাগাড়ী থানার ওসি হিপজুর আলম মুন্সি বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বাড়িতে পানি স্প্রে করলে জঙ্গিরা বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর তারা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তখন গুলি ছোঁড়ে। এ সময় জঙ্গিরা আত্মাহুতি দেয়।
জানা গেছে, নিহত জঙ্গি সাজ্জাদ আলীর বাড়ি ছিল পদ্মার চরাঞ্চলে। কয়েক বছর আগে পাশের গ্রাম মাছমারায় শ্বশুর বাড়ির পাশে এসে বাড়ি করে। সেখান থেকে চলে এসে প্রায় দুই মাস আগে হাবাসপুরে মাঠের ভেতর টিন দিয়ে একতলা এই বাড়িটি তৈরী করেন। সাজ্জাদ ফেরি করে গ্রামে গ্রামে কাপড় বিক্রি করতেন।