জঙ্গি আস্তানায় আসছে সোয়াট ও বোম বিশেষজ্ঞ দল

প্রকাশ | ১১ মে ২০১৭, ১৫:০৫ | আপডেট: ১১ মে ২০১৭, ২১:১৫

অনলাইন ডেস্ক

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরে জঙ্গিদের বাড়িটিতে অভিযান চালাতে আসছে সোয়াট ও বোম বিশেষজ্ঞ দল। ১১ মে (বৃহস্পতিবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা ঢাকা থেকে রওনা হয়েছেন। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর বাড়ির ভেতরে ঢুকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন তাদের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত নই, বাড়ির ভেতরে এখনও কোনো জঙ্গি জীবিত অবস্থায় আছে কী না। এ জন্য সোয়াট টিম ও ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। তারা এলে বাড়ির ভেতরে অভিযান চালানো হবে।’

ওসি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে এরই মধ্যে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা এসেছেন। আর বাড়ির আশপাশে কেটে নেওয়া ধানের জমিতে পড়ে আছে পাঁচ জঙ্গির লাশ। লাশগুলো উদ্ধার করতে গেলে বাড়ির ভেতর থেকে আবার জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে। এ জন্য লাশগুলোও উদ্ধার করা হয়নি। এখন বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার ভোররাতে গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের এই বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। এরপর মাইকে ভেতরের জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু জঙ্গিরা তাতে সাড়া দেয়নি। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাড়ির ভেতরে পানি ছেটাতে শুরু করেন।

এ সময় জঙ্গিরা বাড়ি থেকে বের হয়ে আচমকা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও তখন পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় একই পরিবারের পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। পুলিশ বলছে, নিজেদের কাছে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা আত্মহুতি দিয়েছে।

নিহতরা হলো- বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন (৫০), তার স্ত্রী বেলী বেগম (৪৫), তাদের ছেলে সোয়াইদ (২৫), আল-আমিন (২০) ও মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭)। জঙ্গিদের হামলায় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীও মারা গেছেন। তার নাম আবদুল মতিন (৪০)। তিনি গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ভাটা গ্রামের মৃত এহসান আলীর ছেলে।

সকালে জঙ্গিদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। তারা হলেন- এএসআই উৎপল কুমার ও কন্সটেবল তাইজুল ইসলাম। তারা বোমার আঘাতে আহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আবদুল মতিন জঙ্গিদের ছোঁড়া বল্লমের আঘাতে মারা যান বলে জানা গেছে।

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জঙ্গি আস্তানা থেকে বেরিয়ে সাজ্জাদ হোসেনের বড় মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (২৭) মাঠের ভেতরে বসে থাকেন। পুলিশের বার বার আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। এর আগে জঙ্গি আস্তানার পাশ থেকে সুমাইয়ার ৮ বছর বয়সের ছেলে জুবায়ের হোসেন ও তিন মাসের মেয়ে আফিয়া খাতুনকে উদ্ধার করে পুলিশ।

সকাল ১১টার পর সুমাইয়া ও তার সন্তানদের পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই গাড়িতে প্রায় ২৫ বছরের এক যুবককেও দেখা গেছে। তিনি সুমাইয়ার দেবর মিনারুল ইসলাম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মিনারুল স্থানীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম।

সুমাইয়ার শ্বশুর বাড়ি পদ্মার চরাঞ্চলে বলে জানা গেছে। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কয়েকমাস আগে তার স্বামী জহুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। জহুরুল এখন গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী।

এদিকে জঙ্গি আস্তানার আশপাশের এলাকায় সকাল থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তারপরেও উৎসুক জনতা নিষেধাজ্ঞা থাকা এলাকায় ভীড় জমিয়েছেন। জঙ্গি আস্তানার পাশে মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, ডিবি পুলিশ, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও র‌্যাব সদস্যদের কাজ করতে দেখা গেছে। অবস্থান করছেন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত জঙ্গি সাজ্জাদ আলীর বাড়ি ছিল পদ্মার চরাঞ্চলে। কয়েক বছর আগে পাশের গ্রাম মাছমারায় শ্বশুর বাড়ির পাশে এসে বাড়ি করে। সেখান থেকে চলে এসে প্রায় দুই মাস আগে হাবাসপুরে মাঠের ভেতর টিন দিয়ে একতলা এই বাড়িটি তৈরী করেন। সাজ্জাদ ফেরি করে গ্রামে গ্রামে কাপড় বিক্রি করতেন। পরিবারটি জামায়াতপন্থী ছিল বলে জানা গেছে।