বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণ
সাদমান রেগনাম গ্রুপের পরিচালক নাঈম ইভেন্ট ম্যানেজার
প্রকাশ | ০৯ মে ২০১৭, ১৩:০৮
রাজধানীর বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনের তিনজনই প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। অভিযুক্তদের মধ্যে সাদমান সাকিফ রেগনাম গ্রুপের ডিরেক্টর। তার বন্ধু সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে। নাঈম আশরাফ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতার ছেলে। এরা সব সময় তাদের বাবার নাম এবং পরিচয়ের অপব্যবহার করত। এমনকি হোটেলে রুম বুকিংয়ের সময় প্রভাবশালী বাবার নাম বলে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া ভিজিটিং কার্ড আর ফোন নম্বর দিয়ে রুম বুকিং করেছিল। অভিযুক্তদের বাকি দুইজন সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী ও গাড়িচালক।
নাঈমের পূর্নাঙ্গ পরিচয় ও বাবার নাম এখনও জানতে পারেনি ভিক্টিম কিংবা পুলিশের কেউ। শুধু তার বাড়ি মিরপুর এতটুকুই জানা গেছে। দুই তরুণী বলেন, ধর্ষণের দিন সবচেয়ে বেশি নোংরামি করেছিল নাঈম।
মামলার ৩ নম্বর আসামি সাদমান রেগনাম গ্রুপের অন্যতম একজন পরিচালক (ডিরেক্টর)। তার বাবা মো. হোসাইন জনি রেগনাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। জনি একসময় জাতীয় পার্টির ছাত্রসমাজ করতেন, পরে যুবদলের রাজনীতিও করেছেন। তবে বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক রয়েছে। রেগনাম গ্রুপের ওয়েবসাইটে ডিরেক্টর হিসেবে সাদমানের বাণী দেওয়া আছে।
বন্ধুদের কাছে পিকাসো রেস্টুরেন্টের মালিকের ছেলে বলেই দাবি করত সাদমান। এ বিষয়ে পিকাসোর ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ম্যানেজার মো. সুমন বলেন, পত্রিকায় সাদমানকে পিকাসো রেস্টুরেন্টের মালিক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে বলে দাবি করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সাকিফ রেগনাম গ্রুপের মালিকের ছেলে। গুলশানের তেজগাঁও লিংক রোডে রহমান রেগনাম সেন্টারের লেভেল ১২-১৩ ও রুফটপ ভাড়া নিয়ে পিকাসো রেস্টুরেন্ট তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
ধর্ষণের শিকার তরুণীরা জানান, সেদিন রাতে নাঈম আশরাফের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে জঘন্য।
নাঈম ওই দুই তরুণীর কাছে নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের এক বড় নেতার ছেলে বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে ই-মেকারস বাংলাদেশ নামক একটি ইভেন্ট সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মালিক। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে নাঈমের সঙ্গে কাজ করে এমন কয়েকজন জানান, ক্ষমতাসীন দলের এক মন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে নাঈমের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এই সুযোগে নাঈম নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতার ছেলে বলে দাবি করে।
দ্য রেইনট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে নাঈম ওই পরিচয়ই ব্যবহার করে। সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও এমপিদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে এসে গায়িকা ও অভিনেত্রীদের কয়েকটি কনসার্টের আয়োজনের সঙ্গে জড়িত ছিল নাঈম। তার সঙ্গে বিভিন্ন সময় মিডিয়ার মেয়েদের অনৈতিক সম্পর্ক থাকার গুঞ্জনও শুনেছেন তার সহকর্মীরা।
বার্থডে বয় আসামি সাফাত আহমেদ (২৬) বাবা দিলদার আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিক। তার স্ত্রী বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা ছিলেন। নানা মনোমালিন্যের কারণে তাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
এ দিকে সাফাতকে ফাঁসানো হচ্ছে দাবি করে তার বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাফাতের প্রথম স্ত্রী এমন কাজ করাচ্ছেন। দুই বছর আগে বিয়ের পর সেই মেয়ের নানা ধরনের অসৎ উদ্দেশ্য দেখে সাফাত তাকে তালাক দেয়। সেই মেয়েটি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য এই ষড়যন্ত্র করছে।
আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান, বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এবিষয়ে ডিএমপি গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, অভিযুক্তরা যাতে বিদেশে পালাতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দরে একটি সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ৭ মে (সোমবার) বনানী থানা থেকে এই নির্দেশনা গুলশান বিভাগের উপকমিশনার বরাবর পাঠানো হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে ইমিগ্রেশনে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়।
অন্যদিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ছায়া তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। একটা ক্রাইম ঘটেছে, মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে ক্রাইম টিমের পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আমরাও কাজ শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তারা যতই প্রভাবশালী হোক তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এর চেয়ে প্রভাবশালীদের আমরা এর আগে গ্রেপ্তার করেছি। আসামিরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের অবস্থান জানানো যাচ্ছে না। তবে ডিবি পুলিশ তাদের মতো করে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাতের জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনার ৪০ দিন পর ৬ মে (শনিবার) সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন দুই তরুণী। এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি হচ্ছেন সাদমান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী (নাম উল্লেখ করা হয়নি)।