বাসায়ই আছে প্রধান আসামি সাফাত
প্রকাশ | ০৮ মে ২০১৭, ২৩:১৩
বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক এর পুত্র সাফাত আহমেদ বাসাতেই আছেন। তবে তার সঙ্গে পুলিশ এখনো কোনো কথা বলেনি, এমনটাই জানিয়েছেন সাফাতের বাবা দিলদার আহমেদ।
দিলদার আহমেদ মুঠোফোনে এক গণমাধ্যমকে বলেন, "পুলিশ আমাদের বাসায় এসেছিল। কথাবার্তা বলেছে। তারা তদন্ত করে দেখছে"।
ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ার পরও ছেলেকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "পুলিশ তদন্ত করছে। প্রমাণ না পেলে কীভাবে ধরবে?"
দিলদার আহমেদ জানান, "২৪ বছর বয়সী সাফাত আহমেদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় স্নাতক পাস করে পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করে আসছেন। তার ছেলে মা-বাবাকে না জানিয়ে বছর দু-এক আগে বিয়ে করেন। দুই মাস আগে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। জন্মদিনের পার্টিতে তার ছেলের সাবেক স্ত্রী ওই দুজন মেয়েকে পাঠিয়েছিল বলে সন্দেহ করছেন তিনি"।
এর আগে ৬ মে (শনিবার) বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে একই ধরনের বক্তব্য দেন এবং মামলা নিতে গড়িমসি করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম এবং ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীদের সুবিচার না পাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এরপরও মামলাটি বনানী-থানা পুলিশই তদন্ত করছে।
আজ ৮ মে (সোমবার) দুপুরের দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা শেখ নাজমুল আলম বলেন, তারা ছায়া তদন্ত করছেন। আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, মামলা সূত্রে জানা যায় নির্যাতিতদের পুরোনো এক বন্ধু প্রধান আসামির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পরিচয়ের সপ্তাহ দু-এক পর গত ২৮ মার্চ তাদের দুজনকে ওই আসামি তার জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত করেন। অনেক অনুরোধের পর তারা ওই পার্টিতে যান। পার্টি ছিল বনানীর একটি চার তারকা হোটেল ও রেস্তোরাঁয়। ওই পার্টিতে ওই দুই শিক্ষার্থীর পুরোনো বন্ধুও ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তাদের ফেলে ওই বন্ধু চলে যান। আসামিরা তখন তাদের হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে ফেলেন। সে সময় আসামিদের সঙ্গে দেহরক্ষী ও গাড়িচালক ছিলেন। প্রধান আসামি ও তার এক বন্ধু ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থী দাবি করেন, তাদের ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন আসামির গাড়িচালক।
ঐ শিক্ষার্থী জানান, লোকলজ্জার ভয়ে তারা বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। ধর্ষণের পর আসামি তাকে (বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী) প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান আসামির দেহরক্ষী তাকে অনুসরণ করছিলেন। তাঁদের বাসায় গিয়েও নানান কিছু জিজ্ঞাসা করছিলেন। আসামি ভিডিও আপলোড করারও হুমকি দিচ্ছিলেন। সে কারণে তারা থানায় যান।
এজাহার থেকে জানা যায়, মামলার প্রধান আসামি সাফাত। ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও অজ্ঞাতনামা দেহরক্ষী।
এদিকে ৭ মে, রবিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই দুই ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ওই দিন হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ জানিয়েছিলেন, পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দুই ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে ১৫-২০ দিন সময় লাগবে।