'কালোটাকা বাজেয়াপ্ত করে হাওরের মানুষকে দিন'
প্রকাশ | ০৬ মে ২০১৭, ১২:৫৫
হাওর এলাকায় আগাম বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে ফসল ডুবে গিয়ে যে দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে মানুষকে বাঁচাতে সেখানে কৃষকদের ঋণ মওকুফ করার আবেদন জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবৃন্দ। ৫ মে (শুক্রবার) বিকেলে শাহবাগে ‘হাওরের পাশে বাংলাদেশ’ ব্যানারে এক গণসমাবেশে থেকে এ দাবি জানান বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতারা।
অসময়ের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে কৃষকদের ফসলহানি হওয়ায় হাওর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার জন্য আগামী ফসল না আসা পর্যন্ত সরকারি সহায়তা অব্যাহত রাখার দাবি উঠেছে রাজধানীর একটি সমাবেশ থেকে।
সমাবেশের বক্তব্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, "এবার অকাল বন্যায় হাওরে ২৬ থেকে ২৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মাত্র তিন লাখের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে দাবি করে এর সমালোচনা করেন। আমাদের পরিষ্কার দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত লোক ২৭ লাখ হোক আর ৩০ লাখ হোক, হাওরের প্রত্যেকটা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত তাদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করতে হবে"।
বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি এখন যে সরকারি ঋণ আছে সেগুলো সম্পূর্ণরূপে মওকুফের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “বিনাসুদে ঋণ দিতে হবে এবং এখন যেসব ঋণ তারা নিয়েছে তার ঋণ এবং সুদ সম্পূর্ণরূপে মওকুফ করে দিতে হবে, আংশিক মওকুফ আমরা মেনে নিতে রাজি না। প্রশ্ন আসতে পারে, টাকা কোথায় পাব? অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, আমাদের এখানে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত আয় জিডিপির প্রায় ৮০ শতাংশ। যদি তাই হয়, তাহলে সমস্ত কালোটাকা বাজেয়াপ্ত করেন। এর একভাগও হাওরের মানুষের জন্য বরাদ্দ করা হলেও আগামী মওসুম পর্যন্ত তাদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।”
বাংলাদেশ ব্যাংক আংশিক ঋণ মওকুফের যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটাকে সাধুবাদ জানিয়ে বেসরকারি যেসব সংস্থা হাওর এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালায় তাদেরকে ঋণ উত্তোলন আগামী এক বছরের জন্য স্থগিত করার আহ্বান জানান সেলিম।
বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, "সিপিবি ও আমরা সুনামগঞ্জে গিয়ে দেখেছি সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কতো ক্ষোভ। প্রধানমন্ত্রী আগে প্রতিশ্রুতি দিলেও সেখানে কোন খাল বা নদী ড্রেজিং এর ব্যবস্থা করা হয়নি"।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “সাময়িক ও স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা হিসাবে হাওরাঞ্চলের মানুষের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত করা হোক। তবে মানুষের জন্য ত্রাণ নয়, আমরা পরিত্রাণ চাই। পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেই ব্যবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রাম করতে হবে। মানুষের অধিকার আদায়ের পথ প্রশস্ত হয়, এমন শাসন কায়েম করতে হবে। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।”
তিনি বলেন, “আজকে হাওর সমস্ত বাংলাদেশের মুখচ্ছবি। হাওরের দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারব, এখানকার মানুষ, শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ কেমন আছে। আজকে রানা প্লাজার ধসের কথা মনে করলে দেখতে পাব, কৃষকের সন্তান যারা শ্রমিক হয়েছে, তাদের কী অবস্থা। যে উন্নয়নের কথা আমরা শুনছি, সেই উন্নয়ন হচ্ছে গুটিকয়েক মানুষের উন্নয়ন। সেই উন্নয়নের নিচে চাপা পড়ে আছে শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষ।”
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, “হাওর এলাকার মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদে কী করা যায়, সেটা নিয়ে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে। তাদের অধিকার বুঝে নিতে হবে কড়ায়-গণ্ডায়।”
সমাবেশে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, “আমরা দেখেছি, ২০ দিন ধরে শনির হাওরের এলাকার মানুষ বাঁধ টেকানোর জন্য সংগ্রাম করেছে, বাঁধ পাহারা দিয়েছে। কিন্তু তারা সেটা রক্ষা করতে পারেনি। এই সময়ে সরকার কেন সেখানে যায়নি? আমাদের সেনাবাহিনীর দুর্যোগের সময় দক্ষতার কথা বলা হয়, তারা কেন ওই মানুষদের পাশে দাঁড়ায়নি?"
এর আগে সমাবেশের শুরুতে সমগীত, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রভৃতি সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। নাটক প্রদর্শন করে প্রাচ্যনাট। শেষে ছিল উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পরিবেশনা। সমাবেশস্থলে বড় বড় ক্যানভাসে আঁকা হয় হাওর এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবন-চিত্র।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে , তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি উপস্থিত ছিলেন।