যৌতুকের দাবিতে শিকলে বেঁধে গৃহবধূ নির্যাতন
প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৩৬
১ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের শরিফাবাদ গ্রামের গৃহবধু দুই সন্তানে জননী তাসলিমা বেগমকে (৩০)কে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক ও শারীরিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাষান্ড স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনে নির্যাতনের শিকার হয়ে গৃহবধু তাসলিমা বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নির্যাতিতার মা উজিরপুর উপজেলার জুগিহাটি গ্রামের জাহানারা বেগম বাদি হয়ে স্বামী বাদল মৃধা, দেবর লালমিয়া মৃধাকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
নির্যাতিতার মা জাহানারা বেগম জানায়, গত ১৬ বছর পূর্বে গৌরনদী উপজেলার শরিফাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুর ওহাব মৃধার মেঝ ছেলে বাদল মৃধার সাথে উজিরপুর উপজেলার জুগিহাটি গ্রামের আঃ আজিজ হাওলাদারের কন্যা তাসলিমা বেগমের সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়।
বিয়ের সময় মেয়ে জামাতা বাদল মৃধাকে যৌতুক হিসেবে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার দেয়া হয়। এরপর বাদলকে গত ২ বছর পূবে নসিমন খরিদের জন্য নগদ ২ লাখ টাকা যৌতুক দেয়া হয়।
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধু তাসলিমা বেগম অভিযোগ করেন, গত ১ মাস ধরে তার স্বামী ও দেবর আরো এক লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য তাকে বিভিন্ন সময় চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় প্রায়ই ম্বামী ও দেবর তাসলিমাকে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করতো।
ঢাকায় চিকিৎসা শেষে গত ২৫ এপ্রিল সে (তাসলিমা) স্বামীর বাড়িতে আসেন। এ সময় দাবিকৃত যৌতুকের এক লাখ টাকা না পেয়ে নেশাগ্রস্ত স্বামী বাদল মৃধা ওইদিন গভীর রাতে কাপড় খুলে তাকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে খাটের সাথে দু’টি তালা দেয়। এরপর বাদলের পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী লাঠি ও লোহার রড দিয়ে সমস্ত শরীরে চলে নির্যাতনের পর নির্যাতন। তাতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি বাদল।
ঘরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে তাতে স্ট্রীলের খুন্তি ও বড় চামচ গরম করে তাসলিমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেয়া হয়। বুক থেকে শুরু করে পিছনের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে রড ও লাঠির আঘাত এবং ছ্যাকা দেয়া হয়নি। এ সময় বাঁচার জন্য তসলিমা দুই ঘন্টা ডাকচিৎকার করে। কিন্তু কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি।
গুড়া মরিচ ও লবণ পানিতে গুলে তা বুকের ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দেয়। এভাবে গত ২৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাতে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন তাসলিমা।
তাসলিমার বোন ময়না বেগম জানান, তাসলিমা বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পায় ঢাকায় অবস্থানরত তাসলিমার ছেলে। সে তার মাকে না পেয়ে ওইদিন ভোররাতে পিতা বাদলের মোবাইলে ১২টি কল দেয়ার পর তিনি রিসিভ করেন। এ সময় তাসলিমা ডাকচিৎকার করে বাঁচানোর আকুতি জানালে তাসলিমার ছেলে তা শুনতে পায়। সে বিষয়টি তার নানাকে অবহিত করেন।
তারা ২৬ এপ্রিল (বুধবার) খুব ভোরে গিয়ে তাসলিমাকে শিকলে বাধা গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় বাদল তার শ্বশুর আজিজ হাওলাদারকে মারার জন্য হুমকি দেয়। আজিজ মেয়েকে উদ্ধারে তালার চাবি চাইলে তা দেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত কুড়াল ও দা দিয়ে একটি তালা ভেঙ্গে তাসলিমাকে শিকল বাধা অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আনার পর অপর তালাটি নগরী থেকে চাবি কাটানোর লোক নিয়ে তা খোলা হয়।
বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাসলিমার শরীরের আগুনের ছ্যাকার চেয়েও নির্যাতন করা হয়েছে বেশী।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ কবির জানান, এ ঘটনায় নির্যাতিতার মা বাদি হয়ে ২৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বিকালে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।