শরিফুলের দ্রুত গ্রেপ্তার চান অধ্যাপক রেজাউলের স্ত্রী
প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:৪৮
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো ২৩ এপ্রিল (রবিবার)। কিন্তু এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জঙ্গি শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন অধ্যাপক রেজাউলের স্ত্রী হোসনে আরা।
তিনি বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। শরিফুল ইসলামের বাড়িও একই উপজেলায়। শরিফুল যে বিভাগে পড়াশোনা করত, অধ্যাপক রেজাউল ছিলেন ওই বিভাগের শিক্ষক। এ জন্য রেজাউল করিমের সঙ্গে শরিফুলের সম্পর্কও ভালো ছিল। এই শরিফুলই অধ্যাপক রেজাউলকে খুনের মূল পরিকল্পনাকারী। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও জানে। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারাটা হতাশাজনক।
তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অধ্যাপক রেজাউল ছিলেন শরিফুলের ‘স্থানীয় অভিভাবক’। তবে শরিফুল কখনো তাদের বাসায় যায়নি। এই শরিফুলই জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পর সংস্কৃতিমনা শিক্ষক রেজাউলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার পরিকল্পনা মতেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। মামলার অভিযোগপত্রেও এ কথা লেখা আছে। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
‘নব্য জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদ অধ্যাপক রেজাউল হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক। পুলিশ বলছে, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাকে আইনের আওতায় আনতে সব ধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাকে ধরতে দুই লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। এরপরও তার সন্ধান মেলেনি।
সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার রাজশাহীর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অধ্যাপক রেজাউল হত্যার পরদিনই শরিফুল ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে জঙ্গি আবু সুলেমানকে খুঁজছে, সে সুলেমানই রাবি শিক্ষক হত্যার আসামি শরিফুল। এই সুলেমান (শরিফুল) ভারতের বর্ধমান রেলস্টেশন থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আইএস জঙ্গি মসিউদ্দীন ওরফে মুসার ‘গুরু’।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় গিয়ে ওই মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ছবি দেখিয়ে নিশ্চিত হয়, সুলেমানই রাবি শিক্ষক হত্যার আসামি শরিফুল। তার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। বাবার নাম আবদুল হাকিম।
জানতে চাইলে আরএমপির মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক আইএস জঙ্গি মসিউদ্দীন ওরফে মুসার সঙ্গে বাংলাদেশের এই শরিফুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। ভারত বলছে, মুসাকে পরিচালিত করছেন বাংলাদেশের জঙ্গি শরিফুল ইসলাম। শরিফুলের ব্যাপারে ভারত সরকারও তথ্য চেয়েছে। কিন্তু শরিফুল বাংলাদেশে আছে কী না, তা নিয়েই আমাদের সন্দেহ আছে। আমরা ধারণা করছি, শরিফুল ভারতেই অবস্থান করছে।’
গত বছরের ২৩ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকায় বাসার কাছে অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ বাদি হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে আট জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকতা মহানগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শব রেজাউস সাদিক।
এর দুই দিন পর মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। এরপর মামলার আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। অভিযোগপত্র দাখিলের পরও অভিযোগ গঠন হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ এখনো শুরু হয়নি। আবার মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করতে পরিবার ও বিভাগের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও তাও হয়নি। বিচার প্রক্রিয়ার এই বিলম্বে হতাশ রেজাউলের পরিবার।
ড. রেজাউলের ছেলে ও মামলার বাদি রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ বলেন, ‘মনে হচ্ছে- প্রথমে যে গতিতে মামলাটা চলছিল, এখন সে গতি নেই। আমরা শুধু বিচার চাই। বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই আসামিদের শাস্তি দেখতে চায়। তাই দাবি করবো, বিচার প্রক্রিয়াটা যেন দ্রুত শেষ করা হয়।’
অধ্যাপক রেজাউল হত্যাকাণ্ডের পর বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন উত্তাল থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্তিতে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হয়। এ দিন সকাল ৯টায় বিভাগের উদ্যোগে র্যালি ও সমাবেশ করা হয়। পরে সকাল ১০টায় একই দাবিতে সিনেট ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে রাবি শিক্ষক সমিতি। সেখানেও তারা বিচার প্রক্রিয়ার বিলম্বে হতাশা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে মহানগর ডিবি পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সোস্যাল মিডিয়া রাইটার, মুক্তমনা, প্রগতিশীল ব্যক্তিদের টার্গেট কিলিংয়ের অংশ হিসেবে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ বিষয়টি মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।
মামলায় অভিযুক্ত আটজনের মধ্যে মাসকাওয়াত হাসান সাকিব ওরফে আবদুল্লাহ, আব্দুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ কারাগারে আছেন। মূলহোতা শরিফুল পলাতক। আর অপর তিন জঙ্গি খাইরুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান ও ওসমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত।