হাওরে মহাদুর্যোগ: সুনামগঞ্জে দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিবের প্রত্যাহার চেয়ে মানববন্ধন
প্রকাশ | ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৩৪
সুনামগঞ্জবাসীর দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালের মানহানীকর এবং কষ্টদায়ক বক্তব্যের প্রতিবাদে ও মন্ত্রণালয় থেকে তাকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবিতে ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
২১ এপ্রিল (শুক্রবার) দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত স্কয়াওে (ট্রাফিক পয়েন্ট) অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, শিক্ষক, কৃষক, ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন,‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব সুনামগঞ্জের ২৫ লাখ মানুষের দাবি নিয়ে উপহাস করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকদের দাবির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ না করে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছেন। তিনি সুনামগঞ্জের অর্ধেক মানুষ মরলে দুর্গতা ঘোষণা হবে মন্তব্য করেছেন। তিনি সরকারকে সুনামগঞ্জের কৃষকদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন।’
বক্তারা দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিবকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃর্শত ক্ষমা প্রার্থণার দাবি জানান। তাকে ঐ মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এর ২২ ধারার কোন উপধারায় দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে অর্ধেকের বেশি মানুষ মারা যাওয়ার কোন শর্তের কথা উল্লেখ নাই। তবুও সচিব দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হলে সুনামগঞ্জের অর্ধেক মানুষ মরতে হবে বলে অপমানজনক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেন।’
‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব বিন্দু তালুকদারের সঞ্চালনায় প্রতিবাদী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্মআহবায়ক বিজন সেন রায়, মুক্তিযোদ্ধা মালেক হোসেন পীর, লেখক মোর্শেদ আলম, সমাজসেবক ইয়াকুব বখত বহলুল, অ্যাড. মাসুক আলম, অ্যাড. রুহুল তুহিন, অ্যাড. শেরেনুর আলী, অ্যাড. এনাম আহমদ, ‘সুজন’ এর নির্বাহী পরিচালক নির্মল ভট্টাচার্য, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, কৃষক নেতা রুহুল আমিন, কৃষক আব্দুল কাইয়ুম, সাংবাদিক এমরানুল হক চৌধুরী, উন্নয়ন সংগঠক সালেহীন চৌধুরী শুভ, একে কুদরত পাশা, সংস্কৃতিকর্মী রাজু আহমদ, সামির পল্লব, প্রদীপ পাল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৯ এপ্রিল (বুধবার) রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সচিব শাহ কামাল সঞ্চালনার দায়িত্ব পালনের সময় সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনকারীদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে মন্তব্য করে বলেন, ‘সুনামগঞ্জকে যারা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাদের কোন জ্ঞানই নেই।’
তিনি বলেন,‘সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নামে একটা আইন আছে। এই আইনের ২২ ধারায় বলা হয়েছে কোন এলাকার অর্ধেকের উপরে জনসংখ্যা মরে যাওয়ার পর ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হয়। না জেনে যারা এমন সস্তা দাবি জানায় তাদের কোনপ্রকার জ্ঞানই নেই।’
সভায় অবজ্ঞার সুরে সচিব শাহ কামাল আরো বলেন, ‘কিসের দুর্গত এলাকা। সুনামগঞ্জে একটি ছাগলও তো মারা যায়নি। তাহলে কেন সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে?’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিবের এমন মনগড়া তথ্য শুনার পর উপস্থিত জনপ্রতিনিধি, সুধীজন, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের লোকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফসলহার কৃষকের পক্ষে আন্দোলনকারীদের নিয়ে সচিবের এমন কটূক্তির প্রতিবাদে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা সভা থেকে বেরিয়ে আসেন। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন সুনামগঞ্জের মানুষ এবং জেলাজুড়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বোরো মৌসুমে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে একের পর এক হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর জেলার লাখ লাখ বোরো চাষী সর্বশান্ত হয়ে গেলে জেলাজুড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, কৃষক সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি ওঠে।
গত ৫ এপ্রিল শহরের আলফাত স্কয়ারে জনসভা করে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। একই দিন দুপুরে শহরের শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানান সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুল।
দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করছে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন। সুনামগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী।
জেলা আইনজীবী সমিতি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।