ধর্ষিত সেই কলেজছাত্রীর জিডি নেয়নি পুলিশ
প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৫৬ | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৫৯
মা ডেকে ধর্ষণ করা সেই আসামী বাদীপক্ষের আইনজীবীর 'অসহযোগিতা'র ফলে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করতে যান খুলনার সেই কলেজছাত্রী। কিন্তু তা না করে তাদের পুলিশ ফিরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কলেজছাত্রীর বড়বোন।
তিনি বলেন, “আতঙ্কিত হয়ে বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা চেয়ে খুলনা সদর থানায় জিডি করতে গেলে তা গ্রহণ না করে আমাদের ফিরিয়ে দেন সদর জোনের সহকারী কমিশনার এস এম মোহাইমেনুর রশীদ। আসামির জামিন ও জিডি গ্রহণ না করায় বাবা নানা আশঙ্কায় অসুস্থ্ হয়ে পড়েছেন।”
তবে এ বিষয়ে এস এম মোহাইমেনুর রশীদ বলেন, “বিষয়টি সঠিক নয়। আসামির জামিনের শর্ত থাকে বাদী বা তাদের কাউকে হুমকি দিলে জামিন বাতিল হয়ে যাবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে জিডি করার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে তা নেওয়া হয়নি। কলেজছাত্রী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য একজন দারোগার মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেকোন সমস্যায় পড়লে পুলিশ তাদের সহায়তা করবে”।
এর আগে গত ১৫ মার্চ নগরীর আহছানউল্লাহ কলেজের ওই ছাত্রীর করা মামলায় ধর্ষণের অভিযোগে এনামুল হক টিটোকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার খুলনা মহানগর দায়রা জজ অরূপ কুমার গোস্বামীর আদালত তাকে জামিন দেন।
এজাহারের বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক রাধেশ্যাম সরকার জানান, ওই ছাত্রী গত ১৬ জানুয়ারি কলেজ থেকে ইজিবাইকে চড়ে দারোগাপাড়ার বাসায় যাচ্ছিলেন। এসময় ওই ইজিবাইকের যাত্রী এনামুল হক টিটোর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। প্রথম পরিচয়েই এনামুল তাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন। তিনি মেয়েটিকে বলেন, কিছুদিন আগে তার মা মারা গেছেন। এনামুল বয়স্ক মানুষ হওয়ায় বিষয়টি মেনে নেন ওই কলেজ ছাত্রী। এরপর কলেজে যাওয়া-আসার পথে দেখা হলেই খাতির করতেন এনামুল। এরপর গত ১৯ জানুয়ারি মেয়েটিকে তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়ে সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
ঐ কলেজছাত্রী বলেন, প্রথমে লজ্জায় কাউকে না জানালেও পরে পরিবারকে বিষয়টি জানান। কিন্তু কী করতে হবে বুঝতে না পেরে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে যান। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বিদ্রূপ করে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর সদর থানায় গেলে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে এনামুলের নাম-ঠিকানা জোগাড় করে ঘটনার প্রায় দুই মাস পর ১৫ মার্চ সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, “অনেক দেরি করে ডাক্তারি পরীক্ষা হওয়ায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। তবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আসামি অর্থশালী ও প্রভাবশালী হওয়ায় নানারকম প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কালক্ষেপণ করে পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনার চেষ্টা করেন। এ কূটকৌশলে ধর্ষিতা ও তার পরিবার মামলা করতে বিলম্ব করে ফেলে”।
গত ১৩ এপ্রিল ডাক্তারি পরীক্ষার সনদসহ আসামিকে অভিযুক্ত করে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম এম এল বি মেছবাহ উদ্দিন আহমেদের আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার আসামি এনামুল জামিন পেলেও এর আগে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিন চাইলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।