সরকারি স্বীকৃতির অপেক্ষায় শহীদের স্বজনরা
গোলাপগঞ্জের রফিপুর পালপাড়া গণহত্যা দিবস আজ
প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০১৭, ০১:৪৩
আজ ২২ এপ্রিল। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের রফিপুর পালপাড়া গণহত্যা দিবস। ওইদিন এ গ্রামের সংখ্যালঘু পাল সম্প্রদায়ের ৭ জন পুরুষ মানুষকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নৃশংসভাবে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। একই সাথে বেশ কয়েকজন তরুণী ও যুবতী গৃহবধুকে ক্যাম্পে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায়। তাই আজকের এ দিনটি পালপাড়াবাসির জন্য অত্যন্ত দুঃখ ও শোকের দিন।
এ উপলক্ষে সরকারি বা স্থানীয় উপজেলা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। তবে এলাকাবাসী এবং শহীদদের স্বজনরা নিজেদের উদ্যোগে ছোটখাটো কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করবেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ওইদিন পাক-হানাদার বাহিনী স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় রফিপুর পালপাড়ায় গণহত্যা চালায়। গ্রামের বিপিন চন্দ্র পাল (৫৫), অঙ্গদ পাল (৬০), অমর চন্দ্র পাল (৩৫)-কে গ্রামের অভ্যন্তরেই প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। আর সুরেশ চন্দ্র পাল (৬৫), দুর্যোধন পাল (৬২), মতিলাল পাল (৩৮) এবং নরোত্তম পাল (৩৫)-কে ধরে নিয়ে যায় এবং ওইদিন বিকেলে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের চারমাইল নামক স্থানে ইঞ্জিনিয়ারের গেইট সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। একই সাথে গ্রামের বেশ কয়েকজন তরুণী ও যুবতী গৃহবধূকে পাকসেনারা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদেরকে নির্যাতন ও মারপিট করে সন্ধ্যার দিকে ছেড়ে দেয়। এরমধ্যে শহীদ দুর্যোধন পালের স্ত্রী সুনীতি পাল এবং শহীদ অঙ্গদ চন্দ্র পালের স্ত্রী হেমলতা পাল এখনও জীবিত আছেন। ছেলে-সন্তানদের নিয়ে তারা স্বামীর ভিটা আগলে আছেন। অনেকেই বয়সের ভারে ন্যূব্জ। কথা-বার্তার মধ্যে জড়তা এসে গেছে। তারপরও দীর্ঘ প্রায় ৪৬ বছর যাবত স্বামী হত্যার ব্যথা বুকে নিয়ে দিনযাপন করছেন।
এই গণহত্যার নির্মম ঘটনাটি স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৬ বছরেও জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়নি কোন গণমাধ্যমে। অথচ স্থানীয়ভাবে তা প্রায় সকলেরই জানা ছিল। কিন্তু ঘটনাটিকে জনসমক্ষে নিয়ে আসতে কেউই সচেষ্ট ছিলেন না। গতবছর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা কমান্ডের তথ্য ও গবেষণা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিন্সিপাল সুবল চন্দ্র পালের সহযোগিতায় এই পৈশাচিক গণহত্যার ঘটনা জনসমক্ষে আসে। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে গণহত্যার আদ্যোপান্ত প্রকাশ পায়। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে এইসব শহীদ পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করা হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি সরকারি স্বীকৃতি বা কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনটি পালনের লক্ষ্যে উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি।
তবে শহীদ বিপিন চন্দ্র পালের ছেলে বিভাষ চন্দ্র পাল নিপুল জানিয়েছেন, "মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার আমাদের প্রত্যেকটি শহীদ পরিবারের জন্য ২ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছিল। এরমধ্যে কেটেকুটে আমরা মাত্র ১৮৫০/- টাকা করে পেয়েছিলাম। এরপরে আজ পর্যন্ত আমরা আর কোন অনুদান বা সহযোগিতা পাইনি। অথবা কেউ আমাদের কোন খোঁজ-খবরও নেয়নি"।