রমেল চাকমার মৃত্যুতে ফেসবুকে ক্ষোভ
প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০১৭, ০১:০২
গত ১৯ এপ্রিল, বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন রাঙামাটির নান্যাচর কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমা। সেনাবাহিনীর নজরদারি ও পুলিশের পাহারায় গত দু’সপ্তাহ ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে তার লাশ এখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। সেনাবাহিনীর নির্যাতনেই রমেল চাকমার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার পরিবার, স্বজন ও বন্ধুরা।
গত ৬ এপ্রিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রাঙামাটি জেলা অফিসে গিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাবর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন রমেল চাকমার বাবা কান্তি চাকমা।
আবেদনপত্রে তিনি বলেন, “আমার পুত্র রমেল চাকমা চলতি শিক্ষা বর্ষের এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তার পরীক্ষার রোল নং-৩২৬১৭৯। সে নানিয়াচর কলেজ থেকে এবারে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। ০৫/০৪/২০১৭ খ্রিঃ বুধবার নানিয়াচর বাজারে হাটবার ছিল। ঐ দিন পরীক্ষা না থাকায় সে বাজারে বাজার করতে গিয়েছিল। তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে যে, সে নানিয়াচর উপজেলা কার্যালয়ের দিকে যাবার পথে পার্শ্বোক্ত সেনা ক্যাম্পের [নানিয়াচর জোন, ৭ ই. বেঙ্গল রেজিমেন্ট, রাঙামাটি) সদস্যগণ আনুমানিক সকাল ১০ ঘটিকায় তাকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে কোন প্রকার বাছ-বিচার না করে নির্বিচারে বেপরোয়াভাবে মারধর করেন। তাদের আঘাতে রমেল চাকমা অজ্ঞান হয়ে পড়লে নিকস্থ থানায় সৈন্যরা হস্তান্তর করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রমেলের অবস্থা বেগতিক দেখে থানা হস্তান্তর গ্রহণে অস্বীকার জানান। পরে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সৈন্যরা নিয়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে নাই।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “পার্শ্বোক্ত সেনা ক্যাম্পের সৈন্যরা বিনা কারণে এমন অমানুষিক নির্যাতন করায় আমার পুত্রের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া তার শিক্ষা জীবনে দীর্ঘ মেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অবশেষে তার অপূরণীয় ক্ষতি হলো।”
এদিকে ১৯ এপ্রিল বুধবার রমেল চাকমার মৃত্যুসংবাদ প্রচার হবার পর থেকে এ নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
জার্মান প্রবাসী ব্লগার ফারজানা কবীর খান লিখেন, "আদিবাসী মানে যে কেউ মারতে পারে- নিজের দেশে যাদের পিপড়ের মত হত্যা করা হয়। প্রতিবাদ করার কেউ নাই। আর যদি সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা হয়- তাহলে মানুষ কেন, আকাশ-বাতাসও কথা বলবে না। কেন কল্পনা চাকমা বা তনুকে দেখে বোঝেন না?..."
সাবেক ছাত্রনেতা মাহমুদা খাঁ লিখেন, "পাহাড়ি ছাত্র নেতা এবং এইচ,এস,সি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমার হত্যাকারী রাষ্ট্রীয় আর্মি বাহিনী শেষ পর্যন্ত তার লাশটা ও পরিবারের কাছ থেকে জোড়ে ছিনিয়ে নিয়ে গেল! এ কেমন বর্বরতা, এ কেমন পৈশাচিকতা !!..."
আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্টে লিখেন, "...এই যে ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরে ফেলল, কোথায় ইকুয়ালিটি বিফোর ল? কোথায় রাইট টু বি ট্রিটেড ইন একরডেন্স উইথ ল? কি করেছিল রমেল? মানুষ মেরেছে? আরে, ও যদি তেত্রিশটা মানুষও খুন করে তবুও তো ওকে কেউ এইভাবে মারতে পারে না। আর এই ছেলে তো নির্দোষ, কোথাকার কোন পাহাড়ের চিপায় কোন এক কলেজের একটি সাধারণ ছাত্র, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিচ্ছিল। গরীব বাবা মায়ের ছেলে। আইন কি ওকে আর দশজনের মত বা সমতলের একটি বাঙালী ছেলের মত সমান নজরে দেখবে? দেখবে না।..."