‘বাংলাদেশের জনগণ তৃপ্ত নয় বরং আতঙ্কিত’
প্রকাশ | ১৩ এপ্রিল ২০১৭, ০১:০২
বাংলাদেশের জনগণকে অন্ধকারে রেখে সরকার প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সমঝোতা ও চুক্তি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, এসব চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে সংসদে কোনও আলোচনার হয়নি।
১২ এপ্রিল (বুধবার) বিকেলে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এতে ২০ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ভাটির দেশ হিসেবে সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানির হিস্যা আমাদের অধিকার। এটা কারও দয়া-দাক্ষিণ্য বা করুণার বিষয় নয়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তিস্তা আলোচনায় সম্পৃক্ত করায় বাংলাদেশের সার্বভৌম মযার্দা ক্ষুণ্ন হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যকার বিষয়। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আলোচনায় সম্পৃক্ত করায় বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণের দাবি অনুযায়ী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান পরিবর্তনের জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ভারতের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ জড়িত রয়েছে এমন কোনও বিষয়ে বিএনপি চুপ থাকতে পারে না।
ভারতের দেওয়া ঋণের টাকায় ভারত থেকেই অস্ত্র কেনার সমঝোতা স্মারকের বিরোধিতা করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন বিভিন্ন দিক থেকে আন্তর্জাতিক উচ্চমান অর্জন করেছে। পারমাণবিক শক্তির পূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশের সম্পৃক্ততার ফলে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি নাকি এ সফরে তৃপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তৃপ্ত নয় বরং আতঙ্কিত।
আগামি নির্বাচনে ভারতের প্রভাবের আশঙ্কা করছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা সব সময় বলেছি, বিএনপি সব সময় জনগণের রায়ে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা চাই কোনও দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেন হস্তক্ষেপ না করুক।
ভারত সফরের আগে ইমাম সমাবেশ ও ভারত সফরের পরে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদ নিয়ে হেফাজতের সঙ্গে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ প্রসঙ্গেও কথা বলেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতি এক্সপ্লয়েট করার জন্য শেখ হাসিনা ভারত সফরের আগে আলেম সম্মেলন করেন। ফিরে এসে গতকাল আবার হেফাজতে ইসলাম প্রভাবিত কওমি মাদ্রাসার ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলেমদের সঙ্গে তার অতীত আচরণ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ক্রমাগত আঘাতের কথা দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। এখন তিনি নিজেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতের মাওলানা আব্দুল হালিম, বিজেপির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এনপিপির ডা. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা দিল্লির লাড্ডু খাইয়েছেন, আর আমরা দেশের লাড্ডু খাওয়াবো।