নারী পুরুষ অসমতা দূর করতে চাই জেন্ডার বাজেট
প্রকাশ | ১২ এপ্রিল ২০১৭, ২১:২৯
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ১১ এপ্রিল ২০১৭ মঙ্গলবার বিকাল ৩:৩০ মিনিটে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে সংগঠনের আনোয়ারা বেগম, মুনিরা খান মিলনায়তনে 'জেন্ডার সংবেদনশীল জাতীয় বাজেট প্রণয়ন এবং পরিবীক্ষণ প্রক্রিয়া' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিডি এর নির্বাহী পরিচালক ড.ফাহমিদা খাতুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের স্পেশাল করসপন্ডেন্ট এফ এইচ এম হুমায়ন কবীর।
সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী।
এই সভার মূল লক্ষ্য ছিল জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন ও পরিবীক্ষণের উপর গুরূত্ব আরোপ করা। কিভাবে জেন্ডার বাজেট নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে সেই বিষয় নিয়ে মতামত ব্যক্ত করা হয়।
সভায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, "বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বহুমাত্রিকতার কাজের অংশ হিসেবেই বাজেট নিয়ে এই সভা। বাজেটের কোন কোন জায়গায় নারী ইস্যুগুলো আরো যুক্ত করতে হবে তা নিয়েও আলোচনা করা প্রয়োজন। নারীর দক্ষতা বৃদ্ধি, তথ্য ক্ষেত্রে নারীর অভিগোম্যতার সাথে সাথে গৃহ কর্মের মূল্যায়নের বিষয়টি নিয়েও কাজ করতে হবে। প্রযুক্তি নির্ভর এই জীবনে নারীকে আরো প্রযুক্তির সাথে অধিক মাত্রায় যুক্ত হওয়া প্রয়োজন"।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, "বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নতি ও প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার যে প্রক্রিয়া সেখানে বাজেটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ। টেকসই উন্নয়নের মর্মকথা সমতা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা যা আমাদের সংবিধানেরও কথা। আমাদের উন্নতির ধারাবাহিকতা থাকলেও সেখানে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বৈষম্যের শিকার। কাজেই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি হলেই যে সামাজিক বৈষম্য নিরসন হবে তা ঠিক নয়, যদি না এদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কোন বিশেষ উদ্যোগ না থাকে। আর এরই একটি প্রতিফলন হলো বাজেটে"।
সিপিডি এর নির্বাহী পরিচালক ড.ফাহমিদা খাতুন বলেন, "আয়বর্ধক কর্মসংস্থান হওয়া সবচাইতে প্রয়োজন। শ্রম বাজারে অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পেলেই যে হবে তা নয়। শ্রম বাজারে যেসব নারীরা অংশ নিচ্ছে তারা বেশিরভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে অংশ নিচ্ছে। যেখানে ৯০% নারী অংশগ্রহণ করে থাকে। কৃষি, শিল্প সেবাখাত অর্থনীতির মূল তিনটি ক্ষেত্রে নারী সবচেয়ে বেশি অংশ নিয়ে থাকে তাই একে আয়বর্ধক করার প্রয়োজনিয়তা সবচেয়ে বেশি। প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতির সুযোগ নিতে হলে নারীর জন্য প্রযুক্তি খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী"।
বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, "নারী-পুরুষ অসমতার কারণে আজ জেন্ডার বাজেটের প্রয়োজন হয়েছে। তিনি আরো বলেন ৫০% জেন্ডার বাজেটে বরাদ্দ রাখলেই যে তা ফলপ্রসূ হবে তা নয়। সেখানে যদি আরো কম বরাদ্দ করে তা নারীর জন্য উপযোগি হবে। পাঠ্যপুস্তকে গল্পের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে যে ঘরের কাজ করার জন্য একজন বউ দরকার। জেন্ডার বাজেট যখন বলি এটা জেন্ডার গ্যাপ কমানোর জন্য যেমন ব্যবহার হয় তেমনি জেন্ডার গ্যাপ বাড়ানোর জন্য যেন কোন বরাদ্দ না হয়। জেন্ডার বাজেটের বড় জায়গা হওয়া উচিৎ দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা। কারণ দক্ষ শ্রমিক হিসেবে নারী গড়ে উঠলে সে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে। জেন্ডার বাজেটে শ্রম বাজারে নারীর অবদান নেওয়ার জন্যও পদক্ষেপ নেয়া জরুরী"।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, "নারীর জন্য পছন্দের বিষয়টি বেছে নেয়ার সুযোগ থাকা উচিৎ। আমাদের দেশে মজুরিবিহীন শ্রমিক অর্ধেকের মতো। ৫০ শতাংশ পারিবারিক শ্রমিকের মধ্যে কতজন ভাল কাজ করছেন কতজন নীতি নির্ধারক আছেন এই বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন রয়েছে। জেন্ডার বাজেট যে হচ্ছে তা খুব ইতিবাচক একটি বিষয় কিন্তু এর প্রণালী কতটুকু প্রকৃত অবস্থাকে তুলে ধরতে পারে, নারীর সাথে সম্পৃক্ত কতটুকু এটা দেখতে হবে"।
মূল প্রবন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, "কিভাবে বাজেটটা প্রস্তুত হয় এবং আসলে এটার প্রতিফলন হয় কিনা তা জানা জরুরী"।
তিনি বলেন, "প্রান্তিক নারী কৃষককে টর্গেট করে বাজেটে তা প্রতিফলিত হতে হবে। সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় নারী অনেক কম। কাজেই কাদেরকে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আনতে হবে তা নিয়ে কাজ করতে হবে"।
সবশেষে যার যার জায়গা থেকে সুপারিশ ও তথ্য দিয়ে এই জায়গাটিকে আরো সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।